প্লাস্টিক থেকে পেট্রোল-গ্যাস, চমকপ্রদ আবিষ্কার বীরভূমের গবেষকের

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বজুড়ে যেমন প্লাস্টিক একটি বড় সমস্যা ঠিক তেমনই ভারতের বাজারে বর্তমানে রান্নার গ্যাস থেকে পেট্রোল-ডিজেলের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এই সকল পণ্যের দাম প্রতিনিয়ত ঊর্ধ্বমুখী হয় আমজনতা, বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলির পরিস্থিতি দিন দিন শোচনীয় হয়ে পড়ছে। তবে এমন পরিস্থিতিতে বীরভূমের এক গবেষক তার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে এই দুটি সমস্যার সমাধান করে ফেলেছেন।

বীরভূমের শান্তিনিকেতনের গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তী বিশ্বভারতীতে পড়াশোনা করে তৈল পরিশোধন প্লান্টের কর্মী হিসেবে নিযুক্ত হন। তৈল পরিশোধন প্লান্টের কর্মী হওয়ার দরুণ প্লাস্টিক, জ্বালানি সংক্রান্ত অভিজ্ঞতা তার রয়েছে। তিনি কর্মসূত্রে ভারতের বিভিন্ন জায়গা ছাড়াও বিদেশেও গিয়েছেন। এমত অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে একদিন বাড়ি ফেরার পথে এক জায়গায় স্তুপ হয়ে প্লাস্টিক পড়ে থাকতে দেখা যায়। তখন তার স্ত্রী তাকে বলেন, ‘তোমরা তো এই সকল কাজেই যুক্ত রয়েছ। তাহলে এই প্লাস্টিক নিয়ে কিছু ভাবছো না কেন’।

স্ত্রীর এই প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে পুণ্যব্রত বাবু ভাবতে শুরু করেন, তাইতো যেহেতু প্লাস্টিক ইথিলিন বা প্রোপেলিন নামক রাসায়নিক পদার্থ থেকে তৈরি হয়, তাই এই নিয়ে কিছু একটা করা যেতে পারে। এর পরেই তিনি বাড়িতে গবেষণা শুরু করেন। তারপর তিনি দীর্ঘ ১০ থেকে ১২ বছর ধরে গবেষণা করার পর ২০১৮ সালে এমন একটি যন্ত্র তৈরি করতে সক্ষম হন যেটি প্লাস্টিক কে পুনরায় পেট্রোল ও গ্যাসে রূপান্তরিত করতে পারে। বর্তমানে এই যন্ত্রটি ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইট পেয়েছে।

প্লাস্টিক তৈরির সময় ইথিলিন নামক গ্যাসকে পলিমারাইজ অর্থাৎ অনেক ইথিলিন অনু একসঙ্গে জোড়া লেগে লম্বা মালার মতো তৈরি হয়। এই যন্ত্রটির কাজ হলো উল্টো। মালার মতো জোড়া লেগে থাকা ইথিলিন অণুগুলিকে উত্তাপের মাধ্যমে ভেঙ্গে দেয়। তবে সেই টুকরোগুলি গ্যাস না তরল হবে তা নির্ভর করবে মালাতে কতগুলি অনু রয়েছে তার উপর। যন্ত্রটি সাহায্যে প্লাস্টিকের অণুগুলিকে আলাদা করে শুদ্ধিকরণ এবং শীতলীকরণের মাধ্যমেই গ্যাস এবং তরলে রূপান্তরিত করা হচ্ছে।

গবেষক পুণ্যব্রত চক্রবর্তীর কথা অনুযায়ী, ১ কেজি ভালো মানের প্লাস্টিক থেকে এই মেশিনের মাধ্যমে ৩৬০ গ্রাম গ্যাস এবং ৫৫০ থেকে ৬০০ মিলি লিটার পেট্রোল পাওয়া যেতে পারে। এই পেট্রোল দিয়ে চায়না ভ্যান, ডিজি জেনারেটর চালানো যাবে সহজেই। পাশাপাশি লো কম্প্রেসার রয়েছে এমন যন্ত্র চালানো যাবে। আর গ্যাস দিয়ে যেকোনো ধরনের কাজ করা যেতে পারে।