জীবনে সাফল্য পেতে চান, এ.পি.জে. আবদুল কালাম স্যারের বাণীগুলি আপনাকে অনুপ্রেরণা যোগাবে

নিজস্ব প্রতিবেদন : আবুল পাকির জয়নুল আবেদিন আবদুল কালাম ১৯৩১ সালের ১৫ ই অক্টোবর অধুনা তামিলনাড়ুর রামেশ্বরমের এক মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পিতা জয়নুল আবেদিন ছিলেন নৌকা মালিক এবং মাতা অশিয়াম্মা ছিলেন গৃহবধূ। খুবই দরিদ্র পরিবারে জন্ম গ্রহণের পর অল্প বয়স থেকেই তাঁকে ভরণপোষণের জন্য কাজ চালু করতে হয়। কিন্তু তিনি ছিলেন অত্যন্ত মেধাবী এবং কঠোর পরিশ্রমী। বিদ্যালয়ের পাঠ সমাপ্ত করার পর বাবাকে সাহায্য করার জন্য তিনি সংবাদপত্রে লেখালেখিও করতেন।

Source

এরপর ধীরে ধীরে রামনাথপুরম স্কোয়ার্টজ ম্যাট্রিকুলেশন স্কুল থেকে পড়াশোনা সমাপ্ত করে ভর্তি হন তিরুচিরাপল্লীর সেন্ট জোসেফ কলেজে। সেখান থেকে পদার্থবিজ্ঞানে হন স্নাতক। কিন্তু পদার্থবিদ্যায় তিনি শেষমেষ উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন। পরবর্তীকালে চার বছর এই বিষয়ে পড়াশোনার জন্য আক্ষেপও করেছিলেন। ১৯৫৫ সালের চেন্নাই-এ এসে মাদ্রাজ ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি থেকে বিমান প্রযুক্তির শিক্ষা নিতে শুরু করেন। একটি সিনিয়র ক্লাস প্রজেক্টে তার কাজে অগ্রগতি না দেখে প্রতিষ্ঠানের ডিন তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। তাকে ভয় দেখানো হয় তিন দিনের মধ্যে কাজ সম্পন্ন না করতে পারলে বৃত্তি প্রত্যাহার করা হবে। আর তারপর কালাম তিনদিনের মধ্যেই সেই কাজ সম্পূর্ণ করে দেন। তাতে খুশি হন ইনস্টিটিউটের ডিন। পরে তিনি কালামকে চিঠিও লিখেছিলেন, “আমি তোমাকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছিলাম, তোমাকে এমন সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে বলেছিলাম, যা করা খুবই শক্ত।” এর পরেও তিনি অল্পের জন্য যোদ্ধা পাইলট হওয়ার সুযোগ হারান। যে পরীক্ষায় ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৮ জন কর্মীর প্রয়োজন ছিল, সেখানে তিনি হয়েছিলেন নবম।

এরপর ১৯৬০ সালে তিনি ভারতীয় প্রতিরক্ষা গবেষণা ও উন্নয়ন সংস্থার অ্যারোনটিক্যাল ডেভেলপমেন্ট এসব্লিশমেন্টে একজন বিজ্ঞানী হিসেবে যোগদান করেন। সেখানে ছোট হোভারক্রাফটের নকশা করে তার জীবনের কর্ম শুরু। মহাকাশ গবেষণায় তিনি প্রখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী ডঃ বিক্রম সারাভাই-এর অধীনে কাজ করতেন। এরপর তার হাত ধরে একের পর এক সাফল্য, কৃত্রিম উপগ্রহ রোহিনী ১৯৮০ সালে তার পরিচালনায় কক্ষপথে স্থাপন হয়। তাঁর হাতেই সাফল্য পায় স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল এবং এসএলভি-III। ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এবং মহাকাশযানবাহী রকেট উন্নয়নে তাঁর কৃতিত্ব অনস্বীকার্য, তাই তাকে বলা হয় ‘ভারতের ক্ষেপণাস্ত্র মানব’ বা ‘মিসাইল ম্যান অফ ইন্ডিয়া’।

Source

১৯৯৮ সালের পোখরানে পরমাণু বোমা পরীক্ষায় তিনি তিনি ছিলেন সাংগঠনিক, প্রযুক্তিগত এবং রাজনৈতিক প্রধান।

২০০২ তিনি তৎকালীন ভারত সরকার এনডিএ সরকার এবং বিরোধী সরকার কংগ্রেসের সমর্থনে ভারতের রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হন। ৫ বছর এই পদে আসীন থাকার পর পরবর্তী জীবন একজন সাধারন শিক্ষাবিদ, লেখক ও জনসেবক হিসাবে বেছে নেন। ভারতের সর্বোচ্চ অসামরিক সম্মান ভারতরত্ন সহ একাধিক পুরস্কার তাঁর ঝুলিতে।

২০১৫ সালের ২৭ শে জুলাই মেঘালয়ের শিলং ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ম্যানেজমেন্টের আয়োজিত অনুষ্ঠানে বাসযোগ্য পৃথিবী সম্পর্কে বক্তব্য রাখার সময় ৬ টা ৩০ মিনিটে হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তাকে সঙ্গে সঙ্গে বেথানি নিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, সেখানে ৭ টা ৪৫ মিনিটে পরলোক গমন করেন।

Source

কিন্তু তিনি এই স্বল্প সময়ের মধ্যে ভারতের জন্য যা করে গেছেন, নানান সময়ে যে সকল উক্তি তুলে ধরেছেন তা আমাদের সমাজকে বহু কিছু শেখায়।

  • “নিজেকে একা মনে হলে আকাশের দিকে তাকাও। আমরা একা নই। পৃথিবীটা আমাদের বন্ধু। যারা কাজ করে ও স্বপ্ন দেখে প্রকৃতি তাঁদের সাহায্য করে।”
  • “যদি সূর্য হতে চাও, তবে সূর্যের মতো নিজেকে পোড়াও।”
  • “মানুষের জীবনে প্রতিবন্ধকতা থাকা দরকার। বাধা না থাকলে সফলতা উপভোগ করা যায় না।”
  • “জীবন এক কঠিন খেলা। সত্যিকারের মানুষ হয়ে উঠতে পারলেই এ খেলায় জেতা যায়।”
  • “তিনজনই পারেন একটি দেশ বা জাতিকে বদলাতে। তাঁরা হলেন, বাবা, মা ও শিক্ষক।”
  • “কেউ যখন অসাধারণ হওয়ার জন্য জ্ঞান অর্জন করে তখন সে আসলে আর সবার মতোই সাধারণ হয়ে যায়।”
  • “নেতা সমস্যায় ভয় পাবেন না। বরং সমস্যার মোকাবিলা করতে জানবেন। তাঁকে কাজ করতে হবে সততার সঙ্গে।”
  • “প্রেসিডেন্ট হিসেবে আমার জন্য সবচেয়ে কঠিন কাজ ছিল আদালতের দেওয়া মৃত্যুদণ্ডের রায়ে সম্মতি দেওয়া। আমি মনে করি পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে মানুষ অপরাধ করে। অপরাধের জন্য দায়ী সমাজ বা অর্থনৈতিক ব্যবস্থা। কিন্তু সেই ব্যবস্থাকে আমরা শাস্তি দিতে পারি না। শাস্তি দিই ব্যবস্থার শিকার মানুষদের।”
  • “স্বপ্ন, স্বপ্ন, স্বপ্ন। স্বপ্ন দেখে যেতে হবে। স্বপ্ন না দেখলে কাজ করা যায় না। স্বপ্ন কাজের অনুপ্রেরণা জোগায়।”
  • “যারা পরিশ্রম করেন সৃষ্টিকর্তা তাঁদের সাহায্য করেন।”
  • “স্বপ্নবাজরাই সীমা ছাড়িয়ে যেতে পারেন।”
  • “উন্নত ও নিরাপদ ভারত রেখে যেতে পারলেই পরের প্রজন্ম আমাদের মনে রাখবে।”
  • “মন থেকে যারা কাজ করে না তাঁদের জীবন ফাঁপা। সাফল্যের স্বাদ তাঁরা পায় না।”
  • “সত্যি হওয়ার আগ পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে যেতে হবে।”
  • “কেবল বিশেষ সময়ে নয় সবসময় নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করে যেতে হবে।”
  • “তরুণদের নতুন চিন্তা করতে হবে, নতুন কিছু ভাবতে হবে, অসম্ভবকে সম্ভব করতে হবে। তবেই তারুণ্যের জয় হবে।”
  • “উদার ব্যক্তিরা ধর্মকে ব্যবহার করে বন্ধুত্বের হাত বাড়ান। কিন্তু সংকীর্ণমনস্করা ধর্মকে যুদ্ধের অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে।”
  • “এখন বিজ্ঞান জানতে ইংরেজি জানা দরকার। কিন্তু আমি বিশ্বাস করি দুই দশকের মধ্যে আমাদের ভাষায় বিজ্ঞানচর্চা শুরু হবে। আর তখন আমরা জ্ঞানবিজ্ঞানে জাপানিদের মতো এগিয়ে যাব।”
  • “সেই ভালো শিক্ষার্থী যে প্রশ্ন করে। প্রশ্ন না করলে কেউ শিখতে পারে না। শিক্ষার্থীদের প্রশ্ন করার সুযোগ দিতে হবে।”
  • “যদি আমরা স্বাধীন হতে না পারি কেউ আমাদের শ্রদ্ধা করবে না।”
  • “গভীর দুঃখে বা প্রচণ্ড আনন্দে মানুষ কবিতা লেখে।”
  • “বিজ্ঞান মানুষের জন্য উপহার। ধ্বংসের জন্য বিজ্ঞান নয়।”