৫ লক্ষ টাকা জরিমানা সঙ্গে ১০ বছর জেল! ডাক্তার নিগ্রহে নতুন আইন

নিজস্ব প্রতিবেদন : দিন কয়েক আগে এনআরএস হাসপাতালে এক রোগী মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত পরিস্থিতি আকার ধারণ করে। চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ আনে রোগীর পরিবার। নিমেষে পরিস্থিতি অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে। রণক্ষেত্রের চেহারা নেয় হাসপাতাল চত্বর। রোগীর আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে ইন্টার্ন এবং জুনিয়র ডাক্তারদের ধুন্ধুমার বেঁধে যায়। দু’পক্ষের সংঘর্ষের মাঝে পড়ে ইটের আঘাতে মাথার খুলিতে গুরুতর চোট পান পরিবহ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে ঘটনাস্থলে আসে বিশাল পুলিশবাহিনী। ডাক্তারদের অভিযোগ, তাঁদের উপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এমনকী লরি করে ২০০ লোক নিয়ে এসেছিল রোগীর পরিবার। সে সময় পরিস্থিতি না সামলে কেবল নীরব দর্শকের ভূমিকায় ছিল পুলিশ বলেও অভিযোগ আনেন ডাক্তাররা। এনআরএস-এ ডাক্তারদের আক্রান্ত হওয়ার প্রতিবাদে গর্জে ওঠে বাংলা। শহরের পাশাপাশি অবস্থান বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন জেলার সরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের ডাক্তাররাও। জুনিয়রদের পাশে দাঁড়িয়েছেন সিনিয়র ডাক্তাররাও। গণ ইস্তফায় সামিল হয়েছেন তাঁরা। চারদিন ধরে বন্ধ রয়েছে বিভিন্ন সরকারি হাসপাতালের আউটডোর।

নিরাপত্তার দাবিতে ডাক্তারদের এই আন্দোলনকে সমর্থন করেছেন বাংলা সাধারণ মানুষ এবং বিশিষ্ট জনেরাও। পাশে দাঁড়িয়েছেন বিভিন্ন কলেজের বিভিন্ন বিভাগের পড়ুয়ারাও। সকলের একটাই দাবি, প্রশানকে এ বার ডাক্তারদের নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতেই হবে। যাঁরা সাধারণ মানুষের প্রাণ বাঁচান, এখন তাঁদের নিরাপদে রাখার সময় এসেছে। ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ স্লোগানে গর্জে উঠেছেন সকলেই।

টানা সাতদিন আন্দোলনের পর সোমবার নবান্নের বৈঠকে ডাক্তারদের সমস্ত দাবি দাওয়াই মেনে নিয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মঙ্গলবার থেকে ফের স্বাভাবিক হয়েছে রাজ্যের চিকিৎসা পরিষেবা। গতকালের বৈঠকে ডাক্তার নিগ্রহে কড়া আইনের বিষয়টি মমতা এড়িয়ে গেলেও এবার সেই লক্ষ্যে হাঁটল কেন্দ্র। ডাক্তার নিগ্রহ বন্ধ করতে এবার কড়া আইন আনার পথে কেন্দ্র। ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশানের তৈরি চিকিৎসক সুরক্ষা আইনের এক খসড়া মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাঠান।

এনআরএস কাণ্ডের জেরে গোটা দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা একরকম প্রশ্নের মুখে পড়ে যাওয়ার পর, শনিবারই সমস্ত রাজ্যে কড়া আইন চালু করার আবেদন জানিয়েছেন চিঠি লিখেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন। পাশাপাশি ওয়ার্ল্ড মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন ও স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে ও আইন প্রণয়নের কথা ভাবা হচ্ছে।

চিকিৎসক নিগ্রহের মতো ঘটনায় শাস্তি হিসেবে অপরাধীর ১০ বছরের জেল এবং ৫ লক্ষ টাকার জরিমানা। প্রস্তাবিত আইন শুধুমাত্র হাসপাতাল চত্বর এবং হাসপাতাল সংলগ্ন ৫০ মিটারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। রোগীর বাড়ি গিয়ে ভিজিটের জন্যেও এই আইন লাগু হওয়ার দাবি উঠেছে। খসড়া আইন অনুযায়ী চিকিৎসক নিগ্রহের অপরাধে জামিন অযোগ্য ধারায় সাজা হওয়ার উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া নিগ্রহের সময়ে অপরাধী কোনো সম্পত্তি নষ্ট করলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে অপরাধীকে সম্পত্তির দ্বিগুণ মূল্য দিতে হবে।