সমুদ্রের মাঝেই রেলযাত্রা, বিশ্বের অন্যতম রোমাঞ্চকর যাত্রা ভারতেই

নিজস্ব প্রতিবেদন : রামের সমুদ্র পেরনোর পৌরাণিক ঘটনাকে লক্ষ্য রেখে এবার উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে গড়ে তোলা হচ্ছে নতুন পাম্বান রেল ব্রিজ। পৃথিবীর সবচেয়ে বি’পজ্জনক অথচ রোমাঞ্চকর রেলপথ ভারতের মূল ভূখণ্ড থেকে পাম্বান বা রামেশ্বরম মাত্রা।

উলম্ব এই রেল ব্রিজ খোলা ও বন্ধ করা যাবে জাহাজ চলাচলের সময়। ভারতের প্রধান চার তীর্থ ক্ষেত্র বদ্রীনাথ, দ্বারকা, পুরীর সঙ্গে খুব সহজে পৌঁছানো যাবে ভারতের মূল ভূখন্ডের বাইরে সমুদ্রে অবস্থিত রামেশ্বরম বা পাম্বানদ্বীপ। এই রেল ব্রিজ ভারতের দ্বিতীয় দীর্ঘতম সুমদ্র সেতু। বান্দ্রা ওরলি সুমদ্র সেতুর আগে এটাই ছিল ভারতের দীর্ঘ রেল সেতু। ১৯১৪ সালে এই সেতু নির্মাণ করা হয়। বর্তমান সময়ের প্রেক্ষিতে এই সমুদ্র সেতুকে নতুন ভাবে গড়ে তোলা হচ্ছে। খুলে দেওয়া হবে ২০২১ সালে।

সমুদ্রের উপর দিয়ে পাম্বান বা রামেশ্বরম দ্বীপে দীর্ঘকাল ধরে রেল যাত্রা ছিল রোমাঞ্চকর ও ঝুঁকিপূর্ণ। সুমদ্র ঝড় বারবার আছড়ে পড়েছে এই রেল ব্রিজের উপর। তার মধ্যে ১৯৬৪ সাইক্লোন ভয়াবহ আঘাত হানে পাম্বানদ্বীপ ও রেলব্রিজের উপর। একদিকে বঙ্গোপসাগর অন্যদিকে আরব সাগরের মাঝে পাম্বান চ্যানেলের ওপর রেলব্রিজ একশো বছর ধরে ভারতের রেল ইতিহাসে এক আশ্চর্য ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের নিদর্শন।

১৯৬৪ সালের ২২-২৩ ডিসেম্বর রাতে পাম্বান রেল ব্রিজের উপর ১১৫ জন যাত্রিকে নিয়ে পেরনো রেল ঝড়ের আঘাত সুমদ্রে তলিয়ে যায়। রাতারাতি দ্বীপের ১৮০০ অধিবাসী মুছে যায় সুমদ্র ঝড়ে। তামিলনাড়ু সরকার এরপর জনশূন্য শহর বলে ঘোষণা করে পাম্বানদ্বীপকে। সুমদ্রের ওপর আশ্চর্য এই রেলব্রিজ নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে গড়ে তুলছে বর্তমান ভারত সরকার।

রেলমন্ত্রী পীযুষ গয়াল জানিয়েছেন, ২.০৭ কিমি এই নতুন পাম্বান ব্রীজ খুলে গেলে ভারতের তীর্থযাত্রীরা সহজে এখানে আসতে পারবেন। রামৈশ্বরম মন্দির ও জ্যোতির্লিঙ্গ দেখতে পর্যটক ওরামৈশ্বরম মন্দির ও জ্যোতির্লিঙ্গ দেখতে পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা সারাবছর সহজে এখানে আসতে পারবেন যা এখানকার অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। ২০২১ সালে এই ব্রিজের কাজ সম্পন্ন হবে বলে রেলমন্ত্রক ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে।

এই নতুন ব্রিজ গড়ে তোলার কাজ করছে রেলওয়ে বিকাশ নিগম লিমিটেড। এর দৈর্ঘ্য ২.০৭ কিলোমিটার। সাথে ১৮.৩ মিটারের ১০০ বিঘত (Span)। উলম্বভাবে উপরে তোলা নামানো যাবে ইলেক্ট্রো মেকানিক্যাল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে। যা এতদিন হাতে করে করতে হতো। এর সাথে ট্রেনের ইন্টারলকড ও জাহাজ চলাচলের আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাবস্থাও যুক্ত থাকবে।

পাম্বানদ্বীপ বা রামেশ্বরম দ্বীপ ভারতের দক্ষিণ ভাগের একেবারে শেষ প্রান্ত। পাম্বান চ্যানেল মূল ভূখন্ড ভারত থেকে পাম্বানদ্বীপকে আলাদা করে রেখেছে। ভারতের মূল ভূখন্ডের মনদাপমের সঙ্গে পাম্বান দ্বীপের যোগ ঘটিয়েছে পাম্বান রেল ব্রিজ। যদিও ১৯৮৮ সালে সড়ক পথের মাধ্যমে এই দ্বীপের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলা হয়। যা ইন্দিরা গান্ধী রোড ব্রিজ নামে পরিচিত। জাতীয় সড়ক ৪৯ সাথে এটিকছ যোগ করা হয়েছে।

কথিত এই পথেই রাম ও তাঁর সৈন্য বাহিনী লঙ্কায় পৌঁছেছিলেন রাবনকে বধ করতে। সীতা উদ্ধারের পর এই পাম্বান দ্বীপে লিঙ্গ রুপের শিবের আরাধনা করেন রাম। কারণ রাবণকে বধ করে তিনি ব্রাহ্মণ হ’ত্যা করেছিলেন। পাপ খন্ডননের জন্য শিবের আরাধনা। তাই রামায়নের কাল থেকে তীর্থযাত্রীরা আজও তীর্থ করতে আসেন ভারতের চতুর্থ তীর্থক্ষেত্র এই রামেশ্বরমে।

এই দ্বীপটির আয়তন ৫৫ বর্গ কিলোমিটার। জনসংখ্যা ৪৪,৮৫৬। তামিলনাড়ুর রামানাথপুর জেলার এটি একটি শহর। আধুনিক প্রযুক্তির সাথে রামের লঙ্কা যাত্রার ঘটনাকে জড়িয়ে বর্তমান ভারত সরকারের এই উদ্যোগ বাণিজ্যের উন্নয়নের সাথে রাজনৈতিক তাৎপর্য এক নতুন মাত্রা দিয়েছে নতুন পাম্বান রেল ব্রিজর নির্মাণ।