Ratan Tata: শিল্পপতি রতন টাটার মৃত্যু দেশের শিল্পজগতে এক বিরাট নক্ষত্রপতন ঘটিয়েছে। নিজের কর্মের মধ্য দিয়েই তিনি বেঁচে থাকবেন প্রত্যেকটি মানুষের মনে। বিভিন্ন সমাজ সেবামূলক কাজে তার অবদান অনস্বীকার্য। শুধুমাত্র নিজের জন্য না দেশের মানুষের জন্য তিনি ভাবতেন। গ্রাম থেকে শুরু করে শহর সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে তিনি গভীরভাবে জড়িয়ে আছেন। যারা সমাজ এবং পরিবেশকে ভালোবাসেন তারা সত্যিই রতন টাটার মৃত্যুতে গভীরভাবে শোকাহত। শুধুমাত্র ভারত নয়, গোটা বিশ্ব অনুভব করছে তার অনুপস্থিতি।
যুবসমাজের জন্য তিনি (Ratan Tata) ছিলেন এক অনুপ্রেরণা। নিজের স্বপ্নপূরণ করতে গেলে এবং জীবনের সফলতা আনতে গেলে মানুষকে ছুটতে হবে সারাজীবন। কিন্তু তার সঙ্গে সহানুভূতি এবং উদারতা মিশ্রিত হতে হবে। তাহলে জীবন চলার আসল আনন্দ অনুভব করা সম্ভব। কথাগুলো রতন টাটার জীবনের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে আছে। শুধুমাত্র দেশের মানুষের জন্য নয়, নিজের পোষ্য থেকে শুরু করে বাড়ির কাজের লোকদের জন্যও তিনি ভেবেছেন। বর্তমানে টাটা গোষ্ঠী আন্তর্জাতিক স্তরে যে গুরুত্বপূর্ণ স্থানটি অধিকার করে রয়েছে তার জন্য রতন টাটার অবদান কম নয়।
নিজে যেমন স্বপ্ন দেখতে পছন্দ করতেন তেমনি অন্যের স্বপ্নকেও সমর্থন করতেন তিনি, এটি ছিল তার অন্যতম মহৎ গুণ। তিনি ভারতের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেমের পরামর্শদাতা, তিনি জীবদ্দশায় প্রচুর স্টার্টআপ কোম্পানিতে বিনিয়োগ করেছেন। তরুণ প্রজন্মকে তিনি সর্বদাই উৎসাহিত করতেন নতুন কিছু করার জন্য। তরুণ উদ্যোক্তাদের সমস্তরকম সম্ভাবনাকে সমর্থন করেছিলেন তিনি (Ratan Tata) এবং নিজের সাধ্যমত বিনিয়োগ করেছেন বিভিন্ন স্টার্টার কোম্পানিতে। তিনি সাহসী ঝুঁকি নিতে পছন্দ করতেন, জীবনে ঝুঁকি না নিলে কোন বড় সফলতা মেলেনা। তার অবদানের ফলে ভারতের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম লাভবান হবে।
তার অবদানের কারণেই দেশের ভবিষ্যতে ইতিবাচক প্রভাব লক্ষ্য করা যাবে। তার ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি দেশের ভবিষ্যত নেতাদের ভারতকে বিশ্বমানের মানের সমার্থক করতে অনুপ্রাণিত করবে। তার মহত্ব এবং সাহায্যে শুধুমাত্র মানুষেরাই পেয়েছে তা নয়, সমস্ত জীবের প্রতি তার ভালোবাসা ছিল। পশু কল্যাণের স্বার্থে তিনি যথেষ্ট প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। প্রিয় কুকুরের সঙ্গে একান্তের সময় কাটানোর বিভিন্ন মুহূর্ত ধরা পড়েছে সমাজমাধ্যমের পাতায়। তার জীবন দেশের প্রত্যেকটি মানুষের কাছে একটি উদাহরণস্বরূপ।
দেশের সংকটময় পরিস্থিতিতে তিনি(Ratan Tata) এগিয়ে এসেছিলেন মানুষের পাশে। ২৬/১১-এর জঙ্গি হামলার পরে মুম্বাইয়ের তাজ হোটেল তিনি খুব শীঘ্রই চালু করেছিলেন। সন্ত্রাসের কাছে তিনি কখনোই মাথানত করতে রাজি ছিলেন না। প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি বলেছেন রতন টাটাকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য লাভ করেছেন তিনি। গুজরাটে অনেকটা সময় একসাথে কাটিয়েছেন দুজনে, বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথাবার্তা হতো তাদের মধ্যে এবং তিনি বহু বিষয় নিয়ে উৎসাহী ছিলেন। মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে নরেন্দ্র মোদি স্পেনের প্রেসিডেন্ট পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে ভাদোদরায় ছিলেন এবং যৌথভাবে একটি বিমান কমপ্লেক্স উদ্বোধন করছিলেন তারা, যেখানে সি-295 বিমান ভারতে তৈরি হবে । শ্রী রতন টাটা এই কাজ শুরু করেছিলেন । তাই রতন টাটার অনুপস্থিতি সবথেকে বেশি মনে পড়ছে।
রতন টাটাজি চিঠি লিখতে খুব ভালবাসতেন, অনেক সময় দুজনের মধ্যে চিঠি লেখা হতো। তিনি প্রশাসনিক বিষয় থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক বিষয় নিয়ে চিঠি লিখতেন। নির্বাচনের সাফল্যের কারণে বার্তা পাঠিয়েছিলেন তিনি এমনকি কোন কাজে সরকারী সমর্থন লাভ করলেও তিনি বার্তা পাঠাতেন। স্বচ্ছ ভারত মিশনে রতন টাটার সমর্থন লাভ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রীর নরেন্দ্র মোদি। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন ভারতকে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নভাবে গড়ে তুলতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি ও স্যানিটেশন অত্যন্ত আবশ্যিক এই দেশের জন্য । অক্টোবরের শুরুতে স্বচ্ছ ভারত মিশনের দশম বার্ষিকীর জন্য তাঁর হৃদয়গ্রাহী ভিডিয়ো বার্তা এখনো যেন মন ছুঁয়ে যায়।
আরো পড়ুন: ব্যবসা করতে গেলে ঘুষ দিতে হবে মন্ত্রীকে, উত্তরে কি বলেছিলেন রতন টাটা
রতন টাটা হৃদয়ের কাছাকাছি আরেকটি বিষয় ছিল সেটি হল, স্বাস্থ্যসেবা এবং বিশেষ করে ক্যানসারের বিরুদ্ধে লড়াই । দুই বছর আগে অসমের সেই কর্মসূচির কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, যেখানে যৌথভাবে রাজ্যের বিভিন্ন ক্যানসার হাসপাতাল উদ্বোধন করা হয়েছিল। বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন যে নিজের শেষ বছরগুলো স্বাস্থ্য সেবার কাজেই নিয়োজিত রাখতে চান তিনি। স্বাস্থ্য এবং ক্যান্সারের চিকিৎসাকে সাধারণ মানুষের আয়ত্তের মধ্যে আনার চেষ্টা করে গেছেন তিনি। তার মতে একটি ন্যায়পরায়ণ সমাজের প্রধান দায়িত্ব দুর্বল মানুষের পাশে দাঁড়ানো।
তাকে স্মরণ করতে গেলে শ্রদ্ধা এবং গর্বে বুক ফুলে ওঠে। তার কল্পিত সমাজে সবকিছুই ভালো হবে। যেখানে প্রতিটি ব্যক্তির সম্ভাবনাকে মূল্য দেওয়া হয় এবং যেখানে অগ্রগতি সকলের মঙ্গল ও সুখে পরিমাপ করা হয়। তিনি যে জীবনকে স্পর্শ করেছেন এবং যে স্বপ্ন লালন করেছেন, তাতে তিনি বেঁচে আছেন। তিনি সর্বদা স্বপ্ন দেখে গেছেন যে, ভারতকে একটি উন্নত, দয়ালু এবং আশার জায়গা করে তুলতে। নতুন প্রজন্মকেও সেই বার্তা দিয়ে গেছেন তিনি।