Payment Bank গ্রাহক ও এজেন্টরা সতর্ক হোন! ভুল করলেই টানতে হবে জেলের ঘানি

নিজস্ব প্রতিবেদন : পেমেন্ট ব্যাঙ্কের মতো অনলাইন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে প্রতারিত হওয়া লক্ষ লক্ষ টাকা এদিক থেকে ওদিক হয়ে যাচ্ছে গ্রাহকদের অজান্তেই। আর এমনটা আপনার ক্ষেত্রে হলে আইন অনুসারে ভুগতে হবে আপনাকে, খাটতে হবে জেলের ঘানি। সে আপনি গ্রাহক হোন অথবা এজেন্ট।

বিষয়টি একটু খোলসা করে বলা যাক। অনলাইন প্রতারণার সাথে যুক্ত প্রতারকরা সাধারণ মানুষের কাছে থেকে টাকা প্রতারণা করে সেগুলি পেটিএম, এয়ারটেল পেমেন্ট ব্যাঙ্কের মত বেশ কিছু ভুয়ো অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে হাতিয়ে নিচ্ছেন। যে কারণে আপনি আপনার অজান্তেই সাইবার ক্রাইমের শিকার হচ্ছেন।

আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ‘সেখানে আমি কি করে সাইবার ক্রাইমের শিকার হবো?’ প্রশ্ন জাগাটা স্বাভাবিক। কারণ আপনার পেমেন্ট ব্যাঙ্ক আপনার মোবাইলে সক্রিয় রয়েছে, সেটি অন্য কেউ ব্যবহার করতে পারবে না। আপনি ঠিকই ধরেছেন। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রে আপনি লক্ষ্য করে দেখবেন, কোন এজেন্টের কাছে আপনি আপনার আধার নাম্বার দিয়ে পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খোলাতে গিয়েছেন অথচ এজেন্ট আপনাকে বলছে আপনার আধার কার্ডে আগেই একটি অ্যাকাউন্ট হয়ে আছে অন্য নাম্বারে। অথচ আপনি কিছুই করেননি ইতি পূর্বে। প্রশ্ন এখানেই। তাহলে কিভাবে আপনার আধার কার্ডে অন্য একটি পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট হলো বা চলছে!

এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আমরা দ্বারস্থ হয়েছিলেন বীরভূম সাইবার ক্রাইম সেলস অফিসারের নিকট। তিনি সেই প্রশ্নের উত্তর ঝট করে দিয়েছেন এবং এই প্রাসঙ্গিক সম্প্রতি ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার কথা তুলে ধরেন।

তিনি জানান, “অনেক ক্ষেত্রে লক্ষ্য করা গিয়েছে এজেন্টরা নিজেদের কমিশনের তাগিদে গ্রাহককে না জানিয়েই পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছেন তার আধার কার্ডের মাধ্যমে ফিঙ্গারপ্রিন্টের অপব্যবহার করে। অপব্যবহার বলতে, গ্রাহক যখন দোকানে সিম কার্ড তুলতে গিয়েছেন তখন দুই জায়গায় তিনবার চারবার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নেওয়া হয়েছে এবং মোবাইলে আসা ওটিপি নেওয়া হয়েছে। তারপরেই অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে।”

তিনি এও জানান, “গত রবিবার আমরা এরকম একটি ঘটনায় বীরভূমের সিউড়ি থানার অন্তর্গত কড়িধ্যা গ্রাম পঞ্চায়েতের জগন্নাথ হালদার নামে একজন দোকানদারকে গ্রেপ্তার করেছি। তিনি যা করেছেন তা হলো, গ্রাহককে কোনরকম না জানিয়েই তার ফিঙ্গারপ্রিন্ট নিয়ে একটি পেটিএম পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন ২০১৮ সালে। ইদানিং সেই অ্যাকাউন্ট থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ট্রানজেকশন হয়েছে, যে টাকাগুলি প্রতারিত।”

ঘটনার ফলাফল এটাই, ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে কিছু না জানা ওই গ্রাহক এবং ওই পেটিএম এজেন্টকে।

এক্ষেত্রে আরও প্রাসঙ্গিক, কোন গ্রাহক যদি তার সজ্ঞানেও কোন মোবাইল নাম্বারে অনলাইন পেমেন্ট ব্যাঙ্ক খুলে থাকেন অথচ সেই মোবাইল নাম্বারটি বর্তমানে ব্যবহার করেন না, তাহলে অতি অবশ্যই আপনার পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট নির্দিষ্ট সংস্থার মাধ্যমে ডিএক্টিভেট করান। কেননা, আপনি দীর্ঘদিন ধরে কোন সিম কার্ড ব্যবহার না করে থাকলে সেই সিম কার্ডটি যে সংস্থার, সেই সংস্থা পুনরায় নতুন করে বাজারে ছেড়ে দেয়। নতুন করে বাজারে ছাড়লে নতুন গ্রাহকের নামে সিম কার্ডটি অন্য একজন গ্রাহক পেতে পারেন ঠিকই কিন্তু ওই নাম্বারে থাকা পেমেন্ট ব্যাঙ্ক আপনার নামেই বা আপনার আধারেই দীর্ঘদিন ধরে এক্টিভ থেকে যাবে। যার ফলে ওই নাম্বারের সিম কার্ড কোন দুষ্কৃতীদের হাতে পড়লে অনায়াসে আপনার পেমেন্ট ব্যাঙ্ক তারা ব্যবহার করতে পারবে, ব্যবহার বললে ভুল হবে অপব্যবহার। যার ফলে তারা কোন অন্যায় কাজ করলে সেই অন্যায় কাজের জন্য আপনি ফেঁসে যেতে পারেন। পাশাপাশি ফাঁসতে পারে ওই পেমেন্ট ব্যাঙ্ক সংস্থার এজেন্টও।

সুতরাং এরকম ঘটনার চক্কর এড়াতে গ্রাহকরা আধার নিয়ে এমন কোনো সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকলে অতিসত্বর ওই পেমেন্ট ব্যাঙ্ক সংস্থার হেল্পলাইন নাম্বারে যোগাযোগ করুন।

উল্লেখ্য, রবিবার জগন্নাথ হালদার নামে যে পেটিএম এজেন্টকে পুলিশের তরফ থেকে ধরা হয়েছে তিনি পুলিশের সামনে স্বীকার করে নিয়েছেন, ‘গ্রাহকের সম্মতি ছাড়াই তিনি একটি পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছিলেন।’ এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই এজেন্টকে আজ সিউড়ি আদালতে তোলা হবে।

কিন্তু কোনো গ্রাহক যদি স্বইচ্ছায় পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট করেছেন অথচ যে নাম্বারে অ্যাকাউন্ট করেছেন সেই নাম্বারটি ব্যবহার করেন না তাহলে অতিসত্বর এই নাম্বারে একটিভ থাকা অ্যাকাউন্টটি হেল্পলাইনে যোগাযোগ করে বন্ধ করান। নচেৎ প্রতারিতদের হাতে ওই নাম্বার পড়লে গ্রাহককেও নিজের অজান্তেই ভোগান্তির শিকার হতে হবে বলে মতামত সাইবার ক্রাইম সেল বিশেষজ্ঞদের।

এছাড়াও পেটিএম, এয়ারটেল পেমেন্ট ব্যাঙ্ক বা এরকম যে সমস্ত পেমেন্ট ব্যাঙ্ক সংস্থা রয়েছে তারাও তাদের পেমেন্ট ব্যাঙ্ক সম্পর্কিত বেশ কতকগুলি গাইডলাইন দেওয়া থাকে। সেই সমস্ত গাইডলাইন মেনে চলার পরই পেমেন্ট ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলুন।