লক্ষ লক্ষ টাকায় গাড়ি কেনার দিন শেষ! মাত্র ১০,০০০ টাকায় চারচাকা তৈরি বাংলায়

নিজস্ব প্রতিবেদন : এক সময় ছিল যখন মানুষের শখ ছিল বাড়িতে একটি মোটর বাইক রাখবেন। বর্তমানে অধিকাংশ বাড়িতে মোটরবাইক চলে আসার পর মানুষের এখন শখ জন্মেছে চারচাকা গাড়ির। তবে চারচাকা গাড়ির স্বপ্ন অধিকাংশ মানুষের থাকলেও তা পূরণ হয় না টাকার অভাবে। কারণ একটি চারচাকা গাড়ি কিনতে যেমন কয়েক লক্ষ টাকা খরচ হয় ঠিক সেই রকমই আবার চালানো অথবা রক্ষণাবেক্ষণের জন্যেও হাজার হাজার টাকা খরচ হয়ে থাকে।

এই খরচের বহর দেখে বহু মানুষ শখ করে থাকলেও চারচাকা বাহন কেনা থেকে পিছিয়ে আসেন। তবে এবার এই বাংলাতেই এমন এক ব্যক্তির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে যিনি মাত্র ১০ হাজার টাকায় একটি চারচাকা গাড়ি তৈরি করে নজির সৃষ্টি করেছেন। ওই ব্যক্তি এমন সাফল্যে লাখ লাখ টাকা দিয়ে গাড়ি কেনার দিন শেষ হতে চলেছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

মাত্র ১০ হাজার টাকা খরচ করে চারচাকা গাড়ি তৈরি করে যিনি নজির সৃষ্টি করেছেন তিনি হলেন নদীয়ার শান্তিপুরের বৈষ্ণব পাড়ার সঞ্জয় প্রামাণিক। সঞ্জয় বাবু এখন অনেকের দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে পারেন বলে মনে করা হচ্ছে। তবে তিনি কোন ইঞ্জিনিয়ার নন অথবা কোন মিস্ত্রি নন। তিনি একজন মণ্ডপ সজ্জার শিল্পী। নিজের কর্মজীবন থেকে সম্পূর্ণ আলাদা হয়েও তিনি এইভাবে যে গাড়ি তৈরি করেছেন তা নিয়ে এখন এলাকায় রীতিমতো হইচই শুরু হয়েছে।

তিনি এমন গাড়ি তৈরি করেছেন মূলত তার ভাইপোর বায়নার জেরে। তবে প্রশ্ন উঠতে পারে যেখানে অন্যান্য গাড়ি কেনার ক্ষেত্রে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ হয় সেখানে সঞ্জয় বাবু কিভাবে মাত্র ১০ হাজার টাকায় এই গাড়ি তৈরি করে দিলেন! এত কমে এই গাড়ি তৈরি হওয়ার মূল কারণ হলো ভাংড়ি। যে সকল জিনিসপত্র আমরা ব্যবহারের পর ফেলে দিই সেই সকল জিনিসপত্র দিয়েই তিনি এই গাড়ি তৈরি করেছেন।

সঞ্জয় প্রামাণিক এই ধরনের গাড়ি তৈরি করার কাজ শুরু করেন মূলত লকডাউন চলাকালীন কাজকর্ম হারিয়ে। অবিবাহিত এই মেকানিক তার হাতের তৈরি গাড়ির নাম দিয়েছিলেন ‘আমি একা’। প্রথম তিনি যে গাড়িটি তৈরি করেছিলেন সেই গাড়িতে কেবলমাত্র একজন বসার জায়গা পেতেন। সব থেকে উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো গাড়িটি ইলেকট্রিক গাড়ি।

এরপর তিনি দ্বিতীয় একটি গাড়ি তৈরি করেছেন যা নতুন ভার্সন এবং এই গাড়িটি তৈরি করা হয়েছে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এক কলেজ পড়ুয়ার অর্ডার অনুযায়ী। ইলেকট্রিক ভার্সনের এই গাড়িটি অবশ্য ব্যাটারি এবং মোটর ছাড়া ১০ হাজার টাকা খরচ। এই গাড়িটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে ওই কলেজ পড়ুয়ার চাহিদা অনুযায়ী।

এই গাড়িটিতে রয়েছে, দুটি আসন, হেডলাইট, ইন্ডিকেটর, হর্ন, ব্যাক গিয়ার মিউজিক, গান শোনার ব্যবস্থা, জলের বোতল, লাগেজ রাখার ব্যবস্থা। এই গাড়ির দরজা থেকে শুরু করে চাকা সমস্ত কিছু বাতিল জিনিসপত্র দিয়ে তৈরি। সঞ্জয় প্রামাণিক দাবি করেছেন, প্রতিবন্ধী ব্যক্তি, মহিলা, বয়স্ক মানুষ, এমনকি ছোটরাও এই গাড়ি চালাতে সক্ষম হবেন।