ক্যানসার হওয়ায় মা গেছেন ছেড়ে, হাসপাতালেই ধুমধামে জন্মদিন পালন খুদের

নিজস্ব প্রতিবেদন : হঠাৎ করে কলকাতা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগ সেজে উঠেছে রংবেরঙের বেলুন আর রঙিন কাগজে। আসলে এক শিশুর জন্মদিন পালনের জন্যই এমন সাজো সাজো রব কলকাতা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগে। ওই শিশুটির বাড়িঘর, পরিচয় বলতে এই মেডিকেল কলেজই, মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগ।

ওই ছোট্ট খুদে শিশু ২০১৭ সালের অক্টোবর মাসে কলকাতার মেডিকেল কলেজে ভূমিষ্ঠ হয়। পিতৃ পরিচয় নেই, শরীরে মারণ ক্যানসার নিয়ে ভূমিষ্ঠ হয়েছিল শিশুটি। মারণ রোগের চিকিৎসা করার সামর্থ্য ছিল না চালচুলোহীন মায়ের। তাই হাসপাতালে ফেলেই পালিয়ে গিয়েছিলেন একরত্তিকে জন্মদাত্রী মা। হাসপাতালে রেজিস্টারে থাকা ঠিকানায় খোঁজ করতে গিয়েছিলেন কেউ কেউ, তবে সেখানে পাওয়া যায়নি কাউকেই। অগত্যা তারপর থেকেই শিশুটির ঠিকানা হয়ে যায় কলকাতা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক বিভাগ।

ওই বিভাগের চিকিৎসক, নার্সরাই দায়িত্ব নেন শিশুটির। সকলের কোলে পিঠে চরে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। মায়ের নামে নাম রাখা হয় মিনু বেগম। সেই মিনুরই দু’বছরের জন্মদিন পালনে সাজো সাজো রব কলকাতা মেডিকেল কলেজের পেডিয়াট্রিক সার্জারি বিভাগ। কেক, মোমবাতি, রাংতায় মোড়া উপহার কোনো কিছুরই খামতি ছিল না। আর সেদিন জন্মদিনে উপস্থিত ছিলেন মেডিকেল কলেজের প্রিন্সিপাল, সুপার থেকে অন্যান্যরাও।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, জন্মের সময় থেকে মিনুর শরীরের কক্সিয়াল অংশে অর্থাৎ মেরুদণ্ডের একদম নিচে প্রকাণ্ড এক টিউমার ছিল। তারপর চিকিৎসকেরা পরীক্ষা করে দেখেন ওই টিউমারের মধ্যে রয়েছে ক্যানসারের সেল। বাঁচাটা প্রায় সম্ভবই ছিলনা। তবে হাল ছাড়েননি চিকিৎসকেরা। শুরু হয় ওই শিশুর চিকিৎসা। প্রথমে বায়োপসি করে দেখা যায় ওই শিশুটির টিউমারের মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্ক ক্যান্সারের বিরল এক কোষ। চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেন অস্ত্রোপচারের। অস্ত্রোপচার করে বাদ দেওয়া হয় সেই টিউমার। তবে এখানেই শেষ নয়, এরপরেও ওই শিশুটির পেটে একটি ক্যান্সারের সেলের সন্ধান মেলে।

আর এই ঘটনার পর চিকিৎসকেরা বাঁচার আশা ছেড়ে দিয়ে বন্ধ করে দেন কেমো। তবে এরপরেই ঘটে বিস্ময়কর ঘটনা। কেমো বন্ধ হওয়ার পর ধীরে ধীরে পেটের ভিতরে থাকা টিউমার ছোটো হতে থাকে। পরে আবার পরীক্ষা করে দেখা যায় উধাও হয়ে গিয়েছে সেই টিউমার। চিকিৎসকরা জানান চিকিৎসা বিজ্ঞানে এমন ঘটনা বিরল। এই মুহূর্তে খুদে শিশু অনেকটাই সুস্থ।