আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ঘূর্ণিঝড় যশ, জেনে নিন কি করবেন, কি করবেন না

নিজস্ব প্রতিবেদন : বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগর তৈরি হয়েছে একটি ঘূর্ণিঝড়। অফিসের পূর্বাভাস এই ঘূর্ণিঝড় আগামী ২৬ তারিখ পশ্চিমবঙ্গ ও ওড়িশা উপকূলে আছড়ে পড়বে। ঘূর্ণিঝড়ের গতি প্রকৃতি এবং অন্যান্য লক্ষণ দেখে বিপুল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। যে কারণে এই ক্ষয়ক্ষতি থেকে রক্ষা পেতে হাওয়া অফিসের তরফ থেকে এই ঘূর্ণিঝড় চলাকালীন কি কি করণীয় এবং কি কি নয় তার তালিকা প্রকাশ করা হলো।

সাইক্লোনে কি করণীয় কি করবেন

১) কোনো ব্যক্তির টালির বাড়ি থাকলে হাল্কা ভাবে লাগানো টালি সিমেন্ট দিয়ে শক্ত ভাবে লাগিয়ে নিতে হবে। ঘরের জানালা দরজা ভাঙা থাকলে সারিয়ে নিতে হবে।

২) ঘরের চারিদিকে থাকা মরা ও শুকিয়ে যাওয়া গাছের ডাল বা গাছ সরিয়ে ফেলতে হবে।

৩) সাইনবোর্ড, টিনের শিট, কাঠের গুড়ি, ময়লা ফেলার ধাতব পাত্র এবং আলগা ইঁটের মত জিনিষপত্র থাকলে আগেই ভাল ভাবে বেঁধে দিন।

৪) বাড়ির জানলা কাঁচের হলে পিছনে শক্ত কাঠের বোর্ড আটকে দিন। অথবা কাঁচের জানালার সাথে কাগজের শিট আঁঠা দিয়ে আটকে দিন। কারণ কোনো কারণবশত কাঁচ ভাঙলেও তা অন্যদিকে ছিটকে পড়বে না বা কেউ আহত হবেন না।

৫) লণ্ঠনে যথেষ্ট পরিমাণে কেরোসিন ভরে রাখুন। হাতের কাছে টর্চ তৈরী রাখুন।

৬) পরিত্যক্ত ও জীর্ণ বাড়ি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভেঙে ফেলুন।

৭) রেডিও এবং ট্রানজিস্টার থাকলে তা যেন সক্রিয় হয় সেই অবস্থায় রাখুন। অতিরিক্ত ব্যাটারির যোগান রাখুন। নিয়মিত রেডিওতে নিকটবর্তী অল ইন্ডিয়া রেডিওর আবহাওয়ার সতর্কীকরণ বুলেটিন ও উপদেশ শুনুন এবং তা অন্যকে পৌঁছে দিন। কেবলমাত্র সরকারী দপ্তর থেকে পাওয়া খবরই প্রচার করুন।

৮) সমুদ্রতটবর্তী নিচু জায়গা বা অন্য কোন নিচু জায়গা যেগুলি জলোচ্ছাসে প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে সেই সব জায়গা তাড়াতাড়ি পরিত্যাগ করুন। দেরী করা যাবে না।

৯) যদি আপনার বাড়ি নিচু অঞ্চলে না হয় আর শক্ত-পোক্ত হয়, তবে আপনার বাড়ি এমন অবস্থায় নিরাপদ। কিন্তু প্রয়োজনে সরকার উপদেশ মেনে দেরী না করে আপনার ঘরও পরিত্যাগ করুন।

১০) অতিরিক্ত খাবার বিশেষ করে শুকনো খাবার এবং অল্প প্রস্তুতিতে তৈরী করা যায় এমন খাবার সঞ্চয় করে রাখুন।

১১) কেরোসিনের টিন, ধাতব পাত্র, কৃষিকার্যে ব্যবহৃত যন্ত্রপাতি, রাস্তায় ব্যবহৃত ধাতব পাত নির্মীত রোড সাইন ইত্যাদি জিনিসপত্র প্রবল ঝড়ে জীবন নিয়ে খেলা করতে পারে। এগুলিকে আগে থেকে খুলে কোন বদ্ধ ঘরে বন্ধ রেখে দিন।

১২) যেদিক থেকে প্রবল হাওয়া বইছে ঠিক তার উল্টো দিকের জানলা বা দরজা খুলে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।

১৩) শিশু ও বয়স্কদের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র এবং খাদ্যের যোগান রাখুন।

১৪) ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্রবিন্দু আপনার এলাকার উপর দিয়ে যায় তাহলে কেন্দ্রবিন্দু চলে যাওয়ার আধ ঘন্টা বা তারও বেশী পর্যন্ত ঝড়-বৃষ্টি বন্ধ থাকবে। কিন্তু এই সময়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে যথা সম্ভব সতর্ক থাকুন ও আপাতকালিন মেরামত করে নিন। মনে রাখবেন অচিরেই উল্টো দিক থেকে আরও ভয়ঙ্কর ঝড় আসবে।

১৫) নিজেকে ঘূর্ণিঝড়ের সময় শান্ত রাখতে হবে। আপনার বিপর্যয় মোকাবিলার ক্ষমতা অন্যকে সাহস ও সাহায্য দেবে।

১৬) যতক্ষণ না পর্যন্ত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ থেকে আশ্বস্ত হচ্ছেন ততক্ষণ ঘরে না ফিরে নিরাপদ আশ্রয়েই থাকুন।

১৭) লাইট পোস্ট থেকে ঝুলন্ত তার এড়িয়ে চলুন। সাহায্যের প্রয়োজন ব্যতিত আক্রান্ত এলাকায় এড়িয়ে চলতে হবে।

১৮) লরি, বাস সহ অন্যান্য যানবাহন সাবধানে চালাতে হবে।

১৯) বাসস্থানের আশেপাশে ধ্বংসাবশেষ পরে থাকলে তা ঝড়ের আগে এবং পরে পরিষ্কার করতে ফেলতে হবে।

কি করবেন না

১) কোনোরকম গুজবে কান দিয়ে ভুল পথে পরিচালিত হবেন না।

২) উদ্ধারকারী দল না বললে নিরাপদ আশ্রয় ছাড়বেন না।

৩) ঘূর্ণিঝড় বয়ে যাওয়ার সময় ক্ষণিকের নিরবতার সময়ও ভুল করে নিরাপদ আশ্রয় ছাড়বেন না।

৪) লাইটপোষ্ট থেকে ঝুলন্ত তার স্পর্শ করবেন না। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হতে পারেন।