পি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করা হল কেন? কি কি অভিযোগ রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে?

নিজস্ব প্রতিবেদন : বুধবার রাত্রি পৌনে দশটা নাগাদ ইউপিএ জামানার প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমকে সিবিআই তাঁর বাড়ি থেকে নিজেদের হেফাজতে নেয়। দিন দুয়েক ধরে নাটক চলার পর ইডি লুকআউট নোটিশ বের করে, তারপর সেই নাটকের অবসান ঘটিয়ে সিবিআইয়ের হেফাজতে চিদম্বরম। কিন্তু প্রশ্ন হল কোন কোন অভিযোগে অভিযুক্ত ইউপিএ জামানার এই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী।

প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় অভিযুক্ত একথা কারোর অজানা নয়। কিন্তু আরও অভিযোগ রয়েছে ইউপিএ জামানার এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর বিরুদ্ধে। তাঁর ভূমিকা রয়েছে বলে অভিযোগ এয়ারসেল-ম্যাক্সিসের ৩৫০০ কোটি টাকার চুক্তি এবং ৩০৫ কোটি টাকার আইএনএক্স মিডিয়া মামলায়। ২০১৭-র ১৫ মে মাসে আইএনএক্স মিডিয়া মামলায় চিদম্বরমের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে সিবিআই। তারপর আবার ২০১৮ সালে টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ তুলে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করে ইডি-ও। এর জেরেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই এবং ইডি তাঁকে স্ক্যানারের নিচে নিয়ে আসেন। তবে এই সব মামলায় তিনি কিভাবে জড়িয়ে গেলেন?

কংগ্রেসের এই দুঁদে নেতার এইসব মামলায় জড়িয়ে যাওয়ার মূলে রয়েছে শ্রী ঘরে বন্দি প্রভাবশালী এক মহিলা, তিনি হলেন ইন্দ্রানী মুখার্জি। ইন্দ্রানী মুখার্জি এবং তাঁর স্বামী পিটার ছিলেন আইএনএক্স মিডিয়ার অন্যতম দুই প্রোমোটার। এই দুই প্রোমোটারের বিরুদ্ধে আর্থিক দুর্নীতির অনেকগুলি অভিযোগ রয়েছে। আইএনক্স মিডিয়ায় আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগে অভিযুক্ত ইন্দ্রানী মুখার্জির বয়ানে বিপাকে পড়েন প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। আর্থিক দুর্নীতির মামলায় কি এমন বয়ান দিয়েছিলেন ইন্দ্রাণী মুখার্জি?

ইন্দ্রানী মুখার্জির এডিকে দেওয়া বয়ান অনুযায়ী, আইএনক্স মিডিয়ার ২ প্রমোটার এবং একজন সিনিয়র এক্সিকিউটিভ ইউপিএ জামানায় তৎকালীন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের দ্বারস্থ হন বিদেশী অর্থ বিনিয়োগের বিষয়ে। এই আর্থিক লেনদেন এফআইপিবি খারিজ করেছিল আগে।

খারিজ করা সেই আর্থিক লেনদেনে ছাড়পত্র দেন পি চিদম্বরম। তবে এই ছাড়পত্র দেওয়ার পরিপ্রেক্ষিতে রাখা হয় শর্ত। কংগ্রেসের এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী শর্ত রাখেন তাঁর ছেলে কার্তিকে তাদের ব্যবসায়ী জায়গা করে দিতে হবে। তবে আর্থিক লেনদেনের মূল অঙ্গ জানায় নি ইন্দ্রানী মুখার্জী।

তবে পি চিদম্বরমের গ্রেফতারের ঘটনায় কংগ্রেস পন্থী রাজনৈতিকবিদদের মন্তব্য, প্রতিহিংসাপরায়ণবশত প্রাক্তন এই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরমকে গ্রেফতার করেছে মোদি সরকার কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইকে কাজে লাগিয়ে। কারণ ২০০৫ সালে অমিত শাহ গুজরাটের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী থাকাকালীন কুখ্যাত দুষ্কৃতী সোহরাবউদ্দিন শেখের মৃত্যু হয় জেলের মধ্যে। অভিযোগ ওঠে জেলের মধ্যে অমিত শাহের নির্দেশেই এনকাউন্টার করে মারা হয় এই কুখ্যাত দুষ্কৃতীকে। ২০১০ সালে এই মামলা যায় সিবিআইয়ের হাতে।

যে সময় কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন পি চিদম্বরম। সেই জুলাই মাসে এই মামলায় গ্রেপ্তার হন অমিত শাহ। এরপর তিন মাস পর জামিন পান অমিত শাহ। এমনকি ২০১০ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত অমিত শাহ গুজরাটে ঢুকতে পারেননি। এবার ২০১৪ সালে মোদি সরকার কেন্দ্রে এলে অমিত শাহ সমস্ত মামলা থেকে মুক্তি পান। আর পাঁচ বছর পর সেই ঘটনার প্রতিচ্ছবি। ২০১৯ সালে পি চিদম্বরম সিবিআইয়ের জালে আর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।