বাবার স্বপ্ন পূরণে বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখেই উচ্চমাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষা দিল নিশা

নিজস্ব প্রতিবেদন : বাবার স্বপ্ন ছিল বড় হয়ে চাকরি করবে মেয়ে। আর সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্যই মেয়েকে তিলে তিলে বড় করে তোলা। এখন মেয়ে স্কুলের গণ্ডি পার করতে চললেও স্বপ্ন পূরণ দেখা হলো না বাবার। তবে বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য বাবার আকস্মিক মৃত্যুর পর তার দেহ বাড়িতে রেখেই উচ্চমাধ্যমিকের (Higher Secondary Exam 2023) ইংরেজি পরীক্ষা দিলেন অদম্য এক মেয়ে।

উচ্চ মাধ্যমিকের ইংরেজি পরীক্ষার আগের দিন অর্থাৎ বুধবার সন্ধ্যাবেলায় মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী নিশা দাস যখন ইংরেজি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে ঠিক সেই সময় তার মা ফোন করে বলেন, ‘দেখ তোর বাবা কেমন করছে।’ এরপরেই মুহূর্তের মধ্যে থমকে যায় নিশার বাবা বছর চল্লিশের বিকাশ চন্দ্র দাসের শ্বাস প্রশ্বাস। নিশা বুঝতে পারেন আর বাবা নেই। মুহূর্তের মধ্যে বাবা হারা হয়ে যান কাঞ্চনতলা জে ডি জে ইনস্টিটিউশনের ছাত্রী নিশা।

তবে পেশায় ব্যবসায়ী বাবা যে স্বপ্ন দেখতেন সেই স্বপ্ন পূরণ করার জন্য নিশা পর দিন বাবার নিথর দেহ বিছানায় রেখে স্কুল ইউনিফর্ম পরে পৌঁছে যাই পরীক্ষা কেন্দ্রে। নিজের অদম্য প্রচেষ্টা এবং বাবার স্বপ্ন তাড়া করেই ফরাক্কার মামরেজপুরের শিবপুর গ্রামের ছাত্রী নিশা ইংরেজি পরীক্ষা দেয়। বাকি যে চারটি পরীক্ষা রয়েছে সেই চারটি পরীক্ষাও সে দেবে বলেই জানিয়েছে।

নিশা দাসের এমন অদম্য জেদ এবং সদ্য প্রয়াত বাবার স্বপ্ন পূরণের যে অদম্য চেষ্টা তা দেখে কুর্নিশ জানাতে ভোলেন নি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে পাড়া-প্রতিবেশীরা। অন্যদিকে নিশার মতোই একইভাবে বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখে পরীক্ষা দেয় বোলপুরের এক উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী মৌসুমী দলুই। দুজনেরই পরীক্ষার আগের দিন বা দিন বাবা মারা যায়। তবে দুজনেই বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য পরীক্ষায় বসে।

ফারাক্কার নিশা দাসের বাবা বিকাশ চন্দ্র দাস কয়েকদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং তার চিকিৎসা চলছিল বেঙ্গালুরুতে। চিকিৎসাধীন অবস্থাতেই সেখানে মৃত্যু হয় এবং তারপর সেই দিন রাতেই সেখান থেকে দেহ আনার বন্দোবস্ত করা হয়। বৃহস্পতিবার সকালে মৃতদেহ আসে মুর্শিদাবাদে। তবে বাবার মৃতদেহ বাড়িতে রেখেই চোয়াল শক্ত করে ১৩ কিলোমিটার দূরে চাচন্ড বাসুদেবপুর জালাদিপুর হাইস্কুলে পরীক্ষা দিতে ছুটে যায় নিশা।