নিজস্ব প্রতিবেদন : পঞ্চম দফার লকডাউন জারি হয়েছে দেশে। এই পর্যায়ের লকডাউনে দেশকে আনলক করা হচ্ছে, নাম দেওয়া হয়েছে ‘Unlock Phase 1’। অফিস কাছারি সব খুলতে শুরু করেছে একটু একটু করে। আবার আগের মতোই হয়ে যাবে আমাদের চারপাশের চেহারা। শুধু সঙ্গী হবে একটা নিত্য ভয়-করোনা সংক্রমণের ভয়! করোনার এই ভয় নিয়েই আমাদের স্কুল কলেজ অফিসে যেতে হবে, যেতে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে।
সোমবারের শেষ রিপোর্ট অনুযায়ী ভারতে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা ১ লক্ষ ৯০ হাজার ৫৩৫ জন। দিনকে দিন সংক্রমণ বেড়েই চলেছে। অন্যদিকে লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে ভারতের অর্থনীতি মুখ থুবড়ে পড়েছে। অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে সরকার এখন লকডাউন ধাপে ধাপে তুলে দেওয়ার পথে হাঁটছেন।
আর এমত অবস্থায় যখন দেশের প্রতিটি কোনায় কোনায় ছড়িয়ে পড়েছে করোনার সংক্রমণ তখন বাইরে বেরোতে হলে আমাদেরকে একটু বাড়তি সতর্কতা তো অবলম্বন করতেই হবে।
কী কী সর্তকতা মেনে বাইরে বেরোবেন?
১) কাজ থেকে বাড়ি: কাজ শেষ হয়ে গেলে আড্ডা দিতে যাবেন না। সোজা বাড়ি ফিরে যান। আপনি হয়তো ভাবছেন মাস্ক তো পড়ে আছি কি হবে? কিন্তু ভুলে যাবেন না আমার আপনার চারিপাশ এই লক্ষণীয় অনেক সংক্রমিতই ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
২) হাত ধোওয়ার অভ্যাস : এতদিন ধরে তৈরি করা হাত ধোয়ার অভ্যাস লকডাউন উঠে গেলেও বজায় রাখুন। বাইরে থেকে ঘরে এসে জামা কাপড় বদলে নিন। সাবান দিয়ে হাত পা কচলে কচলে ধুয়ে নিন। বাড়িতে থাকলেও ঘনঘন হাত ধুয়ে নিন।
৩) মাস্ক ছাড়া ভুলেও বাইরে নয় : মাস্ক না পড়ে খবরদার বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। অফিসে বা কাজের জায়গায় মাস্ক পরেই বসে থাকুন। মাস্ক পড়েই কথাবার্তা বলুন, সবকিছু করুন। দরকার হলে জোরে কথা বলুন তবু মুখের থেকে মাস্ক সরাবেন না।
৪) সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখুন : এই সময় আপনাকে ভিড় এড়াতে হবে। জনবহুল এলাকা এড়াতে হবে। আড্ডা দেওয়া ছাড়তে হবে। ফাঁকা পরিবহন না পেলে কিছুটা সময় অপেক্ষা করতে হবে।
৫) কোন কিছু শেয়ার করবেন না : অফিস কাছারি বা অন্য কোথাও একে অন্যের টিফিন ভাগ করে বা জল ভাগ করে খাবেন না।
৬) স্যানিটাইজ : নিজস্ব গাড়ি, বাইক, মোবাইল ফোন প্রতিদিন স্যানিটাইজ করুন। অফিসের গাড়িতে যাতায়াত করলে গাড়ির হাতল ও সিট স্যানিটাইজ করুন।
৭) চোখ-মুখ নাকে হাত দেবেন না : চোখ, মুখ, নাকে হাত দেবেন না। যদি ভুলেও চোখ-মুখ রাখে হাত দিয়ে ফেলেন তাহলে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নিন।
৮) রেস্তোরাঁ, পাব, পার্টিকে না বলুন : এই সময় রেস্তোরাঁ, পাব, পার্টি কোথাও যাবেন না ভুলেও। যদি বাঁচতে চান এখন এগুলি এড়িয়ে চলুন।
৯) ইচ্ছাকৃত ঘরবন্দি : লকডাউন উঠে গেলেই ভ্রমণে চলে যাবেন না। মনে রাখবেন আমাদের চারপাশে কিন্তু লক্ষণহীন সংক্রমিতরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাই যতদিন না পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে যতদিন না এই করোনা একেবারে নির্মূল হচ্ছে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ির বাইরে বেরোবেন না। বিদেশ ভ্রমণ, রাজ্য ভ্রমণ সবকিছুকে ক্যানসেল করুন।
১০) বারংবার গরম জল : অফিসে গেলেও একটা ফ্লাক্সে গরম জল নিয়ে যান। বিশেষজ্ঞদের মত অনুযায়ী বারবার একটু করে গরম জল খেলে সংক্রমণ কিছুটা প্রতিহত হয়।
১১) আদা : অফিসে বেরোনোর সময় কয়েক কুচি আদা মুখে নিয়ে নিন। আদার অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ঠেকাতে সাহায্য করে।
১২) ঘড়ি ও আংটি ব্যবহার করবেন না : এই সময় ঘড়ি ও আংটি ব্যবহার করবেন না। এর ফলে হাতে জার্ম থাকতে পারে। এমনকি ঘড়ি আংটিতে জার্ম থাকতে পারে।
১৩) মোবাইল রোজ পরিষ্কার : প্রতিদিন মোবাইল স্যানিটাইজ করুন। বাইরে খুব বেশি মোবাইল ঘাঁটবেন না। মোবাইলের কভার ও রোজ পরিষ্কার করবেন।
১৪) দুটো করে মাস্ক: ব্যাগে দুটো করে মাস্ক রাখুন। একটি মাস্ক ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে অপরটি পড়ে নিন, মাস্ক ছাড়া থাকবেন না।
১৫) জুতোর সাথে মজা পরুন : জুতার সাথে মোজা পড়লে বাড়ি এসে আপনি জুতো মোজা পরিষ্কার করে বাথরুমে ঢুকে যান। জুতো স্যানিটাইজ করে ধুয়ে নিন রোদে শুকোতে পারলে আরও ভালো হয়। রোদে না শুকোলে বাড়ির ভেতরের বাতাসে শুকিয়ে নিতে পারেন।
১৬) বাজারের ব্যাগ পরিষ্কার করুন : বাজারের ব্যাগ অথবা অফিসের ব্যাগ সাবান জল দিয়ে বা কীটনাশক মেশানো জল দিয়ে ধুয়ে নিন। অবশ্যই বাজারের ব্যাগ কাচতে হবে। অসতর্ক মনে হবেন না।
মোটের উপর মাস্ক, স্যানিটাইজার, সামাজিক দূরত্ব তিনটিকে অবশ্যই জীবনের সঙ্গী করে নিন। আপনার ক্ষণিকের অবহেলা আপনার পরিবারের জন্য মারাত্মক হয়ে উঠবে মুহূর্তের মধ্যেই। আপনারই বয়ে আনার সংক্রামক আপনারই অজান্তে আপনার শিশুকে সংক্রামিত করবে। তাই দয়া করে সচেতন হোন। অবহেলা করবেন না। যাবতীয় স্বাস্থ্যবিধি ও নির্দেশিকা মেনে চলুন। ভাল থাকুন। সুস্থ থাকুন।