অমানবিক, ৬ বছরের খুদে স্ট্রেচার ঠেলে দাদুকে নিয়ে গেল হাসপাতালের ওয়ার্ডে

নিজস্ব প্রতিবেদন : সম্প্রতি একটি ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়েছে। যে ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে এক বৃদ্ধ অসুস্থ অবস্থায় স্ট্রেচারের উপর শুয়ে রয়েছেন। আর শুয়ে থাকা ওই বৃদ্ধকে হাসপাতালে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য আরেক ওয়ার্ডে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে ৬ বছরের এক খুদে। আর ওই স্ট্রেচারের সামনে এক মহিলা ব্যালেন্স করে স্ট্রেচারটিকে নির্দিষ্ট দিকে দিশা দেখাচ্ছেন।

ঘটনাটি ঘটেছে উত্তরপ্রদেশে। উত্তরপ্রদেশের দেওরিয়ার জেলা হাসপাতালের এমন অমানবিক ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসতেই অনেকের মধ্যে প্রশ্ন উঠতে শুরু করে কেন এইভাবে ছোট্ট ওই খুদেকে স্ট্রেচার খেলে তার দাদুকে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে হচ্ছে। জানা গিয়েছে, ওই হাসপাতালে ওয়ার্ড বয় এক ওয়ার্ড থেকে আর এক ওয়ার্ডে স্ট্রেচার ঠেলে রোগীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩০ টাকা দাবি করেন এবং নিয়ে থাকেন। কিন্তু এই ঘটনা যেদিন কার সেদিন ওই বৃদ্ধের পরিবারের লোকজন ওই ওয়ার্ড বয়ের দাবিমতো ৩০ টাকা দিতে সমর্থ ছিলেন না। যে কারণে ওয়ার্ড বয় অসুস্থ ওই বৃদ্ধকে স্ট্রেচার ঠেলে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যেতে রাজি হননি। অগত্যা ভিডিওতে দেখতে পাওয়া ঐ মহিলা এবং ছয় বছরের ওই খুদে স্টেচার ঠেলে তার দাদুকে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যায়।

এমন অমানবিক ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেন কংগ্রেস নেতা কেশবচন্দ্র যাদব। ভিডিওটি পোস্ট করার পাশাপাশি তিনি লেখেন, “দেখুন যে জেলা থেকে উত্তর প্রদেশ রাজ্য সরকারের দুজন মন্ত্রী আছেন সেই জেলার জেলা হাসপাতালে কি অবস্থা। এখানে কি পর্যাপ্ত কর্মচারী নেই রোগীদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়ার জন্য।” পাশাপাশি তিনি আরও অভিযোগ করেন, এই হাসপাতালে এই মহামারীর সময়ে আলাদা আলাদা কোন ওয়ার্ড নেই। এইভাবে আমরা করোনার সাথে লড়াই করব?

জানা গিয়েছে, অসুস্থ ওই বৃদ্ধের নাম ছেদি যাদব। তিনি বাহরাজ এলকার গাওরা গ্রামের বাসিন্দা। কয়েকদিন আগে তিনি একটি ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার সময় আবার তার স্ত্রী অসুস্থ ছিলেন। যে কারণে হাসপাতালে পরিচর্চার জন্য আসেন ওই বৃদ্ধের মেয়ে বিন্দু ও নাতি শিবম। আর এই ঘটনা নিয়ে বিন্দুর অভিযোগ, “স্ট্রেচার ঠেলে বাবাকে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়ার জন্য ৩০ টাকা দাবি করেন ওয়ার্ড বয়। কিন্তু আমরা টাকা দিতে রাজি না হওয়ায় ওই ওয়ার্ড বয় স্ট্রেচারে হাত দেননি। বাধ্য হয়ে আমি এবং আমার ছেলে দুজনে স্ট্রেচার ঠেলে বাবাকে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে নিয়ে যাই।”

যদিও এই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ছড়িয়ে পড়ার পরেই ওই জেলার জেলাশাসকের নজরে আসে পুরো ঘটনা। তারপরই ওই হাসপাতালে অভিযুক্ত ওই ওয়ার্ড বয়কে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং তদন্তের নির্দেশ দেন দেওরিয়ার জেলাশাসক অমিত কিশোর। পাশাপাশি তিনি সোমবার ওই রোগী এবং তার পরিবারের সাথে দেখা করেন।