জীবনদ্বীপ নিভল টলি নক্ষত্রের, ২০ দিনের ফাইট শেষ ‘জিয়ন কাঠি’র ঐন্দ্রিলার

দুই দুই বার কর্কট রোগ মরণ থাবা বসিয়েছিল তাঁর শরীরে। আর দু’বারই বেঁচে থাকার অদম্য জেদ আর অফুরন্ত প্রাণ শক্তিকে পথেয় করে হারিয়ে দিয়েছিলেন এই রোগকে। সুস্থ হয়ে আবারও নিজের কাজ শুরু করেছিলেন। কিন্তু শেষ অবধি ব্রেন স্ট্রোক আর হার্ট অ্যাটাকের কবলে পড়ে ২০ দিন ধরে মৃত্যুর সাথে এক অসম লড়াই লড়ে হার মানলেন। না ফেরার দেশে পাড়ি দিলেন জিয়ন কাঠির অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।

গত পহেলা নভেম্বর নিজের বাড়িতে দুপুর বেলা ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হন অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা। সাথে সাথে ভর্তি করা হয় হাওড়ার আন্দুলের এক বেসরকারি হাসপাতালে। ওই দিনেই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। তারপর থেকে তার আত্মীয় পরিজন ও অনুরাগীদের মধ্যে আশার সঞ্চার হয় এবার হয়তো চেতনা ফিরবে অভিনেত্রীর। তাকে রাখা হয় ভেন্টিলেশনে। তবে ভেন্টিলেশনে থাকা অবস্থাতেই পরপর কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট এর কবলে পড়েন তিনি। তারপর হাজার চেষ্টা করার পরেও তাকে আর কোমা থেকে ফিরিয়ে আনা গেল না। সমস্ত লড়াইকে বৃথা করে দিয়ে ইহলোক ছেড়ে পরলোকের পথে যাত্রা করলেন বাংলা টেলিভিশনের এই জনপ্রিয় অভিনেত্রী।

কালার্স বাংলার ‘ঝুমুর’ ধারাবাহিকের হাত ধরে বাংলা টেলিভিশনে পদার্পণ করেন ঐন্দ্রিলা শর্মা। তারপর স্টার জলসার জীবন জ্যোতি ধারাবাহিক মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর সান বাংলার জিওন কাঠী ধারাবাহীকে তুলির ভূমিকায় অভিনয় করছিলেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে কর্কট রোগের কবলে পড়েন ঐন্দ্রিলা। সেবার সুস্থ হয়ে ফেরার পর আবারও ক্যান্সার থাবা বসায় তার শরীরে। দুই দুইবার মারণ রোগকে হারিয়ে জয়ী হয়েছিলেন ঐন্দ্রিলা।

দীর্ঘ রোগভোগের পর সুস্থ হয়ে আবারো ধারাবাহিকের কাজ শুরু করেছিলেন। তার বিশেষ বন্ধু সব্যসাচী চৌধুরীর সাথে এক সুন্দর সময় কাটাচ্ছিলেন। এর মধ্যে ফের ব্রেন স্ট্রোক আবারও সমস্ত হিসেব ওলটপালট করে দিল। পহেলা নভেম্বর ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে অভিনেত্রী ভর্তি হন হাওড়ার আন্দুলের এক বেসরকারি হাসপাতালে। সেই রাতেই তার মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার করা হয়। তারপর থেকে টানা ভেন্টিলেশনে ছিলেন অভিনেত্রী। গত শনিবার রাতে পরপর অন্তত ১০ বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। শরীরে বাকি যেটুকু জীবনী শক্তি অবশিষ্ট ছিল তার শেষ হয়ে যায়। শেষে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে চির বিদায় নিলেন তিনি।

দ্বিতীয়বার ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সময় থেকেই গোটা সময়টা জুড়েই তার ছায়াসঙ্গী হয়েছিলেন অভিনেতা সব্যসাচী চৌধুরী। সব্যসাচী ঐন্দ্রিলা সম্পর্কে বলেন “মেয়েটা লড়ে যাচ্ছে, সাথে লড়ছে একটা গোটা হাসপাতাল। নিজের হাতে করে নিয়ে এসেছিলাম, নিজের হাতে ওকে বাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাবো। এর অন্যথা কিছু হবে না”। কিন্তু এবারে আর তিনি পারলেন না। এই তরুনী অভিনেত্রীর প্রয়াণে শোকস্তব্ধ গোটা টলিউড ইন্ডাস্ট্রি তথা তার অনুরাগী ও ভক্তবৃন্দ ঐন্দ্রিলার এই অসময়ে চলে যাওয়া মেনে নিতে পারছেন না তার সহকর্মী থেকে অনুরাগী কেউই।