কোন পুজোর কি থিম? কার বাজেট কত? সিউড়ির সেরা পুজোগুলোর খুঁটিনাটি

দীপক কুমার দাস : এবারও সিউড়ির পুজোতে থিমের ছড়াছড়ি। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক কোথায় কি হচ্ছে।

চৌরঙ্গী: সিউড়ির দত্ত পুকুরের চৌরঙ্গী ক্লাবের এবারের থিম – মানবিকতায় বাংলা। এ পুজোর থিম ভাবনায় রয়েছেন রবিউল ইসলাম। প্রবেশপথে থাকবে সাতরঙা সাতটি কাপড়ে বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতীক। সাম্প্রদায়িক হানাহানির ছবি ফুটে উঠবে মন্ডপ জুড়ে। মন্ডপের ভিতরের মাঝখানে থাকছে অক্টোপাস, যার প্রতিটি বাহুতেও ধর্মীয় চিহ্ন থাকবে। দেবীর হাতে থাকবে না কোন অস্ত্র। দেবীর পায়ের কাছে বহু মানুষের হাত যেটা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির বার্তা বহন করবে। আর মন্ডপের দেওয়াল জুড়ে থাকবে অনেক রাখি। সাম্প্রদায়িক হানাহানি ভুলে সম্প্রীতির বার্তা দিতেই এই ক্লাবের এই থিম। বাজেট প্রায় ১১ লক্ষ টাকা।

যাত্রিক : সিউড়ি পুলিশ লাইনের যাত্রিক ক্লাবের এবারের থিম ভাবনায় বৈষ্ণোদেবীর মন্দির। পাহাড়ের চূড়ায় মন্দির। আর দেবীর অবস্থান ঐ মন্দিরের গর্ভদেশের এক গুহায়। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে দূর্গম পথে। গুহার ভিতরে ভিতর দিয়ে প্রবেশ করতে হবে প্রতিমার কাছে। থিম ভাবনায় রয়েছেন পুরন্দরপুরের শিল্পী তন্ময় মন্ডল। থিম ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। চন্দননগরের আলোকসজ্জা থাকছে। এই পূজোর বাজেট প্রায় পাঁচ লক্ষ টাকা।

১-এর পল্লী : সিউড়ি বড়বাগানের ১-এর পল্লীর এবারের মন্ডপ তৈরি হচ্ছে একটা ধানের গোলার আদলে। প্রবেশপথে থাকবে নানা ধরনের পুতুল। সঙ্গে হারিয়ে যেতে বসা পুতুল নাচকে দর্শকদের সামনে তুলে ধরতে সন্ধ্যা থেকে লোকগানের সঙ্গে চলবে পুতুল নাচের লাইভ শো। মন্ডপের ভিতরের সজ্জা তৈরি করা হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গাছের শুকনো বীজ দিয়ে। আর প্রতিমা তৈরি হচ্ছে ডাল, কুমড়ো, পালং, শশার বীজ, রাজমা দিয়ে। রঙের পরিবর্তে বিভিন্ন শস্যদানায় সাজানো হচ্ছে দেবী প্রতিমাকে। মন্ডপসজ্জা ও থিম ভাবনায় রয়েছেন পূর্ব মেদিনীপুরের কন্টাই এর শিমূলবাড়ির শিল্পী মুকুল দলুই।

৬-এর পল্লী : সিউড়ির দত্ত পুকুরের ৬-এর পল্লীর এবারের থিম-প্রাণের খোঁজে। থিম ভাবনায় রয়েছেন প্রহ্লাদ ভান্ডারী। সিঁড়ি বেয়ে উঠতে হবে উপরের দূর্গম পথে। উঠতে উঠতেই দেখা মিলবে মানুষের বৃক্ষছেদন, প্লাষ্টিকের ব্যবহার এমন সব কাজের জন্য কিভাবে ধ্বংস হতে চলা বিপন্ন পৃথিবী। আর গুহায় দেবীর কাছে গেলেই দেখা মিলবে মানুষ বাদে অন্যজীবদের এক সুন্দর দূষণমুক্ত পৃথিবী। ঐ সুন্দর পৃথিবীতে ব্রাত্য মানুষ। থিম ভাবনার সঙ্গে মিলিয়ে মূর্তি তৈরি করা হয়েছে। থাকছে সুন্দর আলোকসজ্জা।

সিউড়ি পুলিশ লাইন : গতবছর প্রথম বারেই বড়ো বাজেটের পুজো এবং ঢোলকপুর থিম করে সাড়া ফেলেছিল এই পূজো। এবার এই পুজোর থিম জল সংরক্ষণ। থিম ভাবনায় রয়েছেন সিউড়ি রবীন্দ্র পল্লীর সৌরেন্দ্রনাথ ভান্ডারী। মন্ডপের প্রবেশপথে দেখা মিলবে জল সঙ্কটের কারণে শুকিয়ে যাওয়া গাছ, তৃষ্ণার্ত মানুষ জলের জন্য হাত বাড়ালেও নেই পানীয় জল। মূল মন্ডপটা তৈরি হচ্ছে একটা গ্লোব আকারের।আমাজনের জঙ্গলে দাবানলের ধোঁয়ায় অনেকটা বিবর্ণ পৃথিবী। ফেটে গেছে জলের অভাবে কৃষি জমি। আর মন্ডপের ভিতরে ঢুকলে দেখা মিলবে সজীব চনমনে এক অনবদ্য পৃথিবী। দেখা মিলবে বৃষ্টিরও। বৃষ্টি বোঝাতে বিশেষ ধরনের লাইট ব্যবহার করা হচ্ছে। আর মন্ডপ থেকে বেড়িয়ে আসার পথে দেখা যাবে হাতে হাত রেখে জল। সংরক্ষণ করার জন্য শপথ নেওয়া হাতধরাধরি করে দাঁড়িয়ে প্রায় তিনশোর মতো পুতুল।

সিউড়ির বারুইপাড়ার সবুজ সংঘের এবারের থিম – বিপন্ন পার্বত্য প্রকৃতি। পর্বত ও নীচে গুহা বানানো হয়েছে। এখানে দেখা যাবে বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে কিভাবে গলে যাচ্ছে পর্বত।বিপন্ন হচ্ছে পরিবেশ। এই পুজোর থিম ভাবনায় রয়েছেন সৌরেন্দ্রনাথ ভান্ডারী।

সুভাষ পল্লী সার্বজনীন দূর্গা পূজা : এবার এই পূজোর থিম -আমি সেই মেয়ে। এখানে নারীর মধ্যে সবকিছু প্রকাশ পাবে। মাঝে থাকবে একটি নারী। খড়ের পুতুলরূপী পুরুষদের লোভনীয় দৃষ্টি তার দিকে। কিন্তু এই একবিংশ শতাব্দীর নারী সব বাধা পেরিয়ে রুখে দাঁড়াচ্ছে। আর পাড়ার দূর্গার মধ্যেই দেখা মিলবে আগুনরূপী দূর্গার। এই পূজোর থিম ভাবনায় রয়েছেন প্রহ্লাদ ভাণ্ডারী।

স্বাধীন ভারত ক্লাব : সিউড়ির চাঁদনী পাড়ার স্বাধীন ভারত ক্লাবের এবার ৫১তম বর্ষ। এবারে এই ক্লাবের মন্ডপ তৈরি হচ্ছে বোলপুরের রায়পুরের রাজবাড়ির আদলে। প্রতিমা সেজে উঠেছে কালীঘাটের পটচিত্রের মাধ্যমে।

জোনাকী ক্লাব : এবার এই ক্লাবের ৫৩তম বর্ষ। সাবেকী প্রতিমা। একচালির প্রতিমা ও প্রতিমার অনবদ্য সাজ নজর কাড়বে এবারেও। প্রতিমা তৈরি করছেন কুমারটুলির নিমাই পাল। আলোকসজ্জায় লম্বোদরপুরের অর্পিতা ইলেকট্রিক। বাজেট প্রায় ৬লক্ষ টাকা।

তিলপাড়া সম্মেলনী : দক্ষিণ ভারতের মাতাদি মন্দিরের আদলে বিশাল মন্ডপ তৈরি করছেন দুবরাজপুরের সম্রাট ডেকোরেটর। আলোক সজ্জা করছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী। প্রতিমা শিল্পী পলাশ চক্রবর্তী। বাজেট প্রায় ৮ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা।

হাটজনবাজার কলোনী : হোগলা পাতার বিশাল মন্ডপ তৈরি হচ্ছে। হোগলা পাতার অপরূপ কাজ নজর কাড়বে জনগনের। আলোকসজ্জাতে থাকবে নতুনত্ব।

রবীন্দ্রপল্লী সার্বজনীন : একটি মন্দিরের আদলে সুন্দর মন্ডপ তৈরি হচ্ছে। প্রতিমা তৈরি করছেন মহঃবাজারের রঘুনাথপুরের নিতাই সূত্রধর। আলোকসজ্জায় থাকছে অভিনবত্ব। ষষ্ঠী থেকে প্রতিদিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে।

প্রান্তিক সংঘ : বড়বাগানের প্রান্তিক সংঘের পুজো হবে নির্মীয়মান মন্দিরে। প্রবেশপথের সিঁড়ির দুধারে দুটি স্তম্ভ তৈরী করা হচ্ছে।তাতে দুটি সিংহের মুখ থাকবে। এবার এই সংঘের ৫০ বছর। আলোকসজ্জা থাকছে আর্কষনীয়।

দক্ষিণ তিলপাড়া : প্যাগোডার আদলে তৈরি মন্দিরে পুজো হতে চলেছে।

অগ্রণী : সেহেড়াপাড়ার অগ্রনী সংঘের সুন্দর কারুকাজ করা মন্দিরে পুজো। প্রতিমা সাবেকী ধরনের।

সুভাষ পল্লী মহিলা সমিতি : মহিলা পরিচালিত এই পুজো।প্রতিমা সাবেকী ধরনের। মন্ডপসজ্জা সাধারণ মানের। চারদিন নানা ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান থাকছে।

সিউড়ি স্টেশন মোড় : সিউড়ি স্টেশন মোড়ের ভাবনায় বাংলার গর্বে গর্ব বিদ্যাসাগর। মন্ডপসজ্জায় থাকবে বিদ্যাসাগর। মন্ডপের ভিতরের সজ্জায় থাকবে বিদ্যাসাগরের জীবনের কিছু ছবি ও বানী। প্রতিমা তৈরি করছেন শিল্পী বিজয় পাল। পুজোতে পাড়ার বয়োজ্যেষ্ঠদের লাঠি, উত্তরীয় ও ফলের বাকেট দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে। এ পুজোর বাজেট দু লক্ষ টাকা।

আনন্দপুর সার্বজনীন : সাবেকী পূজো। সবার নজর কাড়বে নদীয়া জেলার পলাশীর ছোট নলদহের মৃৎশিল্পী দীনবন্ধু পালের তৈরি প্রতিমা। সপ্তমী থেকে একাদশী পর্যন্ত অনুষ্ঠান থাকবে। যুবক যুবতীদের ভিড়ে পুজোর চারদিন জমজমাট থাকে পূজো প্রাঙ্গন। এই পুজোর বাজেট ছয় লক্ষ টাকা।

সিউড়ি জেলখানা : সিউড়ির প্রাচীন পুজো। সাধারণ মানের মন্ডপসজ্জা। আলোকসজ্জা যৎসামান্য। এখানে মিনি মেলার মতো চাট, ফুচকার ষ্টল এবারেও থাকবে। যুবক যুবতীদের ভিড়ে সরগরম থাকে এই পূজো মন্ডপ।

সেহেড়াপাড়া সার্বজনীন : আরটি গার্লস হাইস্কুলের কাছে এই পূজোর অন্যতম আকর্ষণ সুদৃশ্য মন্দির ও প্রতিমা।

নতুন পল্লী সার্বজনীন : জাতীয় সড়কের পাশে সুদৃশ্য মন্দিরে এই পূজা। সাবেকী ধরনের প্রতিমা নজর কাড়বে।

সিউড়ির বসাক বাড়ির পুজো : পিতলের দুর্গা। মনসার পুজো করে দুর্গার পুজো শুরু হয়।

সিউড়ির বারুই পাড়ার সিংহ বাহিনী মন্দির : সিউড়ির প্রাচীন পুজোর অন্যতম এই পূজো। এই পূজো মল্লিকবাড়ির পুজো নামে পরিচিত। এখানেও পিতলের দুর্গার নিত্যপুজা হলেও দুর্গা পূজার সময় প্রতিমা বানিয়ে পুজো হয়। বহু প্রাচীন মন্দিরের নিয়ম নিষ্ঠা সহকারে এই পূজা হয়।