জাতীয় পতাকা ব্যবহারের রয়েছে বিশেষ কতকগুলি বিধিমালা ও আইন কানুন

নিজস্ব প্রতিবেদন : স্বাধীনতা দিবস হোক অথবা প্রজাতন্ত্র দিবস জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে রয়েছে কতকগুলি বিশেষ বিধিমালা এবং আইন কানুন। জাতীয় পতাকা বিশেষ দিনে ব্যবহারের আগে আমরা কতটা পালন করে থাকি সেই বিধিমালা ও নিয়ম কানুনকে! স্বাধীনতা দিবস অথবা প্রজাতন্ত্র দিবসে জাতীয় পতাকা ব্যবহারের আগে অবশ্যই এগুলো সম্পর্কে জেনে রাখা প্রয়োজন।

জাতীয় পতাকা দেশের স্বভিমান এবং ঐতিহ্যকে তুলে ধরে। তাই জাতীয় পতাকাকে ব্যবহারের সময় আমাদের সকলের উচিত তার উপযুক্ত সম্মান দেওয়া। আমাদের অনেকের মধ্যেই জাতীয় পতাকা ব্যবহারের নিয়ম কানুন সম্পর্কে ধারণা নেই। জাতীয় পতাকার যথাযথ ব্যবহার এবং সম্মান প্রদর্শনের জন্য ২০০২ সালে ভারত সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বেশ কিছু নির্দেশাবলী জারি করেছিল যা ‘ফ্ল্যাগ কোড অফ ইন্ডিয়া’ নামে পরিচিত। ভারতের ঐতিহ্য ও স্বভিমান জাতীয় পতাকাকে ব্যবহার করার আগে অবশ্যই জেনে রাখা উচিত সেই সকল নিয়ম কানুনকে।

Source

জাতীয় পতাকার আকার অবশ্যই আয়তাকার হতে হবে, যার মাপ হবে ৩:২ অনুপাতে। এছাড়াও যানবাহন এবং বিভিন্ন জায়গায় জাতীয় পতাকা ব্যবহারের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট করে দেওয়া হয়েছে জাতীয় পতাকার সাইজ। যেমন বিশিষ্ট দেশ প্রধান বা গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বিমানে ৪৫০×৩০০ মিলিমিটার সাইজের জাতীয় পতাকা ব্যবহার করতে হবে। মোটর গাড়িতে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করলে ২২৫x১৫০ মিলিমিটার সাইজের পতাকা ব্যবহার করতে হবে। প্রশাসনিক টেবিলে জাতীয় পতাকা রাখার জন্য সাইজ হবে ১৫০x১০০ মিলিমিটার।

ভারতের জাতীয় পতাকা প্রদর্শনের ক্ষেত্রে ভারতের সাধারণ নাগরিক, সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নেই যদি তারা নির্দিষ্ট নিয়ম মেনে চলেন। আর সেই নিয়মগুলি হলো –

স্বাধীনতা দিবস, গণতন্ত্র দিবস, মহাত্মা গান্ধীর জন্মদিন। এছাড়াও এপ্রিল মাসের ৬ তারিখ থেকে ১৩ তারিখ পর্যন্ত জালিয়ানওয়ালাবাগের হত্যাকাণ্ডে শহীদ দেশবাসীর স্মৃতিতে ও রাজ্য সরকার কতৃক ঘোষিত বিশেষ কিছু দিনে এবং রাজ্য প্রতিষ্ঠা দিবসের মত বিশেষ কতকগুলি দিনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান অথবা সরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত হওয়ার আগে পর্যন্ত পতাকা উত্তোলিত করা অবস্থায় রাখা যেতে পারে।

Source
  • কোনরকম ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা যাবে না জাতীয় পতাকাকে।
  • তরল জাতীয় কোন পদার্থে জাতীয় পতাকাকে ডোবানো যাবে না।
  • জাতীয় পতাকাকে ব্যবহার করা যাবে না পোশাকের অংশ অথবা পোশাক রূপে।
  • জাতীয় পতাকাকে সেলাই করা যাবে না অথবা বালিশ, চাদর, গামছা, রুমালের মত কোন কিছুর উপর প্রিন্ট করা যাবে না।
  • জাতীয় পতাকার উপর যে কোন রকম লেখালেখি নিষিদ্ধ।
  • জাতীয় পতাকাকে কোন কিছু দিয়ে ঢাকা দেওয়া অথবা জাতীয় পতাকার ব্যবহার করে কোন কিছু বহন করা যাবে না।
  • জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে যেন গেরুয়া রং সবসময় উপরে থাকে। অর্থাৎ উল্টোভাবে জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা জাতির অবমাননা।
  • জাতীয় পতাকাকে মঞ্চ বা টেবিল ঢাকা দেওয়ার জন্য ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
  • ছিঁড়ে যাওয়া অথবা ক্ষতিগ্রস্ত জাতীয় পতাকা উত্তোলন অথবা অন্য কোন কাজে ব্যবহার করা নিষিদ্ধ।
  • সূর্যোদয় এবং সূর্যাস্ত এই সময়ের মধ্যেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন অবস্থায় থাকা বাধ্যতামূলক। অর্থাৎ অন্ধকার নামার আগেই জাতীয় পতাকাকে উত্তোলন স্থল থেকে যথাযথ মর্যাদায় নামিয়ে নিতে হবে।
Source

তবে ভারতের বিভিন্ন হাইকোর্ট, রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সচিবালয়, পুলিশ কমিশনের অফিস, জেলা কালেক্টারের অফিস, কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সংশোধনাগার, জেলা পরিষদ অফিস, জেলা প্রশাসন ভবন, এছাড়াও সরকারি অধিগ্রহনকারী বিভিন্ন সংস্থার কার্যালয়ে প্রতিদিন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা যেতে পারে। তবে সূর্যাস্তের পর যথাযথ মর্যাদায় তা খুলে রাখতে হবে এবং রবিবার ও ছুটির দিন পতাকা উত্তোলন বন্ধ থাকবে।

এছাড়াও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফ থেকে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, সস্তা প্লাস্টিকের তৈরি জাতীয় পতাকা ব্যবহার করা উচিত নয়।

গোপন অথবা প্রকাশ্যে জাতীয় পতাকার অপমান করলে ১৯৭১ (The Prevention Of Insult To National Honour Act)-এর ২ নং ধারা অনুযায়ী ওই ব্যক্তি হবেন। দোষ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ তিন বছরের কারাদণ্ড এবং জরিমানা করা হতে পারে।