ভারতের চন্দ্র অভিযান সফল না অসফল! কি জানাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা

নিজস্ব প্রতিবেদন : শুক্রবার রাত ১:৩৮ মিনিটের পর চাঁদের মাটি থেকে মাত্র ২.১ কিলোমিটার দূরে বিক্রমের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কিন্তু তার কিছুক্ষনের মধ্যেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিক্রমের সাথে। হতাশ হয়ে পড়েন ইসরোর বিজ্ঞানীরা। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে চন্দ্রযান পাঠানো হয়েছিল সেই উদ্দেশ্য কতটা সফল হয়েছে। সে প্রসঙ্গে বলা যায়, চন্দ্রযানের অরবিটার এখনও কাজ করছে। কিছুটা দূর থেকে চাঁদকে সে এখনও পর্যবেক্ষণ করে চলেছে। এই অরবিটার চাঁদের অনেক ছবি তুলে এখনও ইসরোকে পাঠাতে পারে। যা বিজ্ঞানীদের অনুমান এক দুদিনের শুরু হবে। এমনকি ল্যান্ডার বিক্রমের ছবি তুলেও তার বর্তমান অবস্থান ও পরিস্থিতির ব্যাপারে বিজ্ঞানীদের জানাতে পারে।

প্রজ্ঞান রোভারে যে দুটি ডিভাইস ইন্সটল করা হয়েছিল তার কাজ ছিল চন্দ্রপৃষ্ঠের নানান উপাদানগুলি পরীক্ষা করে সেগুলিকে শনাক্ত করা। ল্যান্ডার বিক্রমের রয়েছে তিনটি ডিভাইস। এদের কাজ হলো চাঁদের বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা এবং তাপ পরিবাহিতা নিয়ে গবেষণা করা। চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে থাকা অরবিটারে রয়েছে ‘ফোরেন ম্যাপিং ক্যামেরা ২’। চাঁদকে প্রদক্ষিণ করতে করতে প্রতি পাকে চাঁদের পিঠের কুড়ি কিলোমিটার চওড়া ফিতের মত এলাকার ছবি তুলতে সক্ষম এই ক্যামেরা।

এছাড়াও এর ভিতরে রয়েছে ‘চন্দ্রযান ২ লার্জ এরিয়া সফ্ট এক্সরে স্পেকট্রোমিটার’, ‘সোলার এক্সরে মনিটর অরবিটার’, ‘হাই রেজুলেশন ক্যামেরা ইমেজিং’,  ‘ইনফ্রারেড স্পেকট্রোমিটার ফ্রিকোয়েন্সি সিনথেটিক অ্যাপারচার কম্পোজিশন এক্সপ্লোরার’ ও ‘ফ্রিকোয়েন্সি রেডিও সাসপেন্স’ নামে পরীক্ষা যন্ত্র। চন্দ্রযানের তিনটি অংশ এবং অরবিটারের কাজ চাঁদের মাটিতে অবতরণ করানো, নমুনা সংগ্রহ ও যাচাই করা অর্ডারের কাজ, ছবি তুলে সেই ছবি পাঠানো। তবে শুধু ছবি পাঠানো নয় পৃথিবীর সঙ্গে বিক্রমের যোগাযোগের মূল সেতু অরবিটারের।

এএনআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে ইসরোর এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “আমাদের মিশনের ৫% ব্যর্থ হয়েছে। হতাশ করেছে ল্যান্ডার বিক্রম এবং রোভার প্রজ্ঞান। বাকি ৯৫% অর্থাৎ চন্দ্রযান-২ এর অরবিটার চাঁদকে এখনো প্রদক্ষিণ করে চলেছে। এই অরবিটার এখনো চাঁদের অনেক ছবি তুলে ইসরোকে পাঠাতে পারে। এমনকি ল্যান্ডার বিক্রমে ছবি তুলে ও তার বর্তমানের অবস্থা সম্পর্কে ইসরোর বিজ্ঞানীদের অবগত করতে পারে সে।”

প্রথম ১৩ মিনিট যেরকম ভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছিল ঠিক সেভাবেই ল্যান্ডার যাত্রাপথে ছিল। তবে চাঁদে অবতরণ করার ২.১ কিলোমিটার আগে ইসরোর সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এখন এর দুটি দিক থাকতে পারে। প্রথমত, বিক্রম ল্যান্ডার অতিরিক্ত গতি নিয়ে চাঁদে নেমেছিল এবং ক্রাশ করেছিল। অর্থাৎ আমরা ধরতে পারি ল্যান্ডার চাঁদে অবতরণ করেছে।

আর দ্বিতীয়ত, এমনটাও হতে পারে যে বিক্রম ল্যান্ডার চাঁদের একটি নরম অংশে অবতরণ করেছিল এবং যাত্রাপথের মাঝামাঝি সময়ে গ্রাউন্ড স্টেশনের সাথে ল্যান্ডারটি যোগাযোগ হারিয়ে ফেলে। তবে এরকম হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। যদিও আসলে কি ঘটেছে সেটা তখনই জানা সম্ভব যখন ল্যান্ডারের সাথে গ্রাউন্ড স্টেশনের আবার সংযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।

যদিও ল্যান্ডার এবং রোভার সেখানে কেবল মাত্র ১৪ দিন কাজ করবে। তবুও অবসরপ্রাপ্ত এক ইসরো বিজ্ঞানী জানিয়েছেন যে, “বিজ্ঞানের ভাষায় চন্দ্র অভিযান এখনও অনেকাংশে বেঁচে আছে। কোন অংশেই এখনো শেষ হয়ে যায়নি।”