দক্ষিণেশ্বর ভবতারিণী মন্দিরের অজানা কাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদন : ১৮৪৭ সালে জানবাজারের রানি রাসমণি দেবী অন্নপূর্ণাকে পুজোর অভিপ্রায় নিয়ে কাশীতে তীর্থ‌যাত্রার আয়োজন করছিলেন। এই কাশী যাত্রার আগের রাত্রেই রাণীমা দেবী কালী মায়ের স্বপ্ন পান। রাণীমাকে দেবী স্বপ্নে দর্শন দিয়ে বলেন, “কাশী যাওয়ার প্রয়োজন নেই। গঙ্গাতীরেই একটি নয়নাভিরাম মন্দিরে আমার মূর্তি প্রতিষ্ঠা করে পুজো কর‌। সেই মূর্তিতে আবির্ভূত হয়েই আমি পুজো গ্রহণ করবো‌।”

এরপর তিনি দক্ষিণেশ্বরের কালী মন্দির তৈরি করেন। এই মন্দির নির্মাণে‌ মোট আট বছর ‌(১৮৪৭ সাল থেকে ১৮৫৫ সাল) সময় লেগেছিল। সেই সময়েই এই মন্দির নির্মাণে ৯ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছিলো। মন্দির তৈরি হ‌ওয়ার এই পথটা কিন্তু মোটেই মসৃণ ছিলোনা, তৎকালীন গোরা হিন্দু ব্রাহ্মণরা এর বিরোধিতা করেছিলেন।

রানী রাসমণি জাতিতে ছিলেন কৈবর্ত। কৈবর্তের মন্দির তৈরিতে কোনো অধিকার নেই এই বলে তৎকালীন গোরা ব্রাহ্মণরা এই মন্দির বয়কট করেছিলেন। তারা জানিয়ে দেন যে এই মন্দিরে তারা পৌরোহিত্য করবেন না। তবে এই মন্দির নির্মাণে রামকৃষ্ণদেবের বড়দাদা রামকুমার চট্টোপাধ্যায় রাণী রাসমণিকে প্রভূত সাহায্য করেছিলেন।পরবর্তীতে তিনি এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত রূপে নিযুক্ত হন। তবে পরের বছরই রামকুমার দেহ রাখেন। তখন এই মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত হন গদাধর অর্থাৎ রামকৃষ্ণ পরমহংসদেব।

এই মন্দিরের সহায়তা কাজে ভাগ্নে হৃদয়ও যোগ দিয়েছিলেন। এই মন্দিরে রামকৃষ্ণদেব ৩০ বছর অবস্থান করেছিলেন।পরমহংস দেবের নানা লীলার সঙ্গে জড়িত এই মন্দির। এই মন্দিরেই একটি ঘরে রামকৃষ্ণদেব অবস্থান করতেন আর নহবৎখানায় থাকতেন সারদা দেবী। দক্ষিণেশ্বরে উত্তর-পশ্চিমের যে ঘরে রামকৃষ্ণদেব অবস্থান করতেন সেই ঘর এখন মানুষের কাছে তীর্থক্ষেত্র।

দক্ষিণেশ্বরের কালীমন্দির নবরত্ন ধাঁচে তৈরি। এই মন্দির একশো ফুটেরও বেশী উঁচু। সহস্র পাপড়ির রূপের পদ্মের উপর শায়িত আছেন শিব আর সেই শিবের উপর পা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন রামকৃষ্ণের পরম আরাধ্য ভবতারিণী দেবী। মূল মন্দির ছাড়াও দ্বাদশ শিব মন্দির ও শ্রী শ্রী রাধাকান্ত মন্দির রয়েছে।

দক্ষিণেশ্বরের মন্দিরে ঢোকার আগেই রয়েছে রানী রাসমনির মন্দির। এছাড়া গঙ্গার পাড় থেকে কিছুটা এগিয়ে রয়েছে দ্বাদশ শিব মন্দির। এই মন্দিরে ঢোকার আগে রয়েছে পঞ্চবটি। এই পঞ্চবটিতেই প্রতিদিন রামকৃষ্ণদেব ধ্যান করতেন আর এখানেই তিনি মা ভবতারিণীর দর্শন লাভ করেন।