আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে বাইডেন, বিপুল লাভ হতে পারে ভারতের

নিজস্ব প্রতিবেদন : আমেরিকান ৪৫ তম প্রেসিডেন্ট রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্র্যাম্পকে হারিয়ে প্রেসিডেন্ট হলেন ডেমোক্র্যাট যো বিডেন। ৭৮ বছর বয়সী জো বিডেন হলেন আমেরিকার ৪৬ তম প্রেসিডেন্ট।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী স্বাগত জানিয়েছেন যো বিডেনকে। জো বিডেনের আমেরিকার রাষ্ট্রপতি হিসাবে নির্বাচন ভারতের পক্ষে ভীষণভাবে আশাপ্রদ। ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট হবার বহু আগে ভারত রাষ্ট্রের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলার আবেদন জানান তিনি।

সেনেটের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের চেয়ারম্যান ও ওবামা প্রশাসনের ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন তাঁরই হাত ধরে কৌশলগতভাবে ধীরে ধীরে ভারত ও আমেরিকার সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এই সম্পর্ক গড়ে তোলার মূল উদ্দেশ্য ছিল এশিয়া জুড়ে চীনের রাজনৈতিক ও আগ্ৰাসনের মোকাবিলায় ভারতকে আমেরিকার সহযোগী করে তোলা। রাশিয়ার সঙ্গে শীতযুদ্ধের অবসানের পর এশিয়া জুড়ে যে নতুন জিও পলিটিক্সের সূত্রপাত হয়েছে তাতে পৃথিবীর দুই বৃহত্তম গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক শক্তিতে বলীয়ান দুই রাষ্ট্রের কৌশলগত সম্পর্ক গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যো বিডেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।

রাষ্ট্রপতি হিসাবেও সেই ধারাবাহিকতায় বজায় রাখবেন বা আমেরিকার স্বার্থে বাধ্য হবেন বলেই রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মত।

আমেরিকার ভাইস প্রেসিডেন্ট হওয়ার তিন বছর আগে ২০০৬ সালে জো বিডেন ভারত-আমেরিকার ভবিষ্যত সম্পর্কে প্রফেটের মতো দৈববাণী করেছিলেন, “আমার স্বপ্ন এটা যে ২০২০ সালে বিশ্বের মধ্যে ভারত ও আমেরিকা হয়ে উঠবে একে অপরের সবচেয়ে কাছের বন্ধু।”

যখন ওবামাও প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ভারতের সঙ্গে ‘ভারত-আমেরিকা নিউক্লিয়ার চুক্তি’ করবেন কিনা ভাবছিলেন তখন জো বিডেন নিজে দায়িত্ব নিয়ে সকল ডেমোক্রাট ও রিপাবলিকানদের সহমত জুটিয়ে ভারতের সঙ্গে নিউক্লিয়ার চুক্তি সম্পন্ন করেন ২০০৮ সালে আমেরিকান কংগ্ৰেসে (আমেরিকান পার্লামেন্টে)।

আমেরিকান রাজনীতিতে তিনি অন্যতম প্রধান ব্যক্তি যিনি ভারতের সঙ্গে বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজিক সম্পর্ক গড়ে তোলার দাবি করে এসেছেন। তাঁর প্রভাবে প্রথমবার আমেরিকা ‘সরকারিভাবে’
ইউনাইটেড নেশন সিকিউরিটি কাউন্সিলে ভারতের সদস্যপদের সংশোধন ও বাড়ানোর ঘোষণা করেন। ভারতের দীর্ঘদিন এই দাবি আমেরিকা মেনে নেয়। আমেরিকা ও ভারতের ইতিহাসে যা প্রথমবার ঘটে। এই ঘটনার পিছনে ছিলেন তৎকালীন ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বিডেন।

এছাড়াও ওবামা-জো বিডেন আমেরিকান প্রশাসন ঘোষণা করেন, ‘ভারত হবে আমেরিকার প্রধান ডিফেন্স পার্টনার। এই সিদ্ধান্ত অ্যাপ্রুভ করে আমেরিকার কংগ্ৰেস। যেখানে বলা হয় আমেরিকা এবার থেকে ভারতকে উন্নত প্রযুক্তি ও অস্ত্র সরবরাহ করবে ভারত ও আমেরিকার ডিফেন্স শক্তিকে মজবুত করার জন্য। আমেরিকান ট্রাডিশনাল জোটের বাইরে ভারতই একমাত্র রাষ্ট্র এই সুবিধা পায়। এর পিছনেও ছিলেন জো বিডেন।

২০১৬ সালে ওবামা প্রশাসনের শেষ লগ্নে আমেরিকা ভারতের সঙ্গে LEMOA চুক্তি করে। গভীরতর যুদ্ধাস্ত্রের আদান-প্রদান, নৌ-যুদ্ধ সহযোগিতা ও এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরের নিজেদের অবস্থান শক্ত করা। এই চুক্তি ভারতের রাজনীতিতে এক অসাধারণ ঘটনা ছিল। প্রধানতম ভূমিকায় ছিলেন জো বিডেন।

এবারে ভোটে যো বিডেন পরিস্কার জানিয়েছেন, “সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কোন আপোষ করা হবে না এশিয়ার বিভিন্ন দেশের সীমান্তগুলোতেও বিশ্বের যেকোন স্থানে।” এই বক্তব্যে প্রমাদ গোনে পাকিস্তান।

প্রেসিডেন্ট হিসাবেও যে জো বিডেন ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর করে তুলবেন তাতে কোন সন্দেহ নেই। কারণ ২০০৬ সালে তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন ২০২০ সালে ভারত হয়ে উঠবে আমেরিকার সবচেয়ে কাছের বন্ধু।