বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ অভিযানে ডিওয়াইএফআই

রুজি-রুটির সঙ্কট ভেঙেছে বৃত্ত, বাপ-বেটাকে টেনে এনেছে এক মিছিলে

রণদীপ মিত্র : অঝোরে বৃষ্টি। জামাকাপড় সব লেপ্টে গেছে শরীরের সাথে। পথ চলতি মানুষ তখন খুঁজছেন ছাউনী। তবুও ঝমঝমিয়ে হওয়া সেই বৃষ্টি মাথায় নিয়েই অসংখ্য যুব শরীর নিংড়ে বের করা স্লোগান তুলে জাতীয় সড়ক বেয়ে এগিয়ে চলেছেন। লক্ষ্য বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র। বুধবারের দুপুর। বক্রেশ্বরের কচুজোড় থেকে জাম্বুনীর জাতীয় সড়ক ধরে লাল-সফেদ ঝান্ডা হাতে যুবদের চিৎকার শিল্প চাই, কাজ চাই, বেকার ভাতা চাই।

ডিওয়াইএফআই ডাক দিয়েছিল ‘বক্রেশ্বর চলো’-র। দাবি, বক্রেশ্বর তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে ৬ নং ইউনিট চালু করতে হবে। প্রকল্পের জন্য জমি দেওয়া যে সকল ভূমিহারা পরিবারের কাজ মেলে নি তাদের কাজ দিতে হবে। এলাকার কারিগরি শিক্ষাপ্রাপ্ত যুবদের কাজের ব্যবস্থা করতে হবে প্রকল্পে। এই দাবি নিয়েই যুবদের ভীড় এদিন আছড়ে পড়ে প্রকল্পের মূল ফটকের সামনে। হয়েছে সমাবেশ। সমাবেশ থেকেই আওয়াজ উঠেছে, ‘বক্রেশ্বর চলো’-র সাতদিন বাদেই এর থেকে বেশী ভীড় বীরভূম থেকে আছড়ে পড়বে নবান্নে।

মিছিল ছিল যুবদের। আর ঝান্ডা হাতে মিছিলে হাঁটলেন ষাটোর্ধ, কানে কম শোনা, দিনমজুরী করে শিঁড়দাড়া ধুনকের মত বেঁকে যাওয়া বৃদ্ধ শ্যামাপদ দলুই! বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্র লাগোয়া গ্রাম কচুজোড়ের বাসিন্দা তিনি। দীর্ঘ পথ হাঁটতে হাঁটতেই বৃদ্ধ শ্যামাপদ দলুই উগড়ে দিলেন ক্ষোভ। কানে কম শোনেন। তাই কথা বলাটাও তাঁর বেশ জোর। বললেন, ‘‘পনেরো কাঠা জমি গেছে বক্রেশ্বরের ২য় ছাই-পুকুরের জন্য। ঘরে দুই বেকার ছেলে শ্যামল ও নির্মল। কেন তাদের একজন অন্তত একটা কাজ পাবে না।’’ বৃদ্ধ যেমন হেঁটেছেন, তাকে মাঝে রেখেই হেঁটেছেন মনোহরপুরের সেখ ইসলাম, আড়াডাঙালীর বিশ্বজীত সাহা, লক্ষ্ণনডিহির বাবর আলি কিংবা সেখ আশাদুল বা গোষ্ঠ পালেরা। সকলেই যুব। বক্রেশ্বর তাপ বিদ্যুত কেন্দ্রের বাতিস্তম্ভের ছ’টা প্রতিদিনই আছড়ে পরে এদের প্রত্যেকের বাড়ি উঠোনে। বিশ্বজীতের বাবা শিবানন্দ সাহা। জমিদাতা। ছেলের কাজ চাইতে হাজির ছিলেন মিছিলে। বললেন, ‘‘কাজ করি তাপ বিদ্যুতে। কাজ কয়লায় বেলচা মারা। মাসে দশদিন। ঠিকায়। দিন প্রতি মজুরী ৩০০ টাকা। জমি গেছে আমার। কেন আমার ছেলের একটা স্থায়ী কাজের ব্যবস্থা হবে না প্রকল্পে।’’ বাকিদের কেউ ভূমিহারা পরিবারের তো কেউ করেছেন আইটিআই। বেকারত্বের যন্ত্রনায় কাতরাচ্ছেন সকলেই। এরাই জানিয়ে দিয়েছেন ভূমিহারা পরিবার পিছু কাজ না পাওয়ার সংখ্যা এখনও অনেক। তাই তো তল্লাট জুড়ে শুধু ক্ষোভ আর ক্ষোভ। সেই ক্ষোভের বহি:প্রকাশে এদিনের যুবদের মিছিল একসাথে হাঁটিয়েছে বাপ-বেটাকে। সাথে সাথে জানান দিয়েছে এই ক্ষোভ শুধু বক্রেশ্বর পর্যন্তই সীমাবদ্ধ থাকবে না আগামী ১২-১৩ই সেপ্টেম্বর বারোটি বাম ছাত্র-যুব সংগঠনের ডাকে শিল্প ও কর্মসংস্থানের দাবিতে হওয়া সিঙ্গুর থেকে নবান্ন অভিযানেও হবে একাত্ব।

ডিওয়াইএফআই, বীরভূম জেলা কমিটির সম্পাদক মতিউর রহমান জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের এদিন স্পষ্ট দাবি ছিল বক্রেশ্বর ৬ নং ইউনটি চালু করতে হবে। কারন এর ফলে ইউনিট তৈরীর সময় এবং পরবর্তীতে ইউনিট চালু হলে সৃষ্টি হবে কাজের সূযোগ। দাবি ছিল ভূমিহারা যেসকল পরিবার এখনও কাজ পান নি তাদের কাজের ব্যবস্থ সুনিশ্চিত করা। বামফ্রন্ট আমলে এই ঘোষনার মধ্যে দিয়েই জমি নেওয়া হয়েছিল। নিয়োগও হয়েছিল নিয়মিত। কিন্তু এখন থমকে গিয়েছে। সাথে থাবা বসিয়েছে নিয়োগে দূর্নীতির রোগ। এর বিরুদ্ধেই আমাদের এদিন পথ হাঁটা। বিক্ষোভ করা। যার পুনরাবৃত্তি হবে নবান্ন অভিযানের দিনেও।’’