করোনাকে জয় করে করোনামুক্ত হলো বিশ্বের আরও একটি দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদন : বিশ্বজুড়ে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলেছে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ। আর এই ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে মুক্তি খুঁজছেন প্রতিটি দেশের বাসিন্দারা। তবে এরই মাঝে স্বস্তির খবর এটাই যে বেশ কিছু দেশ ধীরে ধীরে তাদের করোনামুক্ত দেশ বলে ঘোষণা করতে শুরু করছে। বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে নিজেদের করোনামুক্ত ঘোষণা করে স্লোভেনিয়া। আর এরপর আবার ইউরোপের মন্টেনিগ্রো ইউরোপের মধ্যে প্রথম এবং বিশ্বের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে নিজেদের করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করে। ঠিক একইভাবে এবার বিশ্বের তৃতীয় করোনামুক্ত দেশ হিসাবে ঘোষণা করল দক্ষিণ প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ ফিজি।

শুক্রবার এই দেশের প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিরামা (Frank Bainimarama) নিজেদের ১০০% করোনামুক্ত বলে ঘোষণা করেন। তিনি ট্যুইট করে জানান, “আমাদের দেশের শেষ করোনা পজিটিভ রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন। দিন দিন পরীক্ষা বাড়ানোর পর শেষ পজিটিভ ধরা পড়েছিল আজ থেকে ৪৫ দিন আগে। আমাদের দেশ কোন মৃত্যু ছাড়াই ১০০% করোনামুক্ত হলো। এর মূলে বিজ্ঞানের অগ্রগতি এবং কঠোর পরিশ্রম এই সাফল্যের পিছনে রয়েছে তা অনস্বীকার্য।”

৯ লক্ষ ৩০ হাজার জনসংখ্যার এই দেশ ফিজিতে প্রথম করোনা পজেটিভ ধরা পড়ে মার্চ মাসে। সংক্রমণ ধরা পড়ার সাথে সাথেই এই দ্বীপপুঞ্জে কঠোর নিয়মকানুন জারি করা হয়। যে কারণে সংক্রমণের হার সম্পুর্নভাবে রুখে দেওয়া সম্ভব হয়। এই দেশে মোট করোনা পজেটিভের সংখ্যা দাঁড়ায় ১৮। পাশাপাশি কঠোর ভাবে আইসোলেশন বিধি ও সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ করা শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে এই ১৮ জন রোগী সুস্থ হয়ে বাড়ি ফেরেন। সুস্থতার হার ১০০% বলে জানানো হয়েছে সরকারি ভাবে। এমনকি বিগত ৪৫ দিন ধরে এই দেশে আর কোনো করোনা পজিটিভের খবর পাওয়া যায়নি।

প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জে যে সকল মানুষ বসবাস করেন তাদের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত হৃদরোগ ও ডায়াবেটিস রোগীর সংখ্যা রয়েছে। যে কারণে এখানে করোনা সংক্রমণ ছড়ানো শুরু হতেই প্রশাসনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি এখানে রয়েছে স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর অভাব। অন্যদিকে আবার ভৌগোলিক বিচ্ছিন্নতার কারণে এই দ্বীপপুঞ্জ ভাইরাস সংক্রমণের পক্ষে আদর্শ বলেও মতামত পোষণ করেছেন বহু বিশেষজ্ঞ। গত বছরই এই দেশে হাম হয়ে মারা গিয়েছিলেন ৮৩ জন, যাদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন শিশু। কিন্তু করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তেই এখানকার প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। এই দ্বীপপুঞ্জের অর্থনীতির মূল ভিত্তি হলো পর্যটন। কিন্তু এখানকার প্রশাসন অর্থনীতিকে ভুলে দেশের মানুষের স্বার্থে সমস্ত সীমান্ত এলাকা সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করে দেয়।

আর এই সিদ্ধান্তের ফলে এই সংক্রমণ ঠেকানো যায় টোঙ্গা, ফিজির পালাউ, সলোমন দ্বীপ, সামোয়া, ভানুয়াটু, মাইক্রোনেশিয়া ইত্যাদি একাধিক দ্বীপে। ওটাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের এপিডেমিওলজিস্ট মাইকেল বেকার সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ফিজি যেভাবে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণকে রুখে দিয়েছে, নিজেদের করোনামুক্ত করেছে তা বিশ্বের কাছে একটা উদাহরণ। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপপুঞ্জ করোনা ঠেকাতে নিউজিল্যান্ডের থেকেও কয়েক ধাপ এগিয়ে গেছে।

আর এই সাফল্যের পরেও ফিজি প্রশাসন আত্মহারা না হয়ে দেশের বাসিন্দাদের সম্পূর্ণ সতর্কভাবে চলার নির্দেশ দিয়েছেন। যাতে করে প্রথম ধাক্কায় এই সংক্রমণ আটকানো সম্ভব হলেও যেন নতুন করে আবার সংক্রমণ না ছড়ায়। প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঙ্ক বাইনিরামা সকলকে বারবার হাত ধোয়া, মাস্ক পড়ে থাকা এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।