সর্দি জ্বর আর করোনা জ্বরের পার্থক্য, করোনা জ্বর হয়েছে বুঝবেন কিভাবে

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্ব জুড়ে মহামারীর আকার ধারণ করেছে কোভিড-১৯, যা নিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত বিশ্ববাসী। এই অসুখের উপসর্গ হিসেবে জ্বর, সর্দি কাশির কথা বলা হয়েছে। কিন্তু সত্যি কি এই উপসর্গগুলি কারোর শরীরে দেখা দিলেই মেনে নিতে হবে যে কোরোনা ভাইরাসে সংক্রমিত? কি করে বুঝতে পারবেন ঠান্ডা লেগে সর্দি জ্বর হয়েছে নাকি করোনা সংক্রমণ ঘটেছে আপনার শরীরে? দেশের বড় বড় চিকিৎসকরা এবিষয়ে তাদের মতামত জানিয়েছেন।

চেস্ট স্পেশালিস্ট এক চিকিৎসকদের মতে জ্বর সর্দি কাশির ক্ষেত্রে সাধারণ ভাবে ঘরে বসে বিশ্রাম নেবেন এবং জল ও খাবার খাবেন। বিশেষ দরকারে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে এক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু ও গর্ভবতী মহিলার থেকে দূরত্ব বজায় রাখায় উচিৎ। যদি সাধারণ ব্যবস্থাপনায় সর্দি কাশি কমে যায় সেক্ষেত্রে এটি ঠান্ডা লাগার ফলেই হয়েছিল তা বলা যায়, কিন্তু যদি না কমে সেক্ষেত্রে পরবর্তী ব্যবস্থা নিতে হবে।

১০ দিনে অসুখ না কমলে হেল্পলাইন নম্বর ১৮০০০৩১৩৪৪৪২২ অথবা ০৩৩২৩৪১২৬০০ তে কল করে সমস্যার কথা জানাবেন।তারপর জেলার মেডিক্যাল অফিসার আপনার শরীরে কোরোনা সংক্রমণ হয়েছে নাকি সেই পরীক্ষা করাবে।তারপর সেখানকার মেডিক্যাল টিম আপনাকে জানিয়ে দেবে কি ধরনের ওষুধ খাওয়া আপনার দরকার।

তবে কোরোনা সংক্রমণের ক্ষেত্রে আরও এক চেস্ট স্পেশালিস্ট চিকিৎসকের কথায়, এই ভাইরাসের সংক্রমণে মাত্র ১৫-২০% মানুষের অবস্থা জটিল হয়, এবং ২ থেকে ৩ জন মানুষের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়। আপনি যদি বিদেশে না গিয়ে থাকেন এবং আপনার আশেপাশে কেউ যদি সংক্রমিত না হয়ে থাকেন সেক্ষেত্রে আপনার ভয়ের বিশেষ কারন নেই।

কিন্তু আশপাশে এ ধরনের রোগী নেই তা কী করে বোঝা যাবে?

হাঁচি-সর্দি নিয়ে তো অনেকেই ঘুরে বেড়ায়। তাঁদের কারও যদি এই সংক্রমণ হয়ে থাকে ও তিনি যদি ধারে কাছে এসে হেঁচে-কেশে দেন, তা হলে সমস্যা হতেই পারে! কিন্তু শরীরে অ্যান্টি বডি তৈরি হলে শরীর নিজেই তার সাথে মোকাবিলা করে নেয়। সেক্ষেত্রে নূন্যতম সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে।

চিকিৎসকদের মতে কারোর যদি কিডনি, হৃদযন্ত্র বা লিভারের কোনো অসুখ থাকে সেক্ষেত্রে শরীরের ইমিউনিটি কমে যায় এবং বয়স বেশী হলেও এই সমস্যা হয়। সেক্ষেত্রে একটু সাবধানতা রাখতে হবে তবে এসব সমস্যা না হলে ভয়ের বিশেষ কোনো কারণ নেই। তবে উপসর্গ দেখা যাওয়ার ৭২ ঘণ্টার পড়ে যদি জ্বর এবং শ্বাসকষ্ট বৃদ্ধি পায় বা ব্লাড প্রেসার কমে যায় সেক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে।

উপসর্গ হলে সেই উপসর্গের সময়মত যথাযথ চিকিৎসা করা প্রয়োজন। তাতেই সাধারণত এই উপসর্গগুলো কমে যায়। তবে যাদের ঝুঁকি বেশী আছে সেক্ষেত্রে তাদের পরীক্ষা যত দ্রুত হয় করানো প্রয়োজন কিন্তু সমস্যা এটাই দেশের পরিকাঠামো মতে সপ্তাহে ২০ টির বেশী রোগ নির্ণয় করা যায়না তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে এই সংখ্যাটা বাড়ানো প্রয়োজন।

সাধারণ জ্বর ও করোনা জ্বরের মিল ও অমিলগুলি কি কি

১) সাধারণ ফ্লু ও করোনা দুটিই ভাইরাসঘটিত অসুখ হলেও দুই অসুখের ভাইরাস সমগোত্রীয় নয়। সাধারণ ফ্লু ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের প্রকোপে হয় আর কোভিড-১৯ হয় করোনা গ্রুপের ভাইরাসের কারণে।

২) করোনাভাইরাস অনেক দ্রুত গতিতে ছড়ায়। তুলনামূলকভাবে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস অতি মন্থরগতিতে ছড়ায়।

৩) সাধারণ ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার দুই থেকে তিন দিনের মধ্যে অসুখ দেখা দেয়। করোনা ভাইরাসের সংস্পর্শে আসার এক থেকে দুই সপ্তাহের মধ্যে এই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

৪) সাধারণ ফ্লুয়ের ক্ষেত্রে জ্বর ১০৩ থেকে ১০৪ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠে যেতে পারে। তবে ওষুধের কাজ শুরু হলে তা নামতেও শুরু করে। করোনার ক্ষেত্রে জ্বর প্রবল হলেও নামতে চায় না সহজে। তখন কোন ওষুধও কাজ করে না।

৫) সাধারণ ফ্লু বোঝার জন্য কোনো আলাদা করে পরীক্ষার দরকার পড়ে না। কিন্তু করোনা কিনা তা জানতে পলিমারেস চেন রিঅ্যাকশন বা পিসিআর পরীক্ষা করা হয়।

৬) সাধারণ ফ্লুয়ের জন্য প্রয়োজনীয় প্রতিষেধক রয়েছে। কিন্তু করোনা রোধে কোনো প্রতিষেধকের আবিষ্কার এখনো পর্যন্ত হয়নি।