গালিগালাজ, ঝাঁটা না দেখলে বেদী থেকে নামেন না মা, একাদশীতে বিসর্জন

লাল্টু : শতাব্দী প্রাচীন কালীপুজো গুলির মধ্যে অন্যতম বীরভূমের পাহাড়েশ্বরের শ্মশান কালী। অন্যান্য কালীপুজোর মতোই কালীপুজোর অমাবস্যায় পূজো হয়, মন্দিরে থাকেন সারা বছর আর বিসর্জন দূর্গা পূজার পরের একাদশীতে। আর এই বিসর্জনকে ঘিরেই যত রহস্য লুকিয়ে রয়েছে এই শ্মশানকালী মাকে ঘিরে।

এই শ্মশান কালীর পুজো করে থাকেন সারা বছর ধরে এলাকার বৈষ্ণব সম্প্রদায়ের মানুষেরা। শুধু পুজো নয়, তারাই গড়ে থাকেন মায়ের মূর্তিও। কিন্তু বিসর্জনের দায়িত্বে থাকেন দাস সম্প্রদায়ের মানুষেরা। শ্মশান কালী বিসর্জন ঘিরে এই একাদশীর দিন এলাকার দাস পরিবারের মধ্যে দেখা যায় আলাদা উৎসাহ-উদ্দীপনা, বাড়িতে বাড়িতে ভিড় জমান আত্মীয়স্বজনেরা, বিসর্জন ঘিরে পাহাড়েশ্বর শ্মশান চত্বরে বসে একদিনের জন্য মেলাও। তবে এই দাস পরিবারদের আজকের দিনটি হলো সবথেকে বড় আনন্দের দিন, কারণ তারা সারা বছর পর আজকের দিনটিতে মায়ের বিসর্জনের অধিকার পান।

বিসর্জনের দায়িত্বে থাকা দাস পরিবারদের এক সদস্য গুরুপদ দাস জানান, “কোন এক বছর বিসর্জনে বিলম্বিত হয়, কারন সেই বছর বিসর্জনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল অন্য একটি সম্প্রদায়কে। কিন্তু সেই সম্প্রদায়ের হাতে মা যেতে চাননি। অবশেষে পুরোহিত বুঝতে পেরে শেষমেশ দাস পরিবারদেরই আবার দায়িত্ব দেন বিসর্জনের। তারপর থেকেই বংশপরম্পরায় একি রীতিতে বিসর্জন হয়ে আসছে।”

কিন্তু এসব সাধারণ রীতিনীতির পাশাপাশি আরও এক আশ্চর্য রীতি রয়েছে এই শ্মশানকালীকে কেন্দ্র করে। স্থানীয়দের দাবি অনুসারে এই শ্মশান কালী মা কোনো মতে বেদী থেকে নামতে চান না। অবশেষে দাস পরিবারের মানুষরা মাকে আপন ভেবে গালিগালাজ এবং ঝাঁটা দেখিয়ে মাকে বেদী থেকে নামান ও সামনের রুজের পুকুরে বিসর্জন দেন।

আর এই শ্মশানকালীর বিসর্জনকে উপলক্ষ করে একদিনের জন্য যে মেলা বসে সেই মেলাকে ঘিরে দুবরাজপুর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার মানুষদের মধ্যে দেখা যায় চরম উৎসাহ উদ্দীপনা। এলাকার স্থানীয় বাসিন্দারা ছাড়াও দূর-দূরান্তের মানুষরা শুধুমাত্র এই বিসর্জন দেখতে ভিড় জমান এলাকায়।