লকডাউনে মাস্ক পরে বিয়ে, প্রীতিভোজের বদলে ৩০০ দুঃস্থ পরিবারের পাশে নব দম্পতি

লাল্টু : বিশ্বজুড়ে চলছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। বাদ পড়েনি আমাদের দেশও। এমত অবস্থায় দেশকে বাঁচাতে জারি হয়েছে নানান স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশিকা। আর স্বাস্থ্য দপ্তরের সেই সকল বিধি মেনে মঙ্গলবার বীরভূমের সদাইপুর থানার অন্তর্গত বাঁধেরশোল গ্রামের শুভাশিস বাউরি বিয়ে করেন সিউড়ির লালদীঘি পাড়ার লিপি দলুইয়ের সঙ্গে। শুভাশিস বাউরি পেশায় বীরভূমের নগরী গ্রামের পঞ্চায়েত সেক্রেটারি।

স্বাস্থ্যবিধি মেনে মঙ্গলবার সনাতন ধর্ম মতে তাদের বিয়ে হয়। তবে বিয়ের সময় বর ও কনে দু’জনকেই মাস্ক পরে থাকতে দেখা যায় বিয়ের মন্ডপে। পাশাপাশি বিয়ের এই অনুষ্ঠান সম্পন্ন করা হয় গুটিকয়েক আত্মীয়দের নিয়ে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মাত্র সাতজন বলে জানা যায় পরিবার সূত্রে। আর বিয়ের বিশেষ মুহুর্তকে স্মৃতিতে আঁকড়ে ধরে রাখার জন্য প্রত্যেক নব দম্পতির মধ্যে কোনো না কোনো নতুন ইচ্ছা থাকে। যেমন জাঁকজমক করে প্রীতিভোজের অনুষ্ঠান করা ইত্যাদি। ইচ্ছাটা এই নবদম্পতির ছিল না এমন নয়, তবে বর্তমান পরিস্থিতির ঠেলায় পরে তা সম্ভব নয় জেনে তারা হাত গুটিয়ে বসে পড়েন নি। নতুন কিছু করার অদম্য আগ্রহে পরিস্থিতির বিচারে এলাকার ৩০০ দুঃস্থ পরিবারের পাশে দাঁড়ান। বুধবার এই নব দম্পতি তাদের সাধ্যমতো ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিলেন ওই সকল পরিবারের হাতে। পাত্র ও পাত্রীর নাম সহ এবং কোভিড-১৯ প্রতিরোধের গাইডলাইন লেখা ব্যাগে মনিরামপুর, ভবানীপুর ও বাঁধেরশোলের ৩০০ পরিবারের হাতে ২ কেজি চাল, ২ কেজি আলু, সর্ষে তেল ২৫০ এমএল, হলুদ ২০০ গ্রাম, মুসুর ডাল ২৫০ গ্রাম, পেঁয়াজ ৫০০ গ্রাম, সোয়াবিন ২৫০ গ্রাম, সাবান, মাস্ক ইত্যাদি দেওয়া হয়। দেওয়ার সময় সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা হয়, স্যানিটাইজার করা হয়, যা সবথেকে বেশি উল্লেখযোগ্য।

আর এমন মহৎ কাজ করার পর নবদম্পতি জানান, “আমরা সম্পূর্ণ সরকারি নির্দেশিকা মেনেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করেছি। আমাদের ইচ্ছা ছিল প্রীতিভোজ করার। কিন্তু তা এখন তো আর সম্ভব হচ্ছে না। পাশাপাশি চুপচাপ বিয়ে করে বাড়ি আসবো এটাও হয়না। প্রীতিভোজ করলে যেমন নিমন্ত্রিতরা বাড়িতে আসতেন, আমাদের আশীর্বাদ করে যেতেন। তা সম্ভব না হওয়ায় প্রীতিভোজের অনুষ্ঠানকে সরিয়ে কিভাবে মানুষের আশীর্বাদ পাওয়া যায় তার জন্যই এই পরিকল্পনা আমাদের মাথায় আসে। তারপর আমরা আমাদের সাধ্যমত যতটা পারলাম বর্তমান পরিস্থিতির বিচারে এলাকার এই সকল মানুষদের পাশে দাঁড়ালাম।”

পাত্রের মা জবা বাউরী ছেলে ও বৌমার এমন মহৎ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে বলেছেন, “ছেলে ও বৌমার এমন মহৎ উদ্যোগের জন্য আমি খুব খুশি। সকলে এই দুজনের দাম্পত্য জীবনের সুখ-শান্তির জন্য আশীর্বাদ দিয়েছেন। আগামী দিনে আমরা এইভাবে সকলের পাশে থাকার চেষ্টা করব।”

তবে এই ত্রাণ বিলির পাশাপাশি আরও উল্লেখযোগ্য, ত্রাণ সামগ্রী দেওয়ার পাশাপাশি এই নবদম্পতি এলাকার মানুষদের গুজবে কান না দেওয়া, হাত পা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, মুখে মাস্ক ব্যবহার করার মত সৎ পরামর্শ দেন। আর এই নবদম্পতির এমন কর্মকাণ্ডের কথা চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার বাসিন্দারা ছাড়াও সোশ্যাল মিডিয়ার নেটিজেনরা তাদের আশীর্বাদ ও সাধুবাদ জানাতে এতোটুকু ভুলেন নি।