লাল বেনারসী, কপালে চন্দন, নিথর ঐন্দ্রিলার পা ধরে নিথর সব্যসাচী

জীবনের নেই কোন ওয়ারেন্টি কার্ড, নেই কোন রিনিউয়াল পদ্ধতি। জীবন একটাই, যা শেষ তা চিরদিনের মত শেষ। আর এই কথাটাই যেন প্রতিটি মানুষের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে গেলেন ২৪ বছরের এক ফুটফুটে, প্রাণোচ্ছল অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা শর্মা।

বহুদিন যাবৎ তিনি অভিনয় জগতের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে স্টুডিও পাড়ার কাছাকাছি চত্বরেই বসবাস করতেন। কিন্তু তার আসল বাড়ি কুঁদঘাটে। আজ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর শেষবারের মতো নিয়ে আসা হয় কুঁদঘাটের এই আবাসনে।
কিন্তু আর সেই প্রাণোচ্ছল মেয়েটির হাসতে হাসতে ফেরা হলো না তার নিজের বাড়িতে। আজ ফিরল তার নিস্তব্ধ নিশ্চুপ এক শব দেহ। আবাসনের প্রত্যেকটি বাসিন্দা কান্নায় ফেটে পড়লেন ঐন্দ্রিলার শবদেহকে ঘিরে। জড়ো হলো কাছের মানুষদের ভিড়। অভিনেত্রী ঐন্দ্রিলা সেনকে শেষবারের মতো কুর্নিশ জানাতে সমাগম হয় টলি পাড়ার বেশ কিছু অভিনেতা ও অভিনেত্রীদের। ছিলেন অভিনেত্রীর মা, বাবা সহ আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধবীরা। আর তার সাথে তার পাশে সর্বদা ছিলেন এবং রয়েছেন তার পরম প্রিয় আপনজন সব্যসাচী।

যদিও সব্যসাচী ‘মহাপীঠ তারাপীঠ’ নামক একটি সিরিয়ালের মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করার পর বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করেছিলেন। এবং আজও তিনি দর্শকদের মধ্যে বামাক্ষ্যাপা নামে বেশি পরিচিত। কিন্তু এইসব লাইমলাইটের পর্দা সরিয়ে আজ তার একটাই পরিচয় তিনি ঐন্দ্রিলা সেনের সবচেয়ে কাছের মানুষ। ঐন্দ্রিলার প্রত্যেকটি যুদ্ধে সমানভাবে শামিল ছিলেন।

ঘড়ির কাঁটায় ঠিক বাজে ৪টে। হাওড়ার সেই বেসরকারি হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে আসা হয় ঐন্দ্রিলা সেনের শবদেহকে। এই কুড়িটা দিন যে সমস্ত হাসপাতাল কর্মী তার সঙ্গে লড়াই করে গেছেন, তারাই নিজে হাতে তার শবদেহকে বাইরে নিয়ে আসেন। তাকে যে গাড়িতে করে আবাসনে নিয়ে আসা হয়, সেই গাড়ির প্রথম সিটেই বসে ছিলেন সব্যসাচী।

ঐন্দ্রিলা কে পড়ানো হয় লাল বেনারসি শাড়ি। তার ভালোবাসার মানুষটি নিজের হাতে তার শেষ যাত্রায় তাকে চন্দন দিয়ে সাজিয়ে দিলেন। এই দৃশ্যটি যেন প্রত্যেকটি মানুষের স্মৃতিতে সারা জীবন রঙিন হয়ে থাকবে। যে সব্যসাচীর প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে, তিনি নিজে হাতেই সুস্থ করিয়ে বাড়ি ফিরিয়ে আনবেন। আজ তিনি নিজের হাতেই তার শবদেহ নিয়ে বাড়ি ফিরলেন। এখন অপেক্ষায় গোটা দুনিয়া যে ঐন্দ্রিলা ছাড়া সব্যসাচীর জীবন কোন দিকে মোড় নেবে।