ফোন মারফৎ ব্যাঙ্ক জালিয়াতির চার পাণ্ডা বীরভূম পুলিশের হাতে

হিমাদ্রি মন্ডল : ম্যানেজার সেজে ফোন মারফৎ গ্রাহকদের কাছ থেকে ব্যাঙ্কিং বিভিন্ন তথ্যের পাশাপাশি ওটিপি হাতিয়ে নিয়ে টাকা তোলার ঘটনার উদাহরণ অজস্র। তবে এই সকল ঘটনায় বীরভূম সাইবার সেল তাদের তৎপরতায় বিগত কয়েক বছরে অধিকাংশ ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে গ্রাহকদের থেকে হাতিয়ে নেওয়া মোটা অঙ্কের টাকার বেশিরভাগ অংশ ফিরিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে। তবে এবার বীরভূম পুলিশ দিয়ে সফলতা অর্জন করেছে তা জেলা তথা রাজ্যে নজির।

বীরভূম সাইবার ক্রাইম সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, এ মাসের ১৬ তারিখ বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর গ্রামের মিতা দাস নামে এক গৃহবধূকে ব্যাঙ্ক ম্যানেজার পরিচয় দিয়ে এক ব্যক্তি ফোন করেন। ওই গৃহবধূকে ফোন করা ব্যক্তি কবিতা গ্যাস এজেন্সির ম্যানেজার পরিচয় দেন। তারপর বলেন আপনার এলপিজি গ্যাসের সাথে ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টের লিঙ্ক নেই। যে কারণে আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে গ্যাসের সাবসিডিও ঢুকছে না, আর এই সাবসিডি পুনরায় সক্রিয় করার জন্য আপনার ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট, ব্যাঙ্কের সাথে লিঙ্ক থাকা মোবাইল নাম্বার এবং বেশকিছু তথ্য প্রয়োজন হবে। গ্যাসের সাবসিডির কথা শুনে ওই গৃহবধূ সমস্ত তথ্য ফোন করা ব্যক্তিকে দিয়ে দেন। তারপরেই শুরু হয় ব্যাঙ্ক একাউন্ট থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রক্রিয়া।

ওই গৃহবধূর পশ্চিমবঙ্গ গ্রামীণ ব্যাঙ্কে একাউন্ট রয়েছে, সেই একাউন্টের মোবাইল ব্যাঙ্কিং দুষ্কৃতীরা নিজেদের মোবাইল ডিভাইসে একটিভ করে একের পর এক ওটিপি (যেটিকে তারা রেজিস্ট্রেশন নাম্বার বলে ভুল বুঝিয়ে) হাতিয়ে নিয়ে ৫০০০০ টাকা তুলে নেয়। সেই টাকা আবার দুষ্কৃতীরা বিভিন্ন অনলাইন ভুয়ো একাউন্ট (পেটিএম, এয়ারটেল মানি ইত্যাদি)তে স্থানান্তরিত করে নেয়।

ঘটনার পর ওই গৃহবধূ পাড়া প্রতিবেশীদের এমন কথা জানালে জানতে পারেন ওই গ্রামেরই আরও এক ব্যক্তি অমিতানন্দ চট্টরাজের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। এরপর তারা দেরি না করে গত ২০ তারিখ থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। এরপরই শুরু হয় বীরভূম সাইবার ক্রাইম সেলের আসল কাজ।

বীরভূম সাইবার ক্রাইম সেল তদন্ত শুরু করতেই হাতেনাতে ধরা পড়ে ঘটনার সাথে জড়িত চার পান্ডা। যারা হলেন গোপীনাথ মন্ডল, নির্মল মন্ডল, সেন্টু গোপ এবং মনোজ মণ্ডল। ধৃতদের বাড়ি বীরভূম এবং ঝাড়খন্ড লাগোয়া মেটেলা, খয়েরবন এলাকায়। ধৃতদের কাছ থেকে পাওয়া যায় বেশ কয়েকটি ভুয়ো এটিএম কার্ড এবং মোবাইল ডিভাইস। ধৃতদের আজ সিউড়ি আদালতে তোলা হলে আদালত তাদের চার দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেয়।

কিন্তু প্রশ্ন হলো এত দ্রুত এই সকল জালিয়াতি চক্রের পাণ্ডাদের সাইবার ক্রাইম সেল হাতে পেল কিভাবে?

সে বিষয়ে বীরভূম সাইবার ক্রাইম সেল সূত্রে জানা গিয়েছে, ধৃতদের মোবাইল ডিভাইস আইডি অর্থাৎ আইএমইআই এবং আইপি অ্যাড্রেস সূত্রে ধরা সম্ভব হয়েছে। বীরভূম সাইবার ক্রাইম সেল আরও জানিয়েছে, এই ঘটনায় আরও কয়েকজন পলাতক, তারা শীঘ্রই তাদের হাতে আসতে চলেছে।