চাষীর ছেলে, টিউশন পড়িয়ে পড়াশুনা ; আজ ইনার নির্দেশেই উড়ে গেল চন্দ্রযান-২

অবশেষে চাঁদের পথে পাড়ি জমাল চন্দ্রযান-২। আজ দুপুর ২টো ৪৩ মিনিটে শ্রীহরিকোটার সতীশ ধাওয়ান মহাকাশ কেন্দ্র থেকে চন্দ্রযান-২-কে নিয়ে উড়ে গেল জিওসিঙ্ক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভিহেকল। চন্দ্রযান-২ এ থাকছে ১৩টি কৃত্রিম উপগ্রহ। ওজন ৩.৮ টন, আটখানা হাতির সমান। প্রায় ৪ টন ওজনের চন্দ্রযান-২ কে মহাকাশে পাঠিয়ে দিল ইসরোর শক্তিশালী রকেট ‘জিওসিনক্রোনাস স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (জিএসএলভি) মার্ক-৩’। কিন্তু জানেন কি ভারতের এই চন্দ্রাভিযানে জড়িয়ে আছে একজন বাঙালির নাম?

Source

এই অভিযানে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে রয়েছেন হুগলির গুড়াপের খাজুরদহ-মিল্কি পঞ্চায়েতের শিবপুর গ্রামের চন্দ্রকান্ত কুমার৷ চন্দ্রকান্ত ইসরোর ডেপুটি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর৷ তিনিই বানিয়েছেন এই অভিযানের আটটি অ্যান্টেনা৷ তাঁর তৈরি আটটি অ্যান্টেনার উপর ভরসা করেই চাঁদে পাড়ি দিতে চলেছে ভারতের চন্দ্রযান-২৷

Source

কিন্তু মহাকাশযানে অ্যান্টেনার কাজ কি? ইসরোর স্টেশনের সঙ্গে মহাকাশে থাকা যানগুলির প্রতি মুহূর্তে কথা বলার প্রয়োজন হয়। শুনে দেখতে হয় মহাকাশযানগুলি কী জবাব দিচ্ছে। চাঁদে পাড়ি দিতে গিয়ে যদি মহাকাশযান বিগড়ে যায় তাহলে এই অ্যান্টেনার মধ্যমেই গ্রাউন্ড স্টেশন জানতে পারে সবকিছু। এই অ্যান্টেনা ছাড়া মহাকাশে ওই যানগুলি যেমন দিশাহারা, তেমনই মহাকাশযানের অ্যান্টেনা বিগড়ে গেলে বিপদে পড়ে যায় গ্রাউন্ড স্টেশন।

২০০১ সালে যোগ দিয়েছিলেন ইসরোতে৷ এরপর কেটে গেছে ১৮ বছর৷ তাঁর নাম জড়িয়ে গেছে ইসরোর একাধিক অভিযানের সঙ্গে৷ ছেলের সাফল্যে গর্বিত বাবা, মা। বাবা মধুসূদনবাবু এখনও চাষ করেন এবং অবসর সময়ে হোমিওপ্যাথি নিয়ে পড়াশোনা করেন। মা অসীমাদেবী ঘর-গোয়াল সামলান। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত মধুসূদনবাবুই বড় ছেলেকে পড়িয়েছেন। উচ্চশিক্ষার খরচ চালাতে টিউশন করেছে‌ন চন্দ্রকান্ত। মধুসূদনবাবুর বলেন, ‘‘ গয়না বন্ধক দিয়ে ছেলের কলেজের বেতন দিয়েছি। সব কষ্ট ছেলেরা আজ সুদে-আসলে পূরণ করে দিয়েছে। দুই ছেলের নামে চাঁদ জুড়েছিলাম কিছু না ভেবেই। কিন্তু বড় ছেলে সেই চন্দ্রযানে কাজ করছে, আমরা খুব খুশি।’’

Source

চন্দ্রকান্তের ভাই শশীকান্তও ইসরো তে কাজ করেন৷ তিনি কাজ করছেন মাইক্রো ওয়েব নিয়ে৷ ৪৬ বছর বয়সী চন্দ্রকান্ত বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশে থাকেন৷ বছরে দুবার আসেন গ্রামের বাড়িতে৷ হুগলি গুড়াপের শিবপুরেই তাঁর পড়াশোনা৷ শিবপুরের খাজুরদহ উচ্চ বিদ্যা‌লয় থেকে মাধ্যমিক পাস করেন তিনি৷ ধনিয়াখালি মহামায়া বিদ্যামন্দির থেকে উচ্চমাধ্যমিক পাস করেন৷ এরপর বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশন কলেজ থেকে বিএসসি পাস করেন৷ রাজাবাজার সায়েন্স কলেজ থেকে রেডিয়ো ফিজিক্স অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স নিয়ে এএসসি ও এমটেক করেন৷ পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট করেন তিনি৷ এরপরই বেশ কয়েকটি চাকরি ছেড়ে ২০০১ সালে ইসরোতে যোগ দেন৷