নিজস্ব প্রতিবেদন : G20 সম্মেলনের ঠিক আগেই হঠাৎ দেশের রাষ্ট্রপতির একটি আমন্ত্রণপত্রকে কেন্দ্র করে দেশের নাম নিয়ে তৈরি হয় নানান বিতর্ক। কেননা রাষ্ট্রপতির ওই আমন্ত্রণপত্রে প্রেসিডেন্ট অফ ইন্ডিয়ার (President of India) পরিবর্তে লেখা ছিল প্রেসিডেন্ট অফ ভারত (President of Bharat)। বিজেপি এবং বিজেপি জোট এনডিএ-র বিরুদ্ধে যখন বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নিজেদের জোটের নাম রেখেছে I.N.D.I.A., সেই সময়ই দেশের নাম পরিবর্তন করে ভারত রাখা হবে এমনই জল্পনা তৈরি হয়েছে। তবে ভারত হোক অথবা ইন্ডিয়া, প্রশ্ন হল এই দুই শব্দ এলো কোথা থেকে?
বর্তমানে ইন্ডিয়া এবং ভারত এই দুটি নাম নিয়ে তর্ক-বিতর্ক থেকে শুরু করে নানান জল্পনা তৈরি হলেও সংবিধানে কিন্তু দুটি নামেরই উল্লেখ রয়েছে। ১৯৫০ সালের ২৬ জানুয়ারি, যেদিন ভারতীয় সংবিধান গ্রহণ করা হয়েছিল, সেই দিন থেকেই সংবিধানে ভারত এবং ইন্ডিয়া এই দুটি শব্দ স্বীকৃতি পেয়েছে। সংবিধানের উল্লেখ রয়েছে India that is Bharat। অর্থাৎ ভারতই ইন্ডিয়া।
ভারত অথবা ভারতবর্ষের নামের শিকড় রয়েছে পুরাণ এবং মহাভারতে। দক্ষিণ সমুদ্র এবং উত্তর তুষার আবাসের মধ্যবর্তী একটি জায়গাকে পুরাণে ভারত হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছে। অনেকেই মনে করেন ভারত নামটি এসেছে কিংবদন্তি রাজা ভরতের নামানুসারে। ভরত ছিলেন দুষ্মন্ত শকুন্তলার পুত্র। ভরতকে ঋগ্বৈদিক যুগের মানুষদের পূর্বপুরুষ হিসাবে মনে করা হয়। পুরাণ অনুযায়ী ভারতবর্ষ হলো জম্বু দ্বীপের একটি অংশ। জম্বুদীপ বিশ্বের ৭ দ্বীপের এক দ্বীপ।
অন্যদিকে ভারতমাতা শব্দটি এসেছে মূলত উনিশ শতকের দিকে। পরবর্তীতে অনেক পরে বারাণসীতে ভারত মাতা মন্দির নামে একটি মন্দিরের উদ্বোধন করেছিলেন মহাত্মা গান্ধী। যদিও সমাজবিজ্ঞানী ক্যাথরিন ক্লেমেন্টিন ওঝার মতে, ভারত কোন ভৌগোলিক বা রাজনৈতিক সত্তা নয়, বরং এটি ধর্মীয়, সামাজিক ও সংস্কৃতিক সত্তা। অন্যদিকে আবার ভারত নামটি সিন্ধু নদীর সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। এক্ষেত্রে মনে করা হয়, গ্রিকরা খ্রিস্টপূর্ব পঞ্চম শতাব্দীতে নদীর ওপারের জমিকে বোঝাতে ভারত নামটি ব্যবহার করতেন।
অন্যদিকে আবার পুরাতন বেশকিছু ইংরেজি সাহিত্যে ইন্ডিয়া শব্দটির উল্লেখ রয়েছে। ১৭ শতকের মধ্যে ইন্ডিয়া শব্দটি পাকাপাকিভাবে জায়গা করে নিয়েছিল। এমনকি অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষের দিক থেকে ব্রিটিশ মানচিত্রে ইন্ডিয়া শব্দটির ব্যবহার বাড়তে শুরু করে। গ্রিক রোমানদের হাত ধরে দীর্ঘদিন ধরেই ইন্ডিয়া শব্দটির প্রচলন ছিল। এছাড়াও সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার মতো বেশ কিছু বৈজ্ঞানিক এবং আমলাতান্ত্রিক সংস্থার ক্ষেত্রে ব্যবহার শুরু হয়েছিল ইন্ডিয়া শব্দটির। এসবের পরিপ্রেক্ষিতেই ব্রিটিশদের কাছে ইন্ডিয়া নামটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এমনকি ইন্ডিয়া শব্দটি ব্রিটিশদের উচ্চারণে সহজ হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে স্বাধীনতার পরও গণপরিষদে ইন্ডিয়া এবং ভারত এই দুই নাম নিয়ে চরম বিতর্ক তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত দুটি নামই রাখার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছিল।