কেরলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের পাইলট প্রাক্তন উইং কম্যান্ডার বহু মানুষের বাঁচিয়ে পেলেন অমরত্ব

নিজস্ব প্রতিবেদন : শুক্রবার রাতে প্রবল বৃষ্টির মাঝে কেরলের কোজিকোড় বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেস ফ্লাইট ‘আইএক্স-১৩৪৪’ অবতরণের সময় বিমানের চাকা পিছলে দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয়। এই দুর্ঘটনা এতটাই জোরালো ছিল যে দুবাই থেকে আসা এই বিমানটি দু’টুকরো হয়ে পড়ে। বিমান দুর্ঘটনার পরেই জানা যায় বিমানের পাইলট এবং কো পাইলট দুজনই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। কিন্তু তারা নিজেদের জীবন বিসর্জন দেওয়ার আগেই অসামান্য দক্ষতায় বিমানের অজস্র যাত্রীদের পুনর্জীবন দিয়েছেন।

সর্বভারতীয় সংবাদ সংস্থা এএনআই সূত্রে জানা যায়, গতকাল কেরলে দুর্ঘটনাগ্রস্ত এই বিমানটিতে ১৯০ জন যাত্রী ছিলেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ১৮ জনের প্রাণহানি হয়েছে বলে জানানো হয়েছে ভারত সরকারের তরফ থেকে। বাকি ৫০ জনের কাছাকাছি আহত। অর্থাৎ বিমানের ওই ১৮ জন যাত্রী বাদে বাকি সকলেই জীবিত অবস্থায় রয়েছেন। সচরাচর বিমান দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে এতজনের প্রাণ রক্ষা করার ঘটনা বিমানের পাইলটের দক্ষতাকেই স্বীকারোক্তি দেয়। আর এত জনের প্রাণ রক্ষা করে অমরত্ব পাওয়া ওই দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানের পাইলট কে ছিলেন জানেন?

বুদ্ধিদীপ্ত পদক্ষেপে অজস্র মানুষের প্রাণ বাঁচানো দুর্ঘটনাগ্রস্ত ওই বিমানের পাইলট ছিলেন বায়ুসেনার প্রাক্তন উইং কম্যান্ডার ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত সাথে। আর ছিলেন ক্যাপ্টেন অখিলেশ কুমার। ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত সাথে ২২ বছর ধরে ভারতীয় বায়ুসেনায় নিযুক্ত ছিলেন। তার এই দীর্ঘ ক্যারিয়ারে তিনি অনেক খ্যাতি এবং পুরস্কার জিতেছেন। এমনকি এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট হিসাবে যোগ দেওয়ার আগে তিনি ভারতীয় বায়ুসেনার তরফ থেকে পেয়েছিলেন ‘শোর্ড অফ অনার’। ক্যাপ্টেন দীপক বসন্ত সাথে ভারতীয় বায়ুসেনার ১৭ নম্বর স্কোয়াড্রনের উইং কম্যান্ডার ছিলেন। আর এই দক্ষতা গত কালকের যাত্রীবাহী বিমানকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করতে না পারলেও অজস্র মানুষকে পুনর্জীবন দিয়ে গেল।

দুর্ঘটনার সময় প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, গতকাল কেরলের আবহাওয়া খুবই খারাপ ছিল। যাত্রীবাহী ওই বিমানটি কোঝিকোড়ের বিমানবন্দরে অবতরণের আগে দু-দুবার অবতরণের চেষ্টা করে। আর এই দু দুবার অবতরণের চেষ্টা করেও ল্যান্ডিং করা সম্ভব হয়নি। এরপর তৃতীয়বারে অবতরণের সময় বিমানের চাকা পিছলে যেতেই এমন দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় বিমানটি।

তবে বিমানের যেসকল যাত্রীরা জীবিত অবস্থায় রয়েছেন তাদের বক্তব্য, বিমানের পাইলট যাত্রীদের আগেই সতর্ক করে দিয়েছিলেন আবহাওয়া অত্যন্ত খারাপ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে। তারপর সকলেই সাবধান হয়ে যান। অন্যদিকে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিমানের চাকা পিছলে যেতেই পাইলট বিমানের ইঞ্জিন বন্ধ করে দেন। আর তা না হলে হয়তো আরও অনেকের প্রাণহানি ঘটতে পারতো। এদিনের এই বিমান দুর্ঘটনা গত ১০ বছরে বিমান দুর্ঘটনাগুলির মধ্যে বড় দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।