দেবী দুর্গার হাতে থাকা ১০ অস্ত্রের তাৎপর্য

নিজস্ব প্রতিবেদন : ‌ মহিষাসুরকে নিধন করবার জন্য দশপ্রহরণধারিণী দেবী দুর্গা নিজেকে প্রস্তুত করেছিলেন। দেবীর সেই রণং দেহি রূপের মধ্যে দেবীকে পুজো করা হয় শক্তিময়ী রূপে। সকল দেবতা যখন পরাহত হন তখনই দেবীর আবির্ভাব। অর্থাৎ পুরুষের শক্তির তুলনায় নারী অধিক শক্তিময়ী। নারীর শক্তিতেই শক্তিমান হয় পুরুষ, দশ অস্ত্রে সজ্জিতা হয়ে দূর্গতিহারিণী দুর্গার রূপে দেবী আমাদের এই শিক্ষাই দেন।

দেবীর দশ হাতের এই দশ অস্ত্রের আলাদা আলাদা তাৎপর্য আছে। সেই তাৎপর্যগুলি নিম্নে আলোচনা করা হল।

যুদ্ধের জন্য সজ্জিতা দেবীকে শঙ্খ বরুণদেব দিয়েছিলেন। এই শঙ্খের ধ্বনি থেকেই সমগ্র জীবজগতে প্রাণের সৃষ্টি হয়েছিল। তাই এই শঙ্খ সমগ্র জীবজগতের প্রতীক, এই শঙ্খ সৃষ্টির প্রতীক। শঙ্খ ধারণ অর্থাৎ জীবজগত আর সৃষ্টির চক্র দেবীর দ্বারাই নিয়ন্ত্রণ হয়।

দেবীর হাতে চক্র তুলে দিয়েছিলেন জগৎপালক শ্রী হরি। এই চক্র ধারণ করার ক্ষমতা একমাত্র তাঁরই আছে যিনি জগত পালন করেন। তাই জগত পালনকর্তা শ্রী হরি এই চক্রকে ধারণ করেন আর এই চক্র দেবী দুর্গা ধারণ করছেন অর্থাৎ তিনি জগৎপালনকারিণী। দেবী দুর্গা সমগ্র সৃষ্টির মূল, বিশ্ব চরাচর তাকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হচ্ছে এই তত্ত্বই উঠে আসছে চক্র ধারণের মধ্য দিয়ে।

যমরাজের অস্ত্র গদা যমরাজ প্রদান করেছিলেন
দেবীকে। এই গদা আনুগত্য, ভালোবাসা ও ভক্তির প্রতীক স্বরূপ।

সৃষ্টিকর্তা ব্রহ্মা দেবীকে দিয়েছিলেন পদ্ম। পদ্ম পাঁকে জন্মালেও তার সুরভি সমগ্র জগতে ছড়িয়ে পড়ে। ঠিক সেইরকম ভাবে দেবীর কৃপায় অন্ধকারের মধ্যেও আলো হতাশার মধ্যেও আশা দেখা যায়। দেবীর হাতের পদ্ম মানুষের মধ্যে আসুরিক শক্তির বিনাশ করে শুভ শক্তিকে জাগ্রত করে।

দেবাদিদেব মহাদেব দেবীর হাতে তুলে দিয়েছিলেন ত্রিশূল। ত্রিশূলে রয়েছে তিনটি শূল বা ফলা। ত্রিশূলের তিনটি ফলা তম গুণ, রজ গুণ ও সত্ত্ব গুণকে নির্দেশ করে।

দেবরাজ ইন্দ্র দেবীকে বজ্র দিয়েছিলেন। এই বজ্র দৃঢ়তা ও সংহতির প্রতীক।

নাগরাজ দেবীকে দিয়েছিলেন সর্প। এই সর্প বিশুদ্ধ চেতনার প্রতীক। অর্থাৎ দেবী মানুষকে বিশুদ্ধ চেতনা দান করেন।

অগ্নিদেব দেবীকে দিয়েছিলেন অগ্নি। অগ্নি হল জ্ঞান ও বিদ্যার প্রতীক। যা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করলে অবিদ্যা অঞ্জান নাশ হয়। মানুষ শুদ্ধতম হয়ে ওঠে।

বায়ু দেবের প্রদান করা অস্ত্র তীর ধনুক ইতিবাচক শক্তির প্রতীক।

তলোয়ার হলো বুদ্ধির প্রতীক। সমাজের সর্বক্ষেত্রে অশিক্ষা হোক অথবা বৈষম্য অথবা আসুরিক শক্তি-অশুভ নাশ করে শুভের প্রতিষ্ঠা করতে বুদ্ধির ধার আবশ্যক‌। সেই বুদ্ধি স্বরূপ তীক্ষ্ণ অস্ত্র তলোয়ার দেবীকে প্রদান করেছিলেন ভগবান কালা।