অদম্য ইচ্ছে শক্তি, মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে পরপর ৩ বার সফল হয়ে IAS শ্বেতা আগরওয়াল

নিজস্ব প্রতিবেদন : অদম্য ইচ্ছাশক্তিই যে জীবনে সবথেকে বড় সাফল্য এনে দিতে পারে, সে কথা আকছার শোনা যায়। কিন্তু সেই কথা কি শুধু মুখের কথা! মোটেই না। তার প্রমাণ পাওয়া যায় আইএএস অফিসার শ্বেতা আগরওয়ালের জীবন সংগ্রামের কথায়। আর সেই জীবন সংগ্রামের কথা নিজেই জানিয়েছেন বর্তমানে রামপুরহাটের এসডিও আইএএস অফিসার শ্বেতা আগারওয়াল।

শ্বেতা আগারওয়ালের জন্ম মধ্যবিত্ত মারোয়ারি যৌথ পরিবারের। তাঁর বাবা মাকে তাঁর দাদু ঠাকুমা প্রথম থেকেই বলে আসতেন, “তোমাদের তো একটাই মেয়ে, দ্বিতীয় সন্তান নাও অথবা একটা পুত্র সন্তান দত্তক নাও।” কারণ তাঁদের মধ্যে ধারণা ছিল, পুত্র সন্তান না থাকলে ভবিষ্যতে শ্বেতার বাবা-মাকে দেখবে কে? কিন্তু তাঁরা কখনোই ভেবে উঠতে পারেননি এই মেয়েটাই একদিন গর্বিত করবে পরিবারের সকলকে, সেই হয়ে উঠবে ভবিষ্যতের কান্ডারী।

যৌথ পরিবারে ১৫ জন ভাই বোনের মধ্যে মানুষ হয়ে ওঠা শ্বেতা আগারওয়াল সবার ছোট ছিলেন। এক এক করে সব খুড়তুতো বোনেদের বিয়ে হয়ে গেলেও এই মেয়েটি বলতেন, “বাবা আমি পড়তে চাই।” আর সেই অদম্য চেষ্টায় এবং জেদ থেকেই হুগলির ভদ্রেশ্বরের সেই মেয়ে আজ পরপর তিনবার আইএএস অফিসার।

এটুকু শুনে হয়তো আলাদা আর পাঁচজন আইএএস অফিসারের সাথে শ্বেতা আগারওয়ালের জীবন সংগ্রামের লড়াইয়ে আলাদা কিছু চোখে নাও পড়তে পারে। কিন্তু লড়াইটা যতটা সহজ মনে হচ্ছে, ততটা সহজ ছিল না। তাঁর শৈশবের আবহ থেকে এমন সফলতা পুরোটাই স্বপ্নের মত। পারিবারিক এবং পারিপার্শ্বিক চাপে সেই স্বপ্ন অবশ্য থেমে যায়নি, এগিয়ে গিয়েছে। কোন রকম সংসার চলা পরিবার থেকে সফল আইএএস অফিসার।

আর এই সংগ্রামে তাঁর বাবার লড়াই! মেয়ের সমস্ত কিছুকে উৎসর্গ করা লড়াই। বাবার সেই সংগ্রামকে বাস্তবের রূপ দিয়েছেন শ্বেতা আগারওয়াল। যৌথ পরিবারের সদস্য হয়ে শ্বেতা আগারওয়ালকে ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পাঠানোই ছিল তাঁর বাবার জীবনের সব থেকে বড় লড়াই। পরিবারের সকলেই হিন্দি অথবা বাংলা মাধ্যমের পড়ুয়া, শ্বেতার বাবা সমস্ত খরচ সামলানোর পর মাসিক ১৬৫ টাকা বেতন দিয়ে শ্বেতাকে পাঠান চন্দন নগরের কনভেন্ট স্কুলে। শ্বেতা আগারওয়ালের কথা অনুযায়ী, “বাবা ভাবতেন রোজ ১০ টাকা রোজগার করলেও যদি প্রতিদিন সাড়ে পাঁচ টাকা করে রেখে দেওয়া যায়, তাতেও মেয়ের স্কুলের ফি জোগাড় হয়ে যাবে মাসের শেষে।” আর এই ভাবেই যে পরিবারে মেয়েদের শিক্ষাকে অপ্রয়োজনীয় মনে করা হতো, সেই পরিবারেই শ্বেতা আগারওয়াল প্রথম স্নাতক হন।

সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজ থেকে ইকোনমিক্সে স্নাতক হওয়ার পর তিনি এমবিএ করেন। তারপর চাকরিও পান, কিন্তু আইএএস হবার স্বপ্নে সেই চাকরি ছেড়ে দেন। চাকরি ছাড়ার সময় অফিসের বস প্রশ্ন করেছিলেন, যে চাকরিতে চার লক্ষ পরীক্ষার্থীর মধ্যে মাত্র ৯০ জন পাশ করে, সেই পরীক্ষার জন্য এত ভাল চাকরি ছেড়ে দেওয়ার ঝুঁকি হবে নাতো? সেই প্রশ্নের উত্তরে অদম্য শ্বেতা আগারওয়াল জানিয়েছিলেন, তিনি সেই ৯০ জনের মধ্যেই থাকবেন।

আইএএস পরীক্ষায় কোচিং নিয়ে বসা এশিয়ার কঠিনতম পরীক্ষা ইউপিএসসির সিভিল সার্ভিসে। প্রথম বার হয়নি, দ্বিতীয়বারে র‍্যাঙ্ক ৪৯৭। আবার পরীক্ষায় বসা, র‍্যাঙ্ক ১২৭। ১০ নাম্বার কম থাকায় তাঁকে যেতে হয় আইপিএস ট্রেনিংয়ে। কিন্তু তাঁর টান ছিল না খাঁকি পোশাকে। ফের পরীক্ষায় বসা। আর এবার দেশের ১৯তম জায়গা, যা বাংলায় বিগত দশ বছরে সেরা রেজাল্ট।