সিকিম গেলেই বাবা মন্দির মাস্ট, কিসের টানে পর্যটকরা ছুটে যান এখানে

সিকিমকে ভারতের সুইজারল্যান্ড বলা হয়। সিকিমের চারটি জেলা হল উত্তর সিকিম, দক্ষিণ সিকিম, পূর্ব সিকিম এবং পশ্চিম সিকিম। এর প্রত্যেকটি জেলা প্রকৃতি নিজেকে উজাড় করে সাজিয়েছে। বরফ, কোল্ড ডিজার্ট, ঘন জঙ্গল, ঝরনা, পাহাড়ি নদী, অর্কিড কি নেই সিকিমে? সিকিম বেড়াতে গেলে নাথুলা, ছাঙ্গু লেক, ইউমথাং ভ্যালী, লাচুং, লাচেন, গুরুদংমার লেক, নাথুলা পাস অবশ্য দ্রষ্টব্য স্থান। তবে বেড়ানোর তালিকা থেকে বাদ যায় না বাবা মন্দিরও (Baba Harbhajan Singh Temple)। হাড় কাঁপানো ঠান্ডার মধ্যে, নিঃশ্বাস নিতে সমস্যা হলেও সকলেও এই জায়গায় যেতে ভোলেন না কেউ।

কিছু সৈনিকের মৃত্যু হয় না, এখনও একজন সৈনিক অদৃশ্য হয়েও কর্মরত। এখনও তার নামে বেতন জমা পড়ে, বছরে দুবার ছুটিও পায় সে। জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনের টিকিট কেটে, এক সেনাকে সঙ্গে দিয়ে তাঁর ছবি পাঠানো হয় তার বাড়িতে। কারণ তিনি এখনো কর্তব্যরত। সিকিম বাবা হরভজন সিং এর মন্দির (Baba Harbhajan Singh Temple) আছে দুটি। একটি ওল্ড বাবা মন্দির এবং অপরটি নিউ বাবা মন্দির নামে পরিচিত। নিউ বাবা মন্দির কুপূপ ভ্যালির আগে অবস্থিত।

এই জওয়ান হরভজন সিংহের জন্ম ১৯৪৬ সালের ৩০ অগস্ট। গ্রামের স্কুলে প্রাথমিক পাঠের পরে তিনি পঞ্জাবের ডিএভি হাইস্কুল থেকে পড়াশোনা করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি সেনাবাহিনীর পঞ্জাব রেজিমেন্টে যোগ দেন। তারপর হঠাৎ কর্মরত অবস্থায় মারা যান তিনি। কথিত আছে মৃত্যুর পরেও নাকি নিজের কর্তব্যে অবিচল হরভজন সিংহ। তিনি নাকি শত্রুপক্ষ থেকে আসা আগাম বিপদের ব্যাপারে আগে থেকেই সতর্ক করেন সেনা জওয়ানদের।

তার মৃত্যু সম্পর্কে জানা যায় যে, ১৯৬৮ সালের অক্টোবর প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে হরভজন সিংহ রওনা দিয়েছিলেন আউটপোস্টের পথে। কিন্তু শেষ অবধি তিনি তাঁর গন্তব্যে পৌঁছাননি। টানা তিন-চার দিন ধরে খোঁজ চালানোর পরও হরভজনের কোনও সন্ধান পাওয়া যায়নি। তারপর শোনা যায়, তিনি এক সেনা জওয়ান প্রীতম সিংহের স্বপ্নে দেখা দিয়েছিলেন এবং বলে দিয়েছিলেন তাঁর দেহ কোথায় পাওয়া যাবে। শোনা যায়, হরভজনের বলে দেওয়া জায়গাতেই তাঁর নিথর দেহ পাওয়া যায়। তারপর পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন করা হয়।

বাবা মন্দিরে (Baba Harbhajan Singh Temple) হরভজন সিংহের সামরিক উর্দি, জুতো সযত্নে সংরক্ষণ করা আছে। তাঁর জন্য বিছানাও তৈরি করা রয়েছে। নাথুলায় কর্মরত সেনা জওয়ানদের দাবি, সেখানে মাঝে মাঝে হরভজন সিংহ বিশ্রাম নেন এবং বিছানা এলোমেলো হয়ে যায়। একই জিনিস দেখা যায়, তাঁর জুতোর ক্ষেত্রেও। জুতোতেও মাঝে মাঝে কাদা, ধুলো লেগে থাকে। অথচ হরভজনের কোনও জিনিস একচুল এদিক-ওদিক করা হয় না। এই বিশ্বাস থেকেই ভারতীয় সেনা জওয়ান থেকে শুরু করে পর্যটকেরা সিকিম গেলেই ঘুরে আসেন বাবা মন্দির।