বিনা চিকিত্‍সায় হারিয়ে গিয়েছে বোন, ট্যাক্সি চালিয়ে দাদা গড়লো হাসপাতাল

নিজস্ব প্রতিবেদন : আজ থেকে ১৩ বছর আগে সাধারণ বুকে ব্যথা নিয়ে বিনা চিকিৎসায় প্রাণ হারাতে হয়েছিল বোন মারুফাকে। তখন তিনি ছিলেন মাত্র ১৭ বছর বয়সী। এই ঘটনা তাঁকে গভীরভাবে শোকাহত করে। আর তারপরেই তিনি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হন যাতে আর কেউ যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়, তার জন্য কিছু একটা করবেন।

Source

তিনি আর কেউ না, তিনি বারুইপুরের পুনরি গ্রামের বাসিন্দা সাইদুল লস্কর। বোনের মৃত্যুতে শোকাহত হয়ে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তিনি যে স্বপ্ন দেখেছিলেন তা বাস্তবায়িত করা তাঁর পক্ষে ছিল বড় দুষ্কর। কারণ তাঁর স্বপ্ন ছিল দাতব্য হাসপাতাল গড়ে তোলার। আর এই দাতব্য হাসপাতাল গড়ে তুলতে যে পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন তা তাঁর কাছে ছিল, ছেঁড়া কাঁথায় লাখ টাকার স্বপ্ন দেখার মতই। কারণ পেশায় তিনি একজন সামান্য ট্যাক্সি ড্রাইভার। তবে নিজের অদম্য জেদের জেড়ে এবং দুঃস্থ দরিদ্র মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর স্বদিচ্ছার বলেই সেই ছেঁড়া কাঁথায় লাখ টাকার স্বপ্নকে তিনি বাস্তবায়িত করে ফেলেন। তিল তিল করে জমানো টাকায় নিজের গ্রামে তৈরি করে ফেলেন একটি দাতব্য হাসপাতাল, যেখানে রয়েছে সুবন্দোবস্ত সম্পন্ন ৩০ টি বেড রাখার ব্যবস্থা। যদিও এখনো পর্যন্ত ৩০ টি বেডকে জায়গা করে দিতে পারা যায়নি অর্থের অভাবে, তবে জায়গা পেয়ে গিয়েছে ৬ টি।

Source

আর সাইদুল লস্কর এর এই স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে যিনি সব সময় পাশে থেকেছেন তিনি হলেন তাঁর স্ত্রী। নিজের সমস্ত গয়না বিক্রি করে যতটা সম্ভব স্বামীর পাশে দাঁড়িয়েছেন। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাঁর ট্যাক্সিতে বসা বহু যাত্রীও। তবে চারদিক থেকে সাহায্য এলেও, যেটা সব থেকে বেশি প্রয়োজন তা হল ‘ইচ্ছা’, সেই ইচ্ছাকে ভর করে পথ চলেছেন সাইদুল লস্কর।

সাইদুল লস্করের নিজের গ্রামে তৈরি হাসপাতালের নাম মারুফা স্মৃতি ওয়েলফেয়ার, যে হাসপাতালটি বর্তমানে ওই গ্রামের মানুষের একমাত্র ভরসা। ৩০ টি বেডের ক্ষমতা যুক্ত এই তিনতলা হাসপাতালটি তৈরি করতে খরচা হয় প্রায়ই ৩৬ লক্ষ টাকা। বর্তমানে এখানে ১২ জন চিকিৎসক চিকিৎসা করেন। এখানে ওপিডির খরচ মাত্র ২০ টাকা, ওষুধ দেওয়া হয় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে। এই ওষুধের খরচ জোগাড় করে একটি এনজিও সংস্থা। এই হাসপাতালে এক্সরে এবং ইসিজি মেশিন দান করেছেন কিছু সহৃদয় ব্যক্তি।

Source

সাইদুল লস্করের ইচ্ছাকে বাস্তবায়িত করতে তাঁর স্ত্রী, তাঁর ট্যাক্সির যাত্রীরা ছাড়াও গ্রামের বাসিন্দারা যতটা সম্ভব সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। যার ফলশ্রুতি হিসেবে সাইদুলের ইচ্ছা ও স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়ে গ্রামের মধ্যে গড়ে উঠেছে একটি দাতব্য হাসপাতাল, যা কিনা এলাকার বাসিন্দাদের আপদে-বিপদে একমাত্র ভরসা।