অবসর গ্রহণের পরও পড়ুয়াদের অনুরোধে স্কুলে ফিরেছেন গর্বের রাষ্ট্রপতি পুরস্কারপ্রাপ্ত মাস্টারমশাই

নিজস্ব প্রতিবেদন : দীর্ঘ ৩৪ বছরের শিক্ষকতা জীবনের অবসান ঘটিয়ে ২০১৯ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেছেন। তবে সেই অবসরগ্রহণ শুধুমাত্র খাতা-কলমে। কারণ ছাত্রদের অনুরোধে আবার স্কুলে ফিরতে হয়েছে পড়ুয়াদের প্রিয় মাস্টারমশাই ডঃ নিখিল কুমার সিনহাকে। শুধু তাই নয়, গরমের ছুটিতে এই শিক্ষককে ছাড়েননি পড়ুয়ারা, আর প্রিয় শিক্ষকের টানে গ্রীষ্মের ছুটিতেও ক্লাসে তারা। আর বিনা পারিশ্রমিকেই এই শিক্ষক পড়িয়ে চলেছেন তাঁর ভালোবাসার পড়ুয়াদের।

ডঃ নিখিল কুমার সিনহা মহাশয়ের শিক্ষাজীবন শুরু হয় প্রথমে দুনিগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। তারপর উচ্চশিক্ষার রামপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জনের পর তিনি বোটানিতে পিএইচডি করেন। তারপর শুরু করেন শিক্ষক হিসাবে কর্মজীবন। শিক্ষক হিসেবে তিনি নিযুক্ত হন রামপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষকতা জীবনে সাফল্যের জন্য পেয়েছেন বড় সম্মান, মুকুটে এসেছে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার। এরপর ২০১৯ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি শিক্ষকতার চাকরি জীবন সমাপ্ত করে অবসর নেন। ভেবেছিলেন বিশ্রামের কথা, কিন্তু কোথায়! ছাত্রদের অনুরোধে আবার তাঁকে ফিরতে হয় কর্মজীবনে।

রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত এই শিক্ষকের প্রকৃতিকে বাঁচানোর তাগিদে রয়েছে আরও বড় প্রচেষ্টা। তাঁর বাড়িতে তিনি লাগিয়েছেন অজস্র বিলুপ্তপ্রায় গাছ। যেখানেই তিনি ফাঁকা জায়গা পান সেখানেই পুঁতে দেন গাছের চারা। এছাড়াও তিনি বাড়ি থেকে যখন বের হন, তখন হাতে করে বাড়িতে এদিক ওদিক ছড়িয়ে ছিটিয়ে বেড়ে ওঠা নিম গাছের চারা নিয়ে বের হন। সেই নিম গাছের চারাগুলি তিনি রাস্তায় এদিক-ওদিক ফাঁকা জায়গা দেখলেই পুঁতে ফেলেন। আর রাস্তার ধারে নিম গাছের চারাকে পোঁতার জন্য বেছে নেওয়ার কারণ হিসাবে তিনি জানান, “নিম গাছের পাতা তেতো, তাই গরু-ছাগলের মতো প্রাণীরা মুখ দেয় না। অতি সহজেই এই গাছ বেড়ে ওঠে।” আর তিনি বলেন, “প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষায় গাছতো লাগাতেই হবে।”

রামপুরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক থেকে শুরু করে পরিচালন কমিটির সদস্যরা সকলেই এই মহান শিক্ষক ডঃ নিখিল কুমার সিনহার প্রতি কৃতজ্ঞ, তবে তারা জানিয়েছেন, “আমরা উনার প্রতি ঋণী থাকলেও, কৃতজ্ঞতা জানিয়ে উনাকে ছোট করবো না।”