চিকিৎসা করাতে গিয়ে আলাপ, পরে প্রেম, HIV পজিটিভ দুই যুবক যুবতীর বিয়ে

কখন, কোথায়, কোন পরিস্থিতিতে দুজন মানুষ প্রেমে বাঁধা পরে যাবেন সেকথা আগে থেকে বলা যায় না। সেই রকমই ঘটনা ঘটলো সুনিতা ও সৌমিত্রর মধ্যের। তারা দুজনেই এইচআইভি (HIV positive Marrige) চিকিৎসার জন্য প্রতিমাসে মেডিকেল কলেজে যেতেন। আর সেখানেই তাঁদের পরিচয় হয়। প্রথমে আলাপচারিতা, তারপর তাদের প্রেমের সম্পর্ক পায় শুভ পরিণতি।

দক্ষিণ ২৪ পরগনার সোনারপুরের গোবিন্দপুরে আপনজন নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা এইচআইভি পজেটিভ শিশুদের নিয়ে কাজ করে। যে সমস্ত পিতা-মাতা এইচআইভিতে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তাদের বাচ্চাদেরকে এই হোমে রেখে বড় করা হয়। সেরকমভাবেই এই হোমে উপস্থিত হয়েছিল মেদিনীপুরের সুনিতা যাদব। বর্তমানে সুনিতা উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ক্যাফে পজিটিভ নামে একটি কফি শপের ফ্লোর ম্যানেজারের দায়িত্ব সামলাচ্ছে। কিন্তু প্রতিমাসে তাকে মেডিকেল কলেজে যেতে হয় অ্যান্টি রেট্রোভাইরাল ভাইরাল থেরাপি চিকিৎসার জন্য। সেখানে একই কারণে আসতে হয় সৌমিত্রকে। দুজনের আলাপ হয় সেখান থেকেই।

গত রবিবার হোমে আয়োজিত হয় তাদেরই বিয়ের অনুষ্ঠান। বিয়ের মধ্যে দিয়ে তাঁরা পা রাখে নিজেদের দাম্পত্য জীবনে। উদ্যোক্তাদের দাবি সঠিক চিকিৎসা পদ্ধতি পেলে দুজন পজেটিভ এইচআইভি পিতামাতার থেকেও সুস্থ সন্তান পাওয়া সম্ভব। এইচআইভি আক্রান্তদের সমাজ যাতে বাঁকা চোখে না দেখে তাঁদের পাশে দাঁড়ায়, তাঁদেরকে সুস্থ সমাজ উপহার দেয় সেই কারণেই এই উদ্যোগ নিয়েছেন উদ্যোক্তারা।

রবিবার সন্ধ্যায় শাখ, উলুধ্বনি আর সানাইয়ের মধ্যে দিয়ে এই দুই এইচআইভি পজিটিভ মানুষ প্রবেশ করলেন নিজেদের দাম্পত্য জীবনে। এই দম্পতি সমাজকে আরো একটি বার্তা দিতে বিয়ের অনুষ্ঠানটিও করলেন অন্যরকম নিয়মে। তাদের সমগ্র বিয়ের মন্ত্রচারণ থেকে শুরু করে অগ্নিসাক্ষী হল অন্য ধাঁচে। কন্যাদান নয়, শুভমস্তু রীতিতে হল বিয়ের অনুষ্ঠান।

বিয়েতে চার মহিলা পুরোহিত বৈদিক মন্ত্র উচ্চারণ করলেন এবং সেই মন্ত্রের ব্যাখ্যা করলেন। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের গান গেয়ে গোটা বিয়ের মঞ্চে একটা আলাদা আবেশ তৈরি করেছিলেন। এই বিয়েতে কোনও রকম কার্পণ্য করেননি হোম কর্তৃপক্ষ। মানসিকভাবে পজেটিভ দুটি মানুষ অগ্নিসাক্ষী রেখে মালা বদল করে সাত পাকে বাঁধা পড়লেন। এভাবে বিয়ে করতে পেরে যেমন খুশি নব দম্পতি, তেমনি খুশি বিয়েতে আগত অতিথিরাও মুগ্ধ।