কৌশিকি অমাবস্যার পৌরাণিক কাহিনী, মাহাত্ম্য ও পূজা পদ্ধতি

নিজস্ব প্রতিবেদন : ভাদ্র মাসের আজকের তিথি অনেকের কাছেই গুরুত্বপূর্ণ। যারা ধর্ম, তন্ত্র, মন্ত্র সাধনা এবং ঈশ্বর পূজায় বিশ্বাসী তাদের কাছে বিশেষ করে। কারন আজ যে সেই প্রসিদ্ধ কৌশিকী অমাবস্যা। আজ তারাপীঠে মা তারার মন্দির হয়ে ওঠে এরাজ্য তথা ভারতের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা লক্ষ লক্ষ ভক্তদের অন্যতম পূজার জায়গা। আজ মা’কে বিশেষ ভাবে পূজা দেওয়া হয়। ভক্তদের বিশ্বাস আজকের দিনে মা’কে পূজা দিলে মনের সকল ইচ্ছা পূর্ন হয়। এই কৌশিকী অমাবস্যা তারা অমাবস্যাও নামেও পরিচিত।

কৌশিকী অমাবস্যা নিয়ে যে পৌরাণিক কাহিনী রয়েছে তা হলো, এই তিথিতে দেবী কালী দুই পরাক্রমশালী অসুর শুম্ভ এবং নিশুম্ভকে হত্যা করেছিলেন। তবে এর আগেও রয়েছে একটা গল্প। শুম্ভ এবং নিশুম্ভ ছিলেন দুই অসুর ভাই। তারা তাদের পরাক্রমের বলে নিজেদের অধিকার বিস্তারে মত্ত হন, তাদের লক্ষ্য ছিল স্বর্গরাজ্য। সেই লক্ষ্যে তারা দেবলোকে আক্রমন করেন। দেবতারা তাদের কাছে পরাজয় পরাজিত হয়।

তারপর দেবরাজ ইন্দ্র এবং বাকি সকল দেবতারা মা মহামায়ার বা দেবী পার্বতীর তপস্যায় মগ্ন হন। অনেকেই বলেন, দেবী পার্বতীর নিজ কোষ থেকে মা কৌশিকীর উৎপত্তি হয়। আবার কিছু মতে তপস্যায় সন্তুষ্ট হয়ে মা মহামায়া দেবী কালীর রূপ ধারণ করে দেবতাদের সম্মুখে উপস্থিত হন। তিনি দেবতাদের অনুরোধ শোনেন এবং শুম্ভ ও নিশুম্ভকে হত্যা করবেন বলে দেবতাদের অভয় দেন। সেই মতো তিনি তার মনের রাগ এবং শরীরের কালিমা দূর করার জন্য মানস সরোবরের শীতল জলে স্নান করেন। স্নান করার ফলে তিনি তার ক্রোধ নিয়ন্ত্রণে করতে সক্ষম হন এবং তার সঙ্গে তার দেহের কালিমা দূর হয়ে পূর্ণিমার চাঁদের বর্ণ ধারণ করেন। আর তার এই নতুন রূপের নাম হয় কৌশিকী। যা তিনি এই তিথিতেই হয়েছিলেন। আর এই নতুন রূপেই তিনি দেবতাদের ত্রাস শুম্ভ এবং নিশুম্ভকে হত্যা করেন।

এছাড়াও কথিত রয়েছে, এই তিথিতে তারা মায়ের একনিষ্ঠ সাধক বামাক্ষ্যাপা তারাপীঠের শ্মশানে শ্বেত শিমুল গাছের তলায় তারা মায়ের সাধনা করে ১২৭৪ বঙ্গাব্দের সিদ্ধি লাভ করেন বা তারা মায়ের দর্শন পান। তাই তন্ত্র সাধনা বা মন্ত্র সাধনা করেন যেসব তান্ত্রিক বা সাধকরা তাদের কাছে এই তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়াও বলা হয় আজকের দিনের এক বিশেষ মুহূর্তে স্বর্গ এবং নরকের দরজা কয়েক মুহূর্তের জন্য খুলে যায়। তাই আজকের দিনে যারা দ্বারকা নদীতে স্নান করে তন্ত্র সাধনা বা যজ্ঞ করেন তারা সিদ্ধি লাভের মাধ্যমে শুভ এবং অশুভ ক্ষমতা অনেকটা বাড়িয়ে নিতে পারেন।

শুধু হিন্দু শাস্ত্রে নয় বৌদ্ধ শাস্ত্রেও এই তিথির বেশ গুরুত্ব রয়েছে। আজকের দিনে সাধক তার কুন্ডলিনী চক্রকে জয় করতে পারেন বলে উল্লেখ রয়েছে। তাই সমস্ত কিছুর বিচারেই এই তিথি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

পূজার সময় যা যা করতে হয়

আজ এই তিথিতে তারা মায়ের পূজার অন্যতম পবিত্র তিথি। যারা মন্দিরে বা বাড়িতে তারা মায়ের মূর্তি বা ছবি বা পদযুগল রেখে পূজা করবেন তারা অবশ্যই পূজা করার সময় ১০৮ বার তারা মায়ের নাম মনে মনে যপ করবেন। তারপর প্রণাম করার সময় তারা মায়ের কাছে নিজের মনস্কামনা তুলে ধরবেন। ভক্তি ভরে মা’কে পূজা করলে এই দিন করুনাময়ী, বিপদতারিণী মা আপনার সকল ইচ্ছা পূরণ করবেন। এই দিন মায়ের আরতি বা পূজা করার সময় অবশ্যই ঘিয়ের প্রদীপ জ্বালাবেন। এছাড়াও এইদিন মায়ের পূজায় অবশ্যই দিন শ্বেত পদ্ম। এছাড়াও পূজা করার সময় অবশ্যই কুশের আসনে বসে মায়ের পূজা করুন। মাকে পূজা দেবার সময় ফুল হিসাবে অবশ্যই যা দিতে হবে তা হল রক্তজবা ফুলের মালা।

কৌশিকী অমাবস্যার টোটকা

পুজোর দিন অর্থাৎ আজ বাড়ির ভিতরে কোনরকম নোংরা আবর্জনা রাখবেন না। সকল আবর্জনা বাড়ির বাইরে নির্দিষ্ট জায়গায় রেখে আসুন বা ফেলে দিন। আর এইসব করতে হবে পূজার শুভক্ষন শুরু হবার আগেই।

এছাড়াও বাড়ির ভিতরে থাকা ছিঁড়ে যাওয়া জামা প্যান্ট বা অন্যান্য কাপড় এদিক ওদিক ফেলে রাখবেন না। এইসব কাপড় বা জামা একটি জায়গায় রেখে কোন একটি গুপ্ত স্থানে রাখুন, যাতে করে সহজেই কারোর নজরে আসে না। সবথেকে ভালো এইসব জামা কাপড় গরিবদের বা অন্য কাউকে দিয়ে দিন।

এই তিথিতে বাড়ির মধ্যে তারা মায়ের পূজার পর মাটিতে গর্ত করে তাতে সামান্য দুধ ঢেলে দিন, এতে আপনার ধন প্রাপ্তি হবে।

সন্ধ্যা বেলা থেকে বাড়ির সদর দরজায় তিলের তেলের দুটি প্রদীপ দরজার দুই দিকে জ্বালান। দেখবেন ঘরের সকল কুপ্রভাব কমে যাবে।

এছাড়াও এই দিন বাড়ির মধ্যে পায়েস রান্না করে বট গাছের তলায় তার কিছু অংশ একটি পাত্রে করে রেখে আসুন। দেখবেন আপনার শুভ কিছু ঘটবেই।

এছাড়াও শুকনো নারকেলের খোলের মধ্যে ফুটো করে আটা পুরের মতো ভরে বাড়ির বাইরে কোন নির্জন জায়গায় পূজার পর গিয়ে মাটিতে নারকেলের ফুটো করা মুখ উপরের দিকে রেখে পুঁতে দিন। তারপর পুঁতে আসার সময় আর পিছন ফিরে তাকাবেন না। আপনার ও আপনার বাড়ির কুনজর আর কাজ করবে না। আপনার প্রতিটি কাজ শুভ হবে।

এছাড়াও এই তিথিতে দুটি জ্যান্ত মাছ নিয়ে বাড়ির সামনে কোন পুকুর বা জলাশয়ে ছেড়ে দিন দেখবেন আপনার অবশ্যই ধনযোগ হবে।

বিঃদ্রঃ – উপরের বর্ণিত টোটকা বা তথ্যের কোন বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নেই। আমরা শুধু বিভিন্ন পৌরাণিক বা শাস্ত্রে বর্ণিত বেশ কিছু অংশ তুলে ধরেছি আপনাদের কাছে।