অবশেষে বাড়ির পথে আসামের ১৮ পরিযায়ী শ্রমিক, সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন প্রশাসনের

লাল্টু : ১৮ জনের এক পরিযায়ী শ্রমিকের দল দিন কয়েক আগে মধ্যপ্রদেশ থেকে কখনো হেঁটে, কখনো লরিতে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আসাম যাওয়ার পথে তাদের পথ আটকায় দুবরাজপুর থানার পুলিশ। এরপর তাদের হেতমপুর রিলিফ সেন্টারে রাখা হয়। রিলিফ সেন্টারে রাখার পাশাপাশি তাদের সাথে সমস্ত রকম সহযোগিতা, খাওয়া-দাওয়ার সুবন্দোবস্ত ও বারবার স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়। যতদিন পর্যন্ত ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা হেতমপুরের রিলিফ সেন্টারে ছিলেন ততদিন তাদের শরীরে কোন রকম উপসর্গ দেখা দেয় নি, প্রত্যেকেই সুস্থ ছিলেন।

এরপর বীরভূম জেলা প্রশাসন ও রাজ্য সরকারের তরফ থেকে আসাম সরকারের সাথে বারবার যোগাযোগ করা হয় তাদেরকে রাজ্যে ফিরে যাওয়ার অনুমতি দেওয়ার জন্য। অনুমতি দিলেই সরকারিভাবে প্রশাসনিক বন্দোবস্ত তাদের বাড়ি ফিরতে উদ্যোগ নেবে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকার তথা বীরভূম জেলা প্রশাসন। কিন্তু বারবার আসাম সরকারের সাথে যোগাযোগ করলেও কোনরকম ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না বলে জানা যায় বীরভূম জেলা প্রশাসনের থেকে। আর তা নিয়েই গত সোমবার একটি সংবাদ পরিবেশন করা হয়। সংবাদ পরিবেশন করা হয় কেবলমাত্র BanglaXp নিউজ পোর্টালে। পাশাপাশি আমরা আসাম সরকারকে সেই খবর নিয়ে ট্যুইট করি। এরপরেই ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। আর ইতিবাচক সাড়া মিলতেই ওই ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিককে আসাম পাঠানোর জন্য সমস্ত রকম সরকারি বন্দোবস্ত করা হয় জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে।

এরপর মঙ্গলবার ওই ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিককে হেতমপুর রিলিফ সেন্টার থেকে সরকারি বাসে করে তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার জন্য যাত্রা শুরু করা হয়। শিলিগুড়ি হয়ে তাদের এক এক করে বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে জানান বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে দুবরাজপুর ব্লকের বিডিও অনিরুদ্ধ রায়। পাশাপাশি অনিরুদ্ধ রায় সংবাদমাধ্যমকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেছেন ওই ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক সম্পর্কিত খবর সম্প্রচার করার জন্য।

তিনি জানান, “এতদিন আমরা সেভাবেই ইতিবাচক সাড়া পাচ্ছিলাম না। এরপরেই সংবাদমাধ্যম এই ঘটনা নিয়ে সকলের দৃষ্টিগোচর করে। তারপর আমরা আসাম সরকার থেকে সম্মতি পেয়েছি ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বাড়ি ফেরানোর জন্য। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

পাশাপাশি তিনি আরও জানান, “ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা তাদের বাড়ি ফেরার জন্য যেভাবে উদগ্রীব ছিলেন তাতে তাদের বাড়ি ফেরাতে পেরে আমরাও খুবই আনন্দিত।”

প্রশাসনের তরফ থেকে এদিন ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের কেবলমাত্র বাসে চাপিয়ে দেওয়ায় নয়, পাশাপাশি তাদের খাওয়া-দাওয়া প্যাকেটিং করে বাসে তুলে দেওয়া হয়। পাশাপাশি তাদের জাঁকজমকভাবে বিদায়ী সম্বর্ধনা জানানো হয়। পুলিশের তরফ থেকে সম্বর্ধনা দেন দুবরাজপুর থানার পুলিশ ইন্সপেক্টর মাধব চন্দ্র মণ্ডল। আর বীরভূম জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে এমন সমাদর পেয়ে খুশি ওই ১৮ জন পরিযায়ী শ্রমিক।

তারা জানিয়েছেন, “পশ্চিমবঙ্গ প্রশাসন ও সংবাদমাধ্যমকে আমরা ধন্যবাদ জানাচ্ছি। কারণ তাদের স্বতঃস্ফূর্ত উদ্যোগের ফলেই আজ আমরা সুস্থ ও সুষ্ঠু ভাবে বাড়ি ফিরতে পারছি। এখানে আমরা একটা পরিবারের মত ছিলাম। খাওয়া-দাওয়া থেকে অন্যান্য সমস্ত কিছুই সুবন্দোবস্ত ভাবে ছিল।”