করোনার মাঝেই চিনে ছড়াচ্ছে বিউবনিক প্লেগ, জানুন উপসর্গ থেকে খুঁটিনাটি

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনার মাঝেই আরও এক মহামারী হানা দিলো চিনে, যার নাম বিউবনিক প্লেগ। এটি প্লেগেরই একটি রোগের ধরণ। ইতিমধ্যেই বায়ানুর শহরে বিউবনিক প্লেগে সংক্রমিত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। এই পরিস্থিতিতে বায়ানুর শহরে তৃতীয় মাত্রার সর্তকতা জারি করা হয়েছে। মধ্যযুগে এই রোগকে বলা হতো ব্ল্যাক ডেথ। এটি অত্যন্ত ছোঁয়াচে রোগ।

এই রোগের আবির্ভাব বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের বক্তব্য, বন্য ইঁদুর ও ইদুঁর জাতীয় প্রাণীর শরীরে এক ধরণের পোকা জন্মায়। সেই পোকা থেকেই বিউবনিক প্লেগের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমিত হয়ে যায়। এই ব্যাকটেরিয়া একজনের শরীর থেকে অপরের শরীরকে দ্রুত সংক্রমিত করার সম্ভাবনা থাকে।

কীভাবে এই ব্যাকটেরিয়া মানুষের শরীরে বাসা বাঁধে?

বিউবনিক প্লেগে আক্রান্ত মাছি যদি কোন মানুষকে কামড়ায় তাহলে সেই মানুষের মধ্যে এই রোগ সংক্রমিত হয়।

এরপর প্লেগ ব্যাসিলাস, ওয়াই পেসটিস শরীরে ঢুকে যায় ও লসিকা নালী দিয়ে বাহিত হয়ে চলে যায় লসিকা গ্রন্থিতে সেখানে নিজের ক্লোন তৈরি করে। লসিকাগ্রন্থি এরপর ফুলে ওঠে এবং ব্যথা শুরু হয় একেই বলা হয় বিউবো।

এই রোগের অ্যাডভান্স স্টেজে লসিকায় ঘা হয়ে যায়। শিখা থেকে বেরোতে থাকে পুঁজ। তবে একটিই সান্তনা এই‌ রোগ মানুষ থেকে মানুষে সংক্রমিত হয় না এটি একমাত্র মাছির দ্বারাই সংক্রমিত হয়।

এই প্লেগ থেকে কি মৃত্যু হতে পারে?

হ্যাঁ হতে পারে। ওয়ার্ল্ড হেলথ অর্গানাইজেশনের দাবি সঠিক সময় ঠিকমতো চিকিৎসা না করলে সংক্রমিত হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কোন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি এই প্লেগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেতে পারেন।

এই রোগের ক্ষেত্রে কী ওষুধ?

সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিক এই রোগেও ব্যবহার করা যায়। সাধারণ অ্যান্টিবায়োটিকের এই রোগ সারে, তবে রোগের সম্ভাবনা দেখার সঙ্গে সঙ্গেই এই অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হবে।

আচমকা ধুম জ্বর হলো এই রোগের অন্যতম একটি লক্ষণ। এই রোগের ফলে গোটা শরীরে ও মাথায় অসম্ভব যন্ত্রণা হয়। এই রোগের ফলে মানুষ দুর্বলতা অনুভব করে। বারবার বমি ভাব এই রোগের অন্যতম লক্ষণ।করোনার মতো এই রোগে সংক্রমিত হলেও তার চিকিৎসা করার জন্য চিকিৎসকদের পিপিই কিট পরতে হয়। লসিকা গ্রন্থি ফুলে গেলেও ব্যথা শুরু হয়ে যায়।

নিউমোনিয়া রোগের লক্ষণ খুব দ্রুত হারে দেখা দেয়। করোনার মতো এর লক্ষণ বুঝতে অনেকটা সময় লাগে না। রোগ সংক্রমণের ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই লক্ষণগুলি দেখা যায়। এই প্লেগের অন্যতম লক্ষণ হলো শ্বাস সংক্রান্ত সমস্যা। এই রোগে সংক্রমিত ব্যক্তিদের দম নিতে কষ্ট হয় ও কাশি দেখা দেয়। এছাড়া থুতুতে রক্ত উঠতে শুরু করে এই রোগের ফলে। এতোটাই ছোঁয়াচে এই প্লেগ যে মৃতদেহ থেকেও সংক্রমণ ছড়াবার আশঙ্কার থেকে যায়।
মৃতদেহের তরলেও এই রোগের জীবাণু থাকে।
যারা দেহ সৎকার করেন তারাও সংক্রমিত হতে পারেন।

চতুর্দশ শতকে ইউরোপের এক তৃতীয়াংশ মানুষের এই ব্ল্যাক ডেথ বা বিউবনিক রোগ হয়। এই রোগে কোটি কোটি মানুষ মারা গেছেন। এই রোগ তিনবার মহামারীর আকার নিয়েছে।

দক্ষিণ-পশ্চিমের ইউনানে এই রোগের জন্ম। ইউনিয়ন থেকে আফিন কারবারিদের মধ্য দিয়ে এই রোগ ১৮৯৪ সালে ছড়িয়ে যায় পুরো বিশ্বে। এরপরই তৃতীয় প্লেগ মহামারী শুরু হয়। এরপর বিউবনিক প্লেগে সংক্রমিতের সংখ্যাও কমে যায়।

মারমটের কাঁচা মাংস খেয়ে ইনার মঙ্গোলিয়া এক দম্পতি এই রোগে আক্রান্ত হন। মঙ্গোলিয়ার উলগিপ্রদেশে এই ঘটনা ঘটে। সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা শুরু হলেও এই দম্পতিকে বাঁচানো যায়নি। গত বছরে এই ঘটনা, এরপর ভীতির সৃষ্টি করে।

তবে বিউবনিক প্লেগ মরমটের পাশাপাশি শূকরের মাংস থেকেও ছড়িয়ে যেতে পারে। গত সপ্তাহে চীন ও গবেষকরা এই বিষয়ে সর্তকতা জারি করেছেন, এই প্লেগ যেকোনো মুহূর্তে মহামারীর আকার নিতে পারে। চিনের কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সেন্টারের তরফ থেকে জানানো হয়, শূকরের মাংস থেকেও ইনফ্লুয়েঞ্জার মধ্য দিয়ে এই রোগ মানব শরীরে প্রবাহিত হতে পারে।