ভারতের ৫ বিজ্ঞানী যাঁদের জন্যই সম্ভব হয়েছে চন্দ্রযান অভিযান

নিজস্ব প্রতিবেদন : শুক্রবার গভীর রাতে চাঁদের মাটি থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ইসরোর। চাঁদে অবতরণের ভারতের প্রথম প্রয়াস হয়তো ব্যর্থ হয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। হতাশ ইসরোর বিজ্ঞানীরা, তবে এখনো পর্যন্ত সব কিছু ছেড়ে দিতে চান না তাঁরা। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান পাঠানো হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য অবশ্যই সফল হয়েছে। চন্দ্রযানের অরবিটার এখনো কাজ করছে। কিছুটা দূর থেকে চাঁদকে সে এখনো পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। এই অরবিটার চাঁদের অনেক ছবি তুলে এখনও ইসরোকে পাঠাতে পারে। এমনকি ল্যান্ডার বিক্রমের ছবি তুলেও তার বর্তমান অবস্থার ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের জানাতে পারে সে।

গত এক বছর ধরে চন্দ্রযান-২ অভিযানকে সফল করতে দিনরাত পরিশ্রম করেছেন ভারতীয় বিজ্ঞানীরা। অভিযান সফল না হলেও গোটা দেশ দাঁড়িয়েছে ইসরোর পাশে। কিন্তু জানেন কি এই চন্দ্রযান-২ অভিযানের পেছনে কোন কোন বিজ্ঞানীরা ছিলেন? কাদের নিরলস প্রচেষ্টায় আমরা ভারতীয়রা আজ গর্ব করছি? আসুন চিনে নিন ভারতের সেই বিজ্ঞানীদের..

মেলস্বামী অন্নদুরাই

পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত এই বিজ্ঞানী তামিলনাড়ু স্টেট কাউন্সিল ফর সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির ভাইস প্রেসিডেন্ট। তাঁকে “মুন ম্যান” নামেও ডাকা হয়। ১৯৮২ সালে ইসরোতে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। চন্দ্রযান-১ এর প্রোগ্রাম ডিরেক্টরও ছিলেন তিনি। এছাড়াও ইসরো পরিচালিত অনেক উপগ্রহের মিশন ডিরেক্টর ছিলেন তিনি।

রিতু করিধাল

“রকেট ওমেন অফ ইন্ডিয়া” নামে পরিচিত রিতু করিধাল চন্দ্রযান-২ এর মিশন ডিরেক্টর। ১৯৯৭ সালের নভেম্বরে একজন তরুন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে ইসরোতে যোগদান করেন। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য “ইয়ং সাইন্টিস্ট আওয়ার্ড”ও পেয়েছেন তিনি। মঙ্গল অরবিটার মিশনের ডেপুটি অপারেশন ডিরেক্টর তিনি।

লখনৌয়ের এক মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান রিতু লখনৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক হন। গেট পরীক্ষায় ভালো ফল করার পর ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ সায়েন্সে পড়ার সুযোগ পান তিনি। সেখান থেকে এয়ারস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে মাস্টার্স করে ইসরোতে চাকরির জন্য আবেদন করেন তিনি। চন্দ্রযান-১ এর মূল দলে গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন ঋতুকাল শ্রীবাস্তব। ২০০৭ সালে এপিজে আব্দুল কালামের হাত থেকে পেয়েছেন ইসরোর সেরা নবীন বিজ্ঞানীর পুরস্কার।

মুথায়া বনিতা

চন্দ্রযান-২ অভিযানের প্রকল্প পরিচালক হলেন এম বনিতা। ২০০৬ সালে অ্যাস্ট্রোনমিক্যাল সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ার সেরা মহিলা বিজ্ঞানী পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। চন্দ্রযান-২ অভিযানের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে হার্ডওয়ার ডেভেলপমেন্ট এবং অন্যান্য বিষয়ে নেতৃত্ব দেওয়ার কাজ ছিল তার হাতে। এম বনিথা হলেন প্রথম মহিলা যিনি ইসরোতে প্রকল্প পরিচালক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন।

চন্দ্রকান্ত কুমার

চন্দ্রযান-২ অভিযানের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন হুগলির গুড়াপের খাজুরাহো মিল্কি পঞ্চায়েতের শিবপুর গ্রামের চন্দ্রকান্ত কুমার। চন্দ্রকান্ত ইসরোর ডেপুটি প্রজেক্ট ডিরেক্টর। তিনিই বানিয়েছেন এই অভিযানের আটটি অ্যান্টেনা। তাঁর বানানো আটটি অ্যান্টেনার উপর ভরসা করেই চাঁদে পাড়ি দিয়েছে ভারতের চন্দ্রযান-২।  ২০০১ সালে তিনি ইসরোতে যোগদান করেন এবং এখন ইউ.আর.রা.ও. স্পেস সেন্টারের বৈদ্যুতিন চৌম্বক বিভাগের প্রধান তিনি।

অমিতাভও সিং

অমিতাভ চন্দ্রযান-২ এর উপপ্রকল্প পরিচালক এবং  ল্যান্ডার ও রোভার সম্পর্কিত অপটিকাল পেলোড ডেটা প্রসেসিং এবং অনবোর্ড অ্যালগরিদম পরিচালনার দায়িত্ব ছিল তাঁর হাতে।

ইসরোর এই টিমকে ধন্যবাদ জানাই। একমাত্র তাদের জন্যই ভারতের মহাকাশ অনুসন্ধান এক নতুন উচ্চতায় পৌঁছাতে পেরেছে। আমরা ভারতীয়রা এই বিজ্ঞানীদের জন্য গর্বিত।