রাজার হাল শেষ! জেলবন্দি অর্পিতার ‘এই’ পরিস্থিতি দেখলে কান্না পাবে

কোটি কোটি টাকা, প্রচুর অলংকার উদ্ধার হওয়ার বহর দেখে মাথা ঘুরে গিয়েছিল বঙ্গবাসীর। শিক্ষা ক্ষেত্রে আর্থিক তছরূপের অভিযোগে গ্রেপ্তার হয়েছেন রাজ্যের তৎকালীন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। গ্রেপ্তার হয়েছেন তার খুব কাছের বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। সুন্দরী এই অর্পিতাকে নিয়েও চর্চা কম হয়নি। কেন্দ্রীয় সংস্থার হাতে দুজনের গ্রেপ্তার হওয়ার পর কেটে গিয়েছে বেশ কয়েক মাস। ঘুরেছে বছর। এখনও তারা জেলবন্দী। তবে সেই অর্পিতা এখনও আলোচনার চর্চায়। এখনো তাদের দিক থেকে নজর সরাতে পারেননি জেল কর্মীরা। যার বাড়ি থেকে কিনা কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হল, তিনিই রয়েছেন একেবারে সাদামাটা ভাবে। অর্পিতার এই ছবি যেন অবাক করছে জেল কর্মী থেকে শুরু করে নিরাপত্তারক্ষী সকলকে।

সম্প্রতি শিক্ষামন্ত্রীর দিকে বড় অভিযোগ তুলেছিল ইডি। কিভাবে সংশোধনাগারে বন্দি থাকা সত্ত্বেও প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাতে রয়েছে আংটি, সে নিয়ে আদালতে প্রশ্ন উঠেছিল। যদিও অভিযোগ স্থায়ী হতে দেন নি তৃণমূলের প্রাক্তন মহাসচিব এই হেভি ওয়েট নেতা। আঙ্গুল উচিয়ে সংবাদ মাধ্যমের সামনে দেখিয়েছিলেন, খুলে ফেলেছেন আংটি। একইসঙ্গে আংটি নিয়ে প্রশ্ন তোলায় কেন্দ্রীয় সংস্থাকে কার্যত তুলেধনা করেছিলেন প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী। বলেছিলেন আংটি একটি ধর্মীয় বিষয়। তিনি স্বাস্থ্যের জন্য আংটিগুলি পড়েছিলেন। একই সঙ্গে তিনি প্রশ্ন তুলেছিলেন, ইডির কার্যালয় দেবী কালীর ছবি থাকতে পারে, তাহলে তার হাতে কেন আংটি থাকতে পারে না। তবে সম্পূর্ণ উল্টো ছবি প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবীর ক্ষেত্রে।

অভিনেত্রী মডেল তথা শিক্ষা মন্ত্রীর কাছের এই বান্ধবীর কাছে নেই এক টুকরো সোনা। নেই কানে দুল, নেই গলায় চেন, নেই হাতে বালা। যার বাড়ি থেকে কিনা কোটি কোটি টাকা উদ্ধার হল, তিনিই একেবারে এমন অবস্থায় রয়েছেন। প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায় কে যখন আলিপুর সংশোধনাগারে আনা হয়েছিল, তখন নাকি তার কাছে কোন অলংকারই ছিল না। আর এখনো তেমনি রয়েছেন এই মডেল অভিনেত্রী। জেল কর্তৃপক্ষকে অর্পিতা মুখোপাধ্যায়ের কাছ থেকে কোনওরকম অলংকার সংগ্রহ করতে হয়নি। কারণ তিনি যখন এসেছিলেন, তার কানে কানের ছিল না। ছিলনা গলায় চেইন। ছিল না হাতে বালা।

জেলের ভিতর অলংকারহীন ‘কোটিপতি’ অর্পিতা মুখোপাধ‌্যায়। গত আগস্টে তিনি কোনও অলংকার না পরেই এসেছিলেন জেলে। তাই তাঁর কাছ থেকে কোনও গয়নাই আর জমা নিতে হয়নি আলিপুর মহিলা জেল কর্তৃপক্ষকে। এদিকে, জেলবন্দি পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়ের আঙুলে আংটি কীভাবে, তা নিয়ে আদালতে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট প্রশ্ন তুলতেই জেলে হিড়িক পড়ে যায় চেন, আংটির মতো গয়না জমা দেওয়ার। এখনও পর্যন্ত কলকাতার প্রেসিডেন্সি জেল ও আলিপুর মহিলা জেলে কয়েক হাজার গয়না জমা পড়েছে বলে খবর। গয়না জমা দেওয়ার পরও কারারক্ষীদের বন্দিদের প্রশ্ন, একসঙ্গে এত চেন, আংটি, বালা জমা পড়ছে। এবার জিনিসগুলি যদি মিশে যায়? জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার সময় যাতে তাঁরা নিজের জিনিসই হাতে পান, সেই অনুরোধই বন্দিরা জানিয়েছেন কারা আধিকারিকদের।

পার্থ চট্টোপাধ‌্যায়ের আংটি-কাণ্ড ঘটার পরই পালটে গিয়েছে পরিস্থিতি। জেলের আধিকারিকরা প্রত্যেক বন্দিকে নির্দেশ দেন, কঠোরভাবে জেল কোড মেনে যাবতীয় গয়না বা বস্তু কর্তৃপক্ষর কাছে জমা করতে। সেইমতো প্রেসিডেন্সি জেলের বন্দিরা তাঁদের গয়না ও কাছে থাকা অন‌্যান‌্য বস্তু জমা দেন। আলিপুর মহিলা জেলেও একইভাবে প্রত্যেক মহিলা বন্দির কাছে গিয়ে যাবতীয় গয়না জমা দিতে বলা হয়। কিন্তু পার্থর ঘনিষ্ঠ অর্পিতা মুখোপাধ‌্যায়ের কাছে যাওয়ার পর তিনি কারা আধিকারিকদের জানিয়ে দেন, তাঁর কাছে কোনও ধরনের গয়না বা অলংকার নেই। তিনি কিছুই পরে জেলে আসেননি। যদিও তা শুনে কিছুটা অবাকই হন কারা আধিকারিকরা। সেখানে ‘কোটিপতি’ অর্পিতাকে অলংকারহীন দেখে আশ্চর্যই হন মহিলা জেলের আধিকারিকরা। তাই অর্পিতার কাছ থেকে কিছুই জমা নেওয়া হয়নি। যদিও মহিলা জেলের অন‌্য বন্দিদের কাছ থেকে প্রচুর গয়না জমা নেওয়া হয়েছে বলে খবর। তবে কারা আধিকারিকরা বন্দিদের নিশ্চিত করেছেন যে, নিয়ম মেনেই প্রত্যেককে গয়না বা মূল‌্যব‌ান বস্তু আলাদাভাবে প‌্যাকেটে বাক্সবন্দি করে সুরক্ষিতভাবে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনে বন্দিদের অনুমতি নিয়ে সেগুলি বাড়ির লোকেরা নিয়ে যেতে পারেন।