ISRO-র পরবর্তী ৫ বড় বড় মিশন, যা আপনাকে ভারতীয় হিসাবে গর্বিত করবে

নিজস্ব প্রতিবেদন : ২০১৯ সালের ২২ শে জুলাই শ্রীহরিকোটা থেকে চাঁদের পথে পাড়ি দেয় চন্দ্রযান ২। প্রায় দেড় মাস পর গত ২৭ শে অক্টোবর রাত্রি দেড়টা থেকে আড়াইটার মধ্যে চাঁদের মাটিতে অবতরণের পরিকল্পনা ছিল ল্যান্ডার বিক্রমের। পরিকল্পনা মতো রাত্রি ১:৩৮ মিনিটে অবতরণের প্রক্রিয়া শুরু হয়। বিক্রমের গতিবেগ সেকেন্ডে ১.৮ কিলোমিটার থেকে নামিয়ে আনা হয় ০ তে। তারপর শুরু হয় হার্ড ব্রেকিং কাউন্টডাউন। হার্ড ব্রেকিং প্রক্রিয়া নিখুঁতভাবে সম্পন্ন হওয়ার পর শুরু হয় ফাইন ব্রেকিং পর্ব। আর এই পর্ব শুরু হতেই দুর্ভাগ্যবশত দেখা দেয় বিপর্যয়। এই পর্যায়েই কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই বিক্রমের সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর।

তারপর ইসরোর তরফ থেকে জানানো হয় বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ করার প্রয়াস চলছে। সেপ্টেম্বরের ২০ থেকে ২১ তারিখ পর্যন্ত এই প্ৰচেষ্টা চলবে। জানা গিয়েছে, চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিং না হবার কারণে সামান্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ল্যান্ডার। আর এই কারণেই তার সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হচ্ছে না। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান পাঠানো হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে। সে প্রসঙ্গে বলা যায়, চন্দ্রযানের অরবিটার এখনও কাজ করছে। কিছুটা দূর থেকে চাঁদকে সে এখনও পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। এই অরবিটার চাঁদের অনেক ছবি তুলে এখনও ইসরোকে পাঠাতে পারে।

আর এই চন্দ্রযান ২ এর পাশাপাশি একই সঙ্গে ইসরো আরও পাঁচটি মিশনের জন্য পুরোদস্তুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। একনজরে দেখে নিন তালিকা

Upcoming #ISRO Missions~

> ASTROSAT
> Aditya L1 mission
> Gaganyaan mission
> Mangalyaan-2
> Chandrayaan-3

Those who try, never give up#jayHind

— Kailasavadivoo Sivan (@KailasavadivooS)

১) অ্যাস্ট্রোস্ট্যাট

অ্যাস্ট্রোস্যাট হ’ল ভারতের প্ৰথম বহু তরঙ্গদৈর্ঘ্য স্পেস টেলিস্কোপ। এটি ২৮ শে সেপ্টেম্বর ২০১৫ একটি পিএসএলভি এক্সএলে চালু করা হয়েছিল।

২) আদিত্য এল ১

সূর্যের বাড়িতে গোপনে নজরদারি চালাতে আগামী বছর সূর্যের দেশের সীমান্তে গিয়ে উঁকি দেবে ভারত। নিরাপদ দূরত্বে জমিয়ে বসে শুরু হবে মাপঝোঁক, গবেষণা। ইসরোর ‘সোলার মিশন’ নিয়ে উত্তেজনা তুঙ্গে। কারণ নাসা আর ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইএসএ বা ‘এসা’) পর আমরাই প্রথম পাড়ি দিচ্ছি সৌর মুলুকে। এই অভিযান সফল হলে, মহাকাশ বিজ্ঞানের ইতিহাসে পাকাপাকি ভাবে সেরার শিরোপাটা ছিনিয়ে নেবে ভারত। ইসরোর চেয়ারম্যান কে শিবন বলেছেন, “পৃথিবী থেকে ১৫ লক্ষ কিলোমিটার দূরে সূর্য ও পৃথিবীর মাঝের এক কক্ষপথ ‘ল্যাগরাঞ্জিয়ান পয়েন্ট’ বা ‘ল্যাগরেঞ্জ পয়েন্ট’-এ ল্যান্ড করবে স্যাটেলাইট আদিত্য এল-১। সূর্যের বাইরের সবচেয়ে উত্তপ্ত স্তর করোনার যাবতীয় তথ্য সে তুলে দেবে আমাদের হাতে।

৩। গগনযান মিশন

ভারতের ৭৫তম স্বাধীনতা দিবসের ৬ মাস আগেই মহাকাশ মিশন সম্পন্ন করা হবে। মিশনের নাম দেয়া হয়েছে ‘গগনযান’। মাত্র ১৬ মিনিটেই গগনযান পৌঁছে যাবে পৃথিবীর অক্ষরেখায় এবং অবতরণের সময় তা নেমে আসবে আরব সাগর বা বঙ্গোপসাগরে।

GSLV Mk-III লঞ্চ ভেহিক্যাল ব্যবহার করা হবে এই মিশনের জন্য। মিশনে তিনজন ক্রু থাকবে। এই তিনজন মহাকাশচারীকে প্রস্তুতি নিতে হবে দুই থেকে তিন বছর। মহাকাশে তাদের থাকতে হবে ৫ থেকে ৭ দিন এবং তাদের নির্বাচন করবে ভারতীয় বায়ু সেনা ও ইসরো যৌথভাবে।

৪) মঙ্গলযান-২

মঙ্গল গ্রহের উদ্দেশে এ হল ইসরোর পরবর্তী অরবিটার মিশন। ২০২৪ সালে মঙ্গলযান রওনা হবে বলেই পরিকল্পনা রয়েছে ইসরোর।

৫) চন্দ্রযান-৩

চেয়ারম্যান কে শিবন ইতিমধ্যেই ঘোষণা করে দিয়েছেন চন্দ্রযান-৩ মিশনের জন্য আলাদা টিম কাজ শুরু দিয়েছে। তবে এরপরের অভিযানটি হবে জাপানের সহযোগিতায়। নিয়ম মতো সব এগোলে আরও এক ল্যান্ডারকে নিয়ে ২০২৪ সালে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতেই ফিরে যাবে ইসরো। জাপানের এয়ারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি বা জাক্সার সঙ্গে যৌথভাবে চন্দ্রযান-৩ অভিযান করবে ভারত। সে সময় চাঁদের মাটি খুঁড়ে পৃথিবীতে এনে গবেষণা করার কথা রয়েছে। ২০২৪ এর যৌথ মিশন অনুযায়ী এখনও পর্যন্ত ঠিক রয়েছে রকেট আর রোভার তৈরি ও তাকে প্রেরণের দায়িত্ব থাকবে জাপানের উপর। আর ল্যান্ডার পাঠাবে ভারত। রোভারটি চাঁদে ড্রিল করে মাটি পাথর তুলে পৃথিবীতে ফিরে আসবে। বিশ্বে এই প্রথম দুই দেশ যৌথভাবে চাঁদে মানববিহীন যান পাঠিয়ে সেখানকার মাটি নিয়ে ফিরে আসার পরিকল্পনা করেছে। তবে ওই বছরই ইংল্যান্ডেরও এমন পরিকল্পনা রয়েছে।

২০৩০ সালে একটি মহাকাশ গবেষণাকেন্দ্র বানানোর পরিকল্পনাও রয়েছে ভারতের। আর তা রয়েছে সেই চাঁদেই। এই অভিযান প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা মহাকাশ বিজ্ঞানী এ পি জে আব্দুল কালামের স্বপ্ন। তাঁর যুক্তি ছিল, চাঁদে ল্যাবরেটরি, মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র বানাতে খরচ কম পড়বে। মহাকাশ বিজ্ঞানীরাও সেখানে গিয়ে থেকে গবেষণা চালাতে পারবেন। বর্তমানে মহাকাশে আমেরিকা, রাশিয়ার স্পেসস্টেশন থাকলেও চাঁদে কারোর নেই। তবে মহাকাশে আর চাঁদে স্পেসস্টেশন বানানোর মধ্যে তফাৎ আছে। মহাকাশে তা বানানোর অর্থ, পৃথিবীর দূরের কক্ষপথে তাকে স্থাপন করা। যার দূরত্ব হবে ৬০ বা ৭০ হাজার কিলোমিটারের মধ্যে।