‘হার্ট, লিভার’ সব উল্টো দিকে! বিরল অস্ত্রোপচার রামপুরহাট মেডিক্যাল কলেজে

নিজস্ব প্রতিবেদন : শরীরের অভ্যন্তরে সবকটি অঙ্গের অবস্থান আর পাঁচটা মানুষের থেকে আলাদা। এমনটা হয়ে থাকে পৃথিবীতে ২০০০০ মানুষের মধ্যে একজনের। ঠিক তেমনই এক রোগীর দেখা মিললো বীরভূমের রামপুরহাট মেডিকেল কলেজে। এমন বিরল রোগীর শরীরে বিরল অস্ত্রোপচার হলো রামপুরহাটে মেডিকেল কলেজে।

চিকিৎসকদের কাছে এমন ব্যক্তির অস্ত্রপ্রচার যেমন বিরল, ঠিক তেমনি কষ্টকর। কারণ তারা অভ্যস্ত আর পাঁচটা মানুষের শরীরের অভ্যন্তরে স্বাভাবিক অঙ্গের অবস্থান নিয়ে। আর ওই ব্যক্তির শরীরের অভ্যন্তরে অঙ্গের বিপরীত অবস্থানে অস্ত্রোপচারের ক্ষেত্রে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয় সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসকদের।

চিকিৎসকদের থেকে জানা গিয়েছে, বীরভূমের মুরারই থানার অন্তর্গত সন্তোষপুর গ্রামের ২৭ বছর বয়সী মিজানুর রহমান নামে এক যুবক দীর্ঘদিন ধরে পেটের ব্যথায় ভুগছিলেন। চিকিৎসার জন্য তিনি দক্ষিণ ভারতের নামিদামি বেসরকারি হাসপাতালেও ঘুরে এসেছেন। কিন্তু কোনো সুরাহা হয়নি। তারপর রামপুরহাট মেডিকেল কলেজে চিকিৎসা করাতে এলে চিকিৎসকরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার পর হতবাক, দেখতে পান তাঁর শরীরের অভ্যন্তরের সমস্ত অঙ্গের অবস্থান আর পাঁচটা মানুষের থেকে বিপরীতে। অর্থাৎ হার্ট বাঁদিকের বদলে ডানদিকে, গলব্লাডার ডানদিকের বদলে বাঁদিকে। এছাড়াও অন্যান্য অঙ্গগুলির অবস্থানও উল্টো।সবকিছু বুঝতে পেরে রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের চিকিৎসকরা তাঁর পেটে ব্যথার কারণ বুঝতে পারেন গলব্লাডার স্টোন। তারপরেই ঝুঁকি নিয়ে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেন চিকিৎসকরা।

রামপুরহাট মেডিকেল কলেজের চিকিৎসক সৌরভ মাঝি জানান, “আমাদের কাছে এমন রোগীর অপারেশন করা খুবই কষ্টকর। কারণ আমরা যেভাবে অপারেশন করতে অভ্যস্ত এই ব্যক্তির ক্ষেত্রে ঠিক উল্টোটা করতে হয়েছে। আমাদের ডান হাতের কাজ বাঁ হাতে, বাঁ হাতের কাজ ডান হাতে সারতে হয়েছে। যাইহোক এই অপারেশনে আমরা সফল হয়েছি রোগী এই মুহূর্তে সুস্থ রয়েছেন।”

চিকিৎসকরা আরও জানান, “ব্যক্তির শরীরের ভিতরের সবকটি অঙ্গের বিপরীত অবস্থানের কারণে ব্যথার কারণ অনেকে হয়তো বুঝতে পারছিলেন না। কারণ গল ব্লাডারের জন্য ব্যাথা হলে তা হয় শরীরের ডানদিকে, আর এই ব্যক্তি শরীরের বাঁ দিকে ব্যথা নিয়ে চিকিৎসা করাতে আসে। ফলে এই ব্যাথা অনেকেই সাধারণ গ্যাস, অম্বলের ব্যথা বলেই এতদিন মনে করেছিলেন চিকিৎসারা।”

এমন বিরল ব্যক্তির এদিন রামপুরহাট মেডিকেল কলেজে প্রায় ঘন্টা খানেক অস্ত্রোপচারের পর তাঁর পেটের ভেতর থেকে বের করা হয় ছোট ছোট অনেকগুলি গলব্লাডার স্টোন। চিকিৎসার পর ওই রোগী বর্তমানে সুস্থ রয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।