CAA বা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন সংক্রান্ত বেশকিছু প্রশ্ন ও তার উত্তর

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন (CAA) এর এই মূল বিষয়গুলি ঠিক ভাবে জানেন তো?দেখে নিন এগুলি কি কি।

নিজস্ব প্রতিবেদন : নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন অর্থাৎ CAA নিয়ে ইতিমধ্যেই পুরো দেশ অশান্ত। কিছু মানুষ এর পক্ষে, কেউ কেউ বিপক্ষে। তবে অনেকেই পরিষ্কারভাবে জানেন না এই আইনের খুঁটিনাটি। নীচে এই আইনের কিছু মূল বিষয় সম্পর্কে আলোচনা করা হলো।

• ভারতীয় নাগরিকদের উপর CAA কোনো প্রভাব ফেলবে না। CAA’র কোনো প্রভাব পারবে না ভারতীয় নাগরিকদের উপর, কারণ ভারতের সংবিধানে ভারতীয় নাগরিকদের মৌলিক অধিকার রক্ষা করেছে। আর সেই অধিকার কোনোভাবে খর্ব করা যাবে না। কোনো ধর্মের বিষয়, মুসলিম সহ কোনো ভারতীয় নাগরিক এই আইনের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন না।

• যেসকল হিন্দু, শিখ, জৈন, বৌদ্ধ, পার্সি এবং খ্রিস্টান শরণার্থী ২০১৪ সালের ৩১ ডিসেম্বরের পর কোনো ধর্মীয় কারণে বিতাড়িত হয়ে ভারতে এসেছেন CAA তাদের জন্য।ঐসকল দেশ থেকে আসা মুসলিম সহ অন্য যে কোনো বিদেশি শরণার্থীদের উপর CAA লাগু হবে না।

• CAA এর ফলে পাসপোর্ট বা ভিসার মতন প্রয়োজনীয় নথি ছাড়াও হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি শরণার্থীরা ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন। শুধু তাই না, ভারতবর্ষে এসে বসবাস করার ন্যূনতম সময় ১+১১ বছরের পরিবর্তে ১+৫ বছর করা হয়েছে।

• অন্য কোনো দেশ থেকে ভবিষ্যতে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষদের আসা আটকানোর মতন কোনো লক্ষ্য CAA তে গঠন করা হয়নি। উল্লেখিত দেশগুলি থেকে এর আগেও বিগত বছরগুলিতে শতাধিক মুসলিমদের নাগরিকত্ব দেওয়া হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও দেওয়া হবে, তবে তা যোগ্যতার বিচারে, ধর্মের বিচারে দেওয়া হবে না।

• উল্লেখিত তিন দেশ থেকে আসা মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেদের বিতাড়িত করা হবে না। CAA-র দ্বারা কোনো নাগরিকদের বিতাড়িত করা হবে না। ১৯৪৬-এর বিদেশি আইন ও ১৯২০-র পাসপোর্ট আইন – এই দুটিকে ভিত্তি করে এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকে। বিদেশি নাগরিকদের ভারতে প্রবেশ এবং প্রস্থান, এই দুই প্রকার সিদ্ধান্তই এই দুই আইনের ভিত্তিতেই নেওয়া হয়। এর সাথে ধর্মের কোনো যোগ নেই। কোনো শরণার্থী যদি ভারতে অবৈধভাবে বসবাস করে তাদের ক্ষেত্রে এই দুই আইন প্রযোজ্য। স্থানীয় থানা বা প্রশাসনের তদন্ত রিপোর্টকে ভিত্তি করে কোনো বিদেশিকে অনুপ্রবেশকারী বলে চিহ্নিত করা হয় এবং সেক্ষেত্রে ওই নাগরিককে সেই দেশের দূতাবাসের তরফে সঠিক নথি-সহ মূল দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয় এই দুই আইনের তরফে।

• ১৯৪৬-এর বিদেশি আইন অনুযায়ী ‘বিদেশি’দের চিহ্নিতকরণের পরই অসমে এই ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। অর্থাৎ, এই পদ্ধতিতে কোনও বৈষম্য বা ত্রুটির প্রশ্ন নেই। বিদেশি আইনের ৩ ধারা এবং পাসপোর্ট আইনের ৫ ধারা অনুযায়ী, বিদেশি নাগরিকের চিহ্নিতকরণ, আটক এবং ফেরত পাঠানোর ক্ষমতা সম্পূর্ণ ভাবে রাজ্য সরকার ও তার জেলা প্রশাসনের হয়।

• প্রতিবেশী ওই তিন দেশের হিন্দুরা কোনো অতিরিক্ত সুবিধা পাবেন না। হিন্দুদের CAA থাকলেও ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইন অনুযায়ী, তারা কোনও অতিরিক্ত সুবিধা দেওয়া হবে না।

• বর্ণ, লিঙ্গ, ভাষা, রাজনৈতিক সংগঠনের বিচারে CAA তে নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করা যাবে না। ভারতের তিন পড়শি দেশের ছয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর বিদেশি নাগরিকরা এই আবেদন করতে পারবেন। অন্য কোনও দেশের বিদেশি নাগরিক কিছু শর্ত পূরণের মাধ্যমে ভারতীয় নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে পারবেন।

• CAA এর ফলে কোনো মুসলিম ভারতীয় নাগরিক নাগরিকত্ব হারাবেন না।

• NRC এবং CAA সম্পূর্ণ আলাদা, এক নয়। ২০০৪ সালের ডিসেম্বর থেকেই ১৯৫৫ সালের নাগরিকত্ব আইনের সঙ্গে আইনত সংযুক্ত NRC। এই আইন কার্যকরী হবে ২০০৩ সালের কিছু নির্দিষ্ট নিয়মের ভিত্তিতে। ভারতীয় নাগরিকদের রেজিস্ট্রেশন পদ্ধতি এবং জাতীয় পরিচয় পত্র সম্পর্কিত বিষয়ের সঙ্গে এই কার্যকরী হওয়ার বিষয়টি জড়িত। বিগত ১৫-১৬ বছর থেকেই ভারতে এই আইন লাগু আছে। CAA এর দ্বারা এতে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

• CAA এর ভিত্তিতে নাগরিকত্ব নিয়ম এখনও গঠন হয় নি। আইনের সব দিক বিবেচনা করেই এই আইন গঠন করা হবে।