আমফানে তছনছ ভিটেমাটি, ৪০০ কিমি হেঁটে বাড়ি ফিরতে তৎপর ১২ শ্রমিক

হিমাদ্রি মণ্ডল : একদিকে করোনার কারণে লকডাউন, অন্যদিকে দোসর সুপার সাইক্লোন আমফান। লকডাউন চলাকালীনও তারা নিজেদের শান্ত রেখে গৃহবন্দী হয়েছিলেন কাজের স্থলে। কিন্তু তার মাঝেই ঘূর্ণিঝড় আমফান। যে ঘূর্ণিঝড়ে তছনছ করে দিয়েছে তাদের ভিটেমাটি। তাই আর মন মানলো না। হেঁটেই ৪০০ কিমি পথ অতিক্রম করার সিদ্ধান্ত ১২ পরিযায়ী শ্রমিকের।

আমফানের করাল গ্রাসে নিজেদের ভিটেমাটি লন্ডভন্ড হওয়ার ছবি তারা রাতেই দেখেন টিভির পর্দায়। সেই ছবি কাতর হয়ে ওঠে মন, পরিবারের কারোর সাথে যোগাযোগ করতে না পারা, এসব ব্যকুলতায় তারা আর থাকতে পারলেন না। দেওঘর থেকে ৪০০ কিলোমিটার দূরে সুদূর সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন। আসলে তাঁদের সবার বাড়ি সুন্দরবনের পাথরপ্রতিমা। কর্মসূত্রে তারা থাকেন ঝাড়খণ্ডের দেওঘরের বৈদ্যনাথপুরে। সেখানে তারা একটি রাইসমিলে কর্মরত। আর সিদ্ধান্ত মতই রাতের অন্ধকারে বেরিয়ে পরা।

তীব্র গতিবেগে সুপার সাইক্লোন আম্ফান নিজেদের ভিটেবাড়ি অতিক্রম করার পর এলাকার বিধ্বস্ত ছবি ফুটে ওঠে টিভির পর্দায়। ছবি দেখার পর তারা রাইসমিলের মালিককে বারবার বাড়ি ফেরার জন্য বন্দোবস্ত করে দেওয়ার কথা বললেও কোন রকম ব্যবস্থা করে দেননি মালিক। তাই বাধ্য হয়ে পায়ে হেঁটেই রওনা। আসলেই যতই হোক বর্তমান পরিস্থিতিতে নিজের পরিবার, নিজের ঘর বাড়ির জন্য মন কাঁদে সবার।

দেওঘর থেকে পায়ে হেঁটে রওনা দেওয়ার পর ইতিমধ্যেই তারা বীরভূমের সিউড়ির কাছে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের উপর এসে পৌঁছান। এরপর স্থানীয় বাসিন্দারা তাদের পথ আটকায় এবং জিজ্ঞাসা করে কোথা থেকে আসছেন। তখনই কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা এবং সমস্ত কিছু খুলে বলেন। এরপর খবর দেওয়া হয় সিউড়ি থানায়, সিউড়ি থানার পুলিশ আসে এবং তাদের সেখান থেকে রিলিফ সেন্টারে নিয়ে যায়।

ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের এক পরিচয় শ্রমিক শুকদেব বাড়ির বক্তব্য, “আমাদের দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন এলাকায় ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে তছনছ হয়ে গেছে। আমাদের বাবা-মা ঘরবাড়ি ছেড়ে পথে বসে আছেন। তাই কাজের জায়গা থেকে পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরা। যাতে করে অন্তত পক্ষে আমরা তাদের পাশে দাঁড়ালে তাদের মনোবল ফিরে আসে। আর আমরা যেটুকু দেখেছি তা টিভির পর্দায়। পরিবারের কারো সাথে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারিনি। কারণ ওখানে মোবাইল নেটওয়ার্ক উড়ে গেছে।”

অন্যদিকে বীরভূমের স্থানীয় বাসিন্দা জয়দীপ মজুমদার জানান, “এই ভাবে পথে হেঁটে যেতে দেখে আমরা কয়েকজন তাদের থামিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম পুরো ঘটনা। তারপর তারা জানান তাদের বাড়িঘর ঘূর্ণিঝড়ে ভেঙে গেছে, বাড়ির কারো সাথে কোনরকম যোগাযোগ করতে পারছেন না। সে কারণে এইভাবে হেঁটে বাড়ি ফিরছেন।”