লকডাউনে কয়েক’শ মানুষকে জীবনদায়ী ওষুধের জোগান দিয়ে নজির গড়লো বীরভূম পুলিশ

নিজস্ব প্রতিবেদন : করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন জারি হওয়ার পর থেকেই পুলিশ প্রশাসন লকডাউনকে সফল করতে যেমন সক্রিয় হয়ে উঠেছে, ঠিক তেমনি মানুষ যাতে কোনরকম অসুবিধার সম্মুখীন না হন তার জন্য তারা যথাসাধ্য চেষ্টাও চালাচ্ছে। তার প্রমাণ বারংবার মিলছে বীরভূম পুলিশের কর্মকান্ডে। কখনো ‘পুলিশ বন্ধু’র মাধ্যমে জেলার বয়স্ক, একা থাকা নাগরিকদের সহায়তায়, কখনো আবার ‘মাতৃস্নেহ’ প্রকল্পের মাধ্যমে ১০ বছর পর্যন্ত শিশুদের পাশে দাঁড়ানো। আর এবার তারা আরও এক নজির গড়লো লকডাউন চলাকালীন জেলার কয়েক’শ মানুষের হাতে জীবনদায়ী ওষুধ তুলে দিয়ে।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, বীরভূমের রামপুরহাট থানার অন্তর্গত আটলা এলাকার বাসিন্দা উমা বাবু (নাম পরিবর্তিত), বোলপুরের ভুবনডাঙ্গা সুকান্ত পল্লীর বাসিন্দা রাম বাবু (নাম পরিবর্তিত), ময়ূরেশ্বরের জিতেন বাবু (নাম পরিবর্তিত), এরকম জেলার কয়েক’শ মানুষের হাতে লকডাউন চলাকালীন যখন সমস্ত কিছু স্তব্ধ তখন জীবনদায়ী ওষুধের যোগান দিয়েছে বীরভূম পুলিশ। শুধু জেলা থেকে ওষুধ এনে নয়, কলকাতা বা অন্যান্য জায়গা থেকেও ওষুধ এনে।

উদাহরণস্বরূপ পুলিশের উর্দ্ধতন কর্তারা জানিয়েছেন, “উমা বাবু দীর্ঘদিন ধরেই এমন এক রোগে ভুগছেন যার জন্য নিয়মমাফিক প্রতিষেধক প্রয়োজন। কিন্তু নিরাপত্তাজনিত বিধিনিষেধের কারণে সেই প্রয়োজনীয় ওষুধ শেষ হয়ে গেলেও তিনি জোগাড় করতে পারছিলেন না। উল্লেখ্য বিষয় হলো, ওই ওষুধ কেনার জন্য প্রেসক্রিপশন সহ উল্লেখিত ব্যক্তির উপস্থিতি অপরিহার্য। যা বর্তমান পরিস্থিতিতে উমা বাবুর পক্ষে করা সম্ভব নয়। এরপর আমরা উনার কাছ থেকে ঘটনার বিষয়ে জানতে পারি। তারপর আমরা সক্রিয় হয়ে ওই ব্যক্তিকে আশ্বাস দি আমরা অবশ্যই ওষুধের যোগান দেব।এরপর পুলিশের তরফ থেকে উমা বাবুর পরিচয়পত্র সহ উনার সম্মতি দানপত্র তৈরি করে পরদিন সকালে পুলিশের একটি দল কলকাতায় পৌঁছে যায়। তারপর ওষুধটি সংগ্রহ করে ২৪ ঘন্টা অতিক্রম হওয়ার আগেই উমা বাবুর কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। একইভাবে রাম বাবু, জিতেন বাবু এরকম কয়েকশো মানুষকে লকডাউন চলাকালীন ওষুধের যোগান দিয়েছে বীরভূম পুলিশ।”

পুলিশের তরফ থেকে আরও জানানো হয়েছে, “এমন ঘটনাও ঘটেছে, কোন ব্যক্তি তার আত্মীয়ের মাধ্যমে কলকাতা অথবা অন্যত্র ওষুধ সংগ্রহ করে রেখে দিয়েছেন। কিন্তু সেই ওষুধ সঠিক জায়গায় পৌঁছানোর মতো উপায় বা মাধ্যম নেই। সেসব ক্ষেত্রেও বীরভূম পুলিশ যথাসাধ্য তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে এবং তাদের সামনে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। শুধু বিগত কয়েকদিন নয় আগামী দিনেও বীরভূম পুলিশ এইভাবে সাধারণ মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করবে।”

প্রসঙ্গত, বীরভূম পুলিশের তরফ থেকে লকডাউন চলাকালীন জেলার মানুষদের যাতে কোনো রকম অসুবিধা না হয় তার জন্য একটি কন্ট্রোলরুম চালু করেছে। কন্ট্রোল রুম চালু করার পাশাপাশি দুটি ফোন নম্বর দেওয়া হয়েছে সাধারণ মানুষদের যোগাযোগ করার জন্য। যে দুটি নম্বর হলো ৭৬০২৬৭৬৫০০ এবং ৭৬০২৬৭৬৭৭৭। পুলিশের তরফ থেকে জানানো হয়েছে, এই দুটি নম্বরে যোগাযোগ করে জেলার বাসিন্দারা সহযোগিতা পেতে পারেন, যেমন পুলিশ বন্ধু, মাতৃস্নেহ প্রকল্পের সুবিধা, অসংগঠিত কর্মক্ষেত্রে বেতন অথবা কাজ নিয়ে সমস্যা অথবা অন্যান্য সাধারণ সমস্যার ক্ষেত্রেও।