শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাচ্ছেন বন্যজীব প্রেমী শিক্ষক দীনবন্ধু বিশ্বাস

হিমাদ্রি মণ্ডল : আগামী ৫ই সেপ্টেম্বর অর্থাৎ শিক্ষক দিবসের দিন পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের দ্বারা বীরভূমবাসীদের গর্বিত করে ‘শিক্ষারত্ন’ সম্মানে সম্মানিত হতে চলেছেন অজয়পুর হাইস্কুলের শিক্ষক ও জাতীয় বন্যজীব অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ব্যুরোর সদস্য দীনবন্ধু বিশ্বাস মহাশয়। সেদিন তাঁকে কলকাতার নেতাজী ইন্ডোর স্টেডিয়ামে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এই সম্মান তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হবে।

তিনি বিগত ২০ বছরে কয়েক হাজার সাপ উদ্ধার করে তাদের অনুকুল পরিবেশ পুনর্বাসন দিয়েছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন জায়গায় সাপ নিয়ে সর্প সচেতনতা শিবির করে সাপকে না মারার জন্য পরামর্শ দিয়েছেন।মানুষকে বুঝিয়েছেন প্রকৃতির অঙ্গ এরা, প্রাকৃতিক ভারসাম্য বজায় রাখতে এদের বাঁচিয়ে রাখা খুব জরুরি। বিভিন্ন মেলাতে করেছেন সর্প প্রর্দশনী। আর তাঁর এই সর্প প্রর্দশনী দেখতে দেখা গিয়েছে উপচে পরা ভিড়। এমনকি তিনি গড়ে তুলেছেন সাপের সংগ্রহ শালাও। তাঁর উদ্যোগে সিউড়ি ১নং ব্লকের অজয়পুর হাইস্কুলে গড়ে উঠেছে সর্প মিউজিয়াম।

শুধু কয়েক হাজার সাপই নয়, বাঁচিয়েছেন গোসাপ, কচ্ছপ, বিভিন্ন ধরনের সরীসৃপ, বিপদে পড়া বহু স্তন্যপায়ী প্রাণী, বিভিন্ন প্রজাতির পাখিকেও। সাপের ডিম জোগাড় করে তাঁর সেহেড়া পাড়ার ‘রূপকথা’ বাড়িতে জন্ম দিয়েছেন বিভিন্ন প্রজাতির সাপের। দীনবন্ধু বাবু এভাবেই হয়ে উঠেছেন জীব বন্ধু। প্রকৃতি প্রেমিক দীনবন্ধু বিশ্বাস নিজেকে সর্পপ্রেমী, প্রকৃতিপ্রেমী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন নিজেকে। কানাডার এক জীবপ্রেমী ভদ্র মহিলার কাছ থেকে তিনি উপহার স্বরূপ পেয়েছেন একটি স্নেক স্টিকও। পেয়েছেন হাজারও সম্মাননা।

শুধু কি তাই! এছাড়াও এই শিক্ষকের রয়েছে আরও একটি বড় গুণ, আর তাঁর সেই গুণ প্রকাশ পায় তাঁর স্কুল অজয়পুর হাইস্কুলের সরস্বতী পূজায়। এই স্কুলের সরস্বতী পুজো অন্যান্য স্কুলের থেকে অবশ্যই আলাদা, কারণ এই স্কুলের পুজোয় প্রতিবছর ঘটা করে করা হয় থিম, যেখানে ফুটে ওঠে সামাজিক সচেতনতা বার্তা। যেমন এবছরের সরস্বতী পুজোর থিম ছিল ‘সেভ দ্য গার্ল চাইল্ড’। উল্লেখ্য বিষয়গুলো, এই সরস্বতী প্রতিমা অথবা থিম কোনরকম বাইরে থেকে আনা শিল্পীকে দিয়ে তৈরি করা হয় না, তৈরি হয় দীনবন্ধু বিশ্বাস মহাশয় এবং তাঁর ছাত্রদের সহযোগিতায়।

কমিশনার অফ স্কুল এডুকেশন ডঃ সৌমিত্র মোহনের পক্ষ থেকে দীনবন্ধু বিশ্বাসের শিক্ষারত্ন পুরস্কার পাওয়ার খবর পত্র মারফৎ জানানো হয়েছে। আর এই খবরে স্বভাবতই খুশি দীনবন্ধু বাবু। তিনি বলেন, “এই পুরস্কার পাওয়ার সংবাদ শুনে নিঃসন্দেহে ভালো লাগছে। এই পুরস্কার অজয়পুর স্কুলের সহকর্মী, ছাত্র ছাত্রী,এলাকার মানুষজন ও পরিবারের সবার। তাদের সহযোগিতা ও সহানুভূতি না থাকলে এই কাজ এইভাবে করতে পারতাম না।”