Economic growth of Israel: বর্তমানে এই রাষ্ট্রটি একটি বিতর্কিত রাষ্ট্র, যার জন্ম হয়েছে ৭৬ বছর আগে। ইজরায়েল নামটি কানে আসলেই মনে শুধুমাত্র যুদ্ধবিগ্রহ, ধর্মীয় কিংবা রাজনৈতিক সংঘাতের ছবি ভাসতে থাকে। ইজরায়েল পৃথিবীর একাধিক রাষ্ট্রের মধ্যে এমন একটি রাষ্ট্র যার প্রতিটি পদক্ষেপ সর্বদাই চর্চিত। আয়তনের দিক থেকে অনেক ছোট কিন্তু শক্তির দিক থেকে বহু রাষ্ট্রকে হারিয়ে দেবে এই দেশ। সংঘর্ষ যেন এখানকার রোজকার ঘটনা। ক্ষুদ্র এই ইহুদি রাষ্ট্র এক দিকে যেমন শক্তিশালী হয়েছে, অন্য দিকে প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলির মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বর্তমানে এই রাষ্ট্রটি (Economic growth of Israel) পিছনে ফেলে দিয়েছে পশ্চিম এশিয়ার বহু শক্তিশালী রাষ্ট্রকে। সৌদি আরবের মাথাপিছু আয় এর হিসাব এখন এই দেশের তুলনায় অনেক কম। শুধুমাত্র মাথাপিছু আয় এর দিক থেকেই নয়, এই দেশটি এগিয়ে গেছে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তির দিক থেকেও। কিন্তু কিভাবে পেল এই সফলতা সত্যিই এটা একটা বড় প্রশ্ন সকলের কাছে? বিগত কয়েক মাস ধরে পশ্চিম এশিয়া জুড়ে ঘনিয়েছে যুদ্ধের মেঘ। হামলা এবং পাল্টা হামলায় রীতিমত জর্জরিত সকলেই। ইরানের মদতপুষ্ট লেবাননের সশস্ত্র বাহিনী হিজবুল্লার সঙ্গে ইজরায়েলের সংঘাতের মধ্যেই ইহুদি রাষ্ট্রে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইজরায়েল (Economic growth of Israel) কিন্তু যুদ্ধের কারণে দমে যাইনি বরং আরো দ্রুতগতিতে এগিয়ে গেছে। এর অর্থনৈতিক অগ্রগতি পিছনে ফেলে দিয়েছে পাশ্চাত্যের বহু দেশকে। ২০২৩ সালের একটি রিপোর্ট বলছে, ইজরায়েলের জিডিপি ৪২ লক্ষ ২৮ হাজার কোটি টাকা ছুঁয়েছে। যেকোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির মূল ভিত্তি হল সেই দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন বা জিডিপি। সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো এই দেশটির স্বাধীন হয়েছিল ১৯৪৮ সালে তারপর থেকে আশির দশ পর্যন্ত তেমনভাবে অর্থনৈতিক অগ্রগতি ঘটেনি। পরিবর্তন আসে ১৯৮৫ সালের অর্থনৈতিক সংস্কারের পর, তারপর আর পেছনে ঘুরে তাকাতে হয়নি এই রাষ্ট্রটিকে।
জানেন কি এখানকার নাগরিকদের মাথাপিছু আয় কত? ইজরায়েলের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ৪২ লক্ষ টাকার কাছাকাছি। নাগরিক জীবনযাত্রায় এর প্রভাব পড়েছে যথেষ্টভাবে। মাথাপিছু আয়ের নিরিখে ফ্রান্স, জার্মানি, ইংল্যান্ডকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে এই রাষ্ট্র। সিঙ্গাপুর ও কাতার বাদে পশ্চিম এশিয়ার আর কোন রাষ্ট্র ইজরায়েলের সামনে টিকে থাকতে পারেনি। ১৯৮৪ সালে ইজ়রায়েলের অর্থনৈতিক অগ্রগতি প্রায় থমকে যেতে বসেছিল। সেই সময় প্রায় ৪৫০ শতাংশ মু্দ্রাস্ফীতি তৈরি হয়েছিল এবং কমতে শুরু করেছিল নাগরিকদের আয়। জমানো পুঁজি প্রায় নিঃশেষ হওয়ার পথে ছিল। ইজরায়েলিদের মাথাপিছু আয় ছিল প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা। এখানকার সরকার সেই আয় এক লাফে অনেকটাই বৃদ্ধি করিয়েছে। বহু সাহসী পদক্ষেপ নিয়ে কমিয়েছে ঋণের বোঝা। অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার নিরিখে ইজরায়েলি মুদ্রার (ইজরায়েলি শেকেল) মূল্যমান কমিয়ে দেওয়া। পণ্য রফতানির পরিমাণ বাড়তে থাকায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কের হাতে প্রভূত ক্ষমতাও প্রদান করে সরকার।
আরও পড়ুন:Bangladesh: বাংলাদেশে হতে পারে ভারতের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, প্রভাব পড়বে রাজধানী ঢাকায়
এর মধ্যে প্রথম পদক্ষেপটি হল ভর্তুকি প্রত্যাহার। খাদ্য, পরিবহণ ও প্রতিরক্ষা খাতে সমস্ত রকম সরকারি সাহায্য প্রায় বন্ধ করে দেওয়া হয়। ইজরায়েলের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির (Economic growth of Israel) প্রধান কারণ হল এর রফতানি। হিরে, ইন্টিগ্রেটেড সার্কিট, সার, চিকিৎসার যন্ত্রপাতি রফতানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করে দেশটি। ইজরায়েলি পণ্যের চাহিদা বিশ্ব জুড়ে থাকায় দেশটির রফতানির পরিমাণ ক্রমেই বাড়ছে।
সবকিছুকে ছাপিয়ে দিয়েছে এই দেশের প্রযুক্তিবিদ্যা। অত্যাধুনিক প্রযুক্তিবিদ্যার স্টার্টআপ কোম্পানিগুলি এই রাষ্ট্রেই বেশি দেখা যায়। এই ইহুদি দেশটি বিগত কয়েক বছর ধরে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে গোটা বিশ্বের সামনে। ইজরায়েলে চার হাজারেরও বেশি প্রযুক্তি সংস্থা রয়েছে। বিশ্বের তাবড় তাবড় সংস্থাগুলো এখানে ঘাঁটি গাড়তে বাধ্য হয়েছে। বিশ্বের প্রধান ৫০০টি সংস্থার মধ্যে ৮০টিরই গবেষণাকেন্দ্র এবং নব্য প্রযুক্তি বিষয়ক কেন্দ্র রয়েছে তেল আভিভে। ইজরায়েল প্রতিষ্ঠার সময়ে সেখানে জল এবং উর্বর ভূমির সঙ্কট ছিল। বর্তমানে সেইসব সমস্যার অনেকটাই সমাধান হয়েছে।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থাও দেশের উন্নতিতে (Economic growth of Israel) যথেষ্ট অবদান রেখেছে। ১৯৪৮ সালে ইজ়রায়েল প্রতিষ্ঠা হওয়ার ৩০ বছর আগেই ইহুদিরা জেরুজালেমে প্রতিষ্ঠা করেন ‘দ্য হিব্রু ইউনিভার্সিটি অফ জেরুজালেম’। জানলে অবাক হয়ে যাবেন বর্তমানে এই দেশটি স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের দিক থেকে একেবারে প্রথম সারিতে রয়েছে। বিভিন্ন কৌশল পদ্ধতি ও বিনিয়োগও ইজরায়েলকে সামরিক ও অর্থনৈতিক দিক দিয়ে মজুবত করেছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।