লকডাউনে ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে স্কুটি চালিয়ে ১৪০০ কিমি পার করলেন মা

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা ভাইরাস থেকে দেশকে বাঁচাতে দেশে যখন লকডাউন জারি হয়েছে, তখন ছেলে আটকে ভিন রাজ্যে! আর সেই ছেলেকে ফিরিয়ে আনতে দৃষ্টান্ত গড়লেন এক মা। ওই মায়ের সন্তান আটকে পরে অন্ধ্রপ্রদেশের নেল্লোরে। চারিদিকে বন্ধ গাড়ি চলাচল, সবরকম পরিষেবা। একমাত্র নিত্যপ্রয়োজনীয় ও অত্যাবশ্যকীয় সামগ্রী ছাড়া কোনো পরিষেবাই নেই। এমন অবস্থায় বাড়ি থেকে ১৪০০ কিলোমিটার দূরে একা আটকে পড়া ছেলে নিজামুদ্দিনকে উদ্ধারে নেমে পড়লেন মা।

১২ই মার্চ এক বন্ধুকে পৌঁছে দিতে নেল্লোরের রহমতাবাদ যান নিজামুদ্দিন। সেই সময়েই ভারতে ধীরে ধীরে থাবা বসাতে শুরু করে করোনা ভাইরাস।তারপর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে শুরু করে। ফলস্বরূপ নিজামুদ্দিন আটকে পরে নেল্লোরেই। লকডাউন জারি হওয়ার পর বাড়িতে ফেরার সব রাস্তায় বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয়ে যায় পরিবহন ব্যবস্থাও। তখন মাকে ফোন করে তিনি বলেন, ‘বাড়ি ফিরতে চাই’।

আর নেল্লোর থেকে দূরে তেলেঙ্গানাতে বসে ওই যুবকের পরিবার। কিন্তু মা কেবল অপেক্ষায় বসে থাকেননি। তিনি তিন দিন ধরে ১৪০০ কিলোমিটার স্কুটি চালিয়ে একা সেখানে পৌঁছে যান। উদ্দেশ্য, ছেলেকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনা। আর এই লকডাউনের পরিস্থিতিতেই নতুন দৃষ্টান্ত গড়ে তুললেন তিনি। ছেলের কথা শুনে তিনি সোমবার সকালেই পুলিশের অনুমতি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন স্কুটি নিয়ে। বুধবার সন্ধ্যে বেলায় নিজের ছেলেকে সাথে নিয়েই বাড়ি ফিরেন।

এমন দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করা ওই মহিলা মায়ের নাম রাজিয়া বেগম, যিনি বছর ১৫ আগেই হারিয়েছেন তার স্বামীকে। দুই ছেলে নিয়েই তার সংসার। ৪৮ বছরের এই মহিলা পেশায় নিজামাবাদের বোধানে একটি সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা। সেই স্কুলটি হায়দ্রাবাদ থেকে ২০০ কিলোমিটার দূরে। বড় ছেলে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করেছে ও ছোট ছেলে নিজামউদ্দিনের বয়স ১৯, ডাক্তারি প্রবেশিকা প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ছোট ছেলেকে বাড়িতে ফেরানোর জন্য বড় ছেলেকে পাঠাবেন বলেই ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু ছেলে যদি পুলিশের সন্দেহের মুখে পড়ে! সেই ভয়ে মা হয়ে নিজেই দায়িত্ব নিয়ে নিলেন। একা তিনিই স্কুটার নিয়ে বেরিয়ে পড়েন ছেলেকে বাড়ি ফেরানোর জন্য। ৬ তারিখ সকালে স্কুটার নিয়ে লকডাউনের রাস্তায় নামেন তিনি। ফেরেন ৮ তারিখ বিকেলে।

লকডাউন শুরু হওয়ার ফলেই ভিন রাজ্যে কর্মরত অনেকেই নিজের পরিবারের সদস্যদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন। এমন অবস্থায় এমন একটি ঘটনা যেন তাদের মনেও সাহস বাড়িয়ে তুলছে আর আবারও প্রমাণ হচ্ছে যেকোনো পরিস্থিতিতেই মা সন্তানকে বাঁচানোর জন্য একাই লড়তে পারেন।