লাল্টু : কথায় আছে বিশ্বে অসাধ্য সাধন বলে কিছু নেই। তবে এই অসাধ্যকে সাধন করার জন্য প্রয়োজন হয় একাগ্রতা, প্রচেষ্টা এবং মনোবল। এই তিনটে জিনিস যদি কারোর মধ্যে থাকে তাহলে তার পক্ষে সমস্ত কিছুই সাধন করা সম্ভব হয়ে ওঠে। আর এই তিন গুণসমৃদ্ধ ব্যক্তির কাছে তার লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য কোনদিন আর্থিক দিক হোক অথবা অন্যকিছু, কোন কিছুই বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন না। ঠিক এমনটাই প্রমাণ করলো বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের খণ্ডগ্রামের বাসিন্দা মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী জগন্নাথ দাস।
২০২০ সালের হাই মাদ্রাসা মাধ্যমিক পরীক্ষার ফলাফল বের হয় বৃহস্পতিবার। এবছর করোনা আবহের কারণে ফলাফল বেরিয়েছে অনলাইনে। আর সেই অনলাইনে ফলাফল বের হতেই জানা যায় বীরভূমের ওই পড়ুয়া রাজ্যে ষষ্ঠ স্থান অধিকার করেছে। জগন্নাথ দাসের প্রাপ্ত নম্বর ৭৬০। সে খন্ডগ্রাম ডি এস হাই মাদ্রাসার পড়ুয়া। রাজ্যের ষষ্ঠ স্থান অধিকার করার পাশাপাশি জগন্নাথ জেলায় প্রথম স্থানের অধিকারী চলতি বছরের হাই মাদ্রাসা মাধ্যমিক পরীক্ষায়।
জগন্নাথ দাসের বাবা দীনবন্ধু দাস সামান্য একজন ক্ষুদ্র চাষী। যার বাৎসরিক আয় যৎসামান্য। একেবারে দিন আনা দিন খাওয়া অবস্থাতেই তাদের সংসার চলে। চাষের কাজ করার পাশাপাশি দীনবন্ধু বাবু ওই হাই মাদ্রাসারই ছোটখাটো বিভিন্ন কাজে সহযোগিতা করেন। যা থেকে অল্পবিস্তর সাহায্য পাওয়া যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। জগন্নাথের মা রিনা দেবী একজন সাধারণ গৃহবধু।
সংসারে একেবারেই আর্থিক স্বচ্ছলতা না থাকায় জগন্নাথ ছোট থেকে পড়াশুনা করার জন্য এখনো পর্যন্ত কোনদিন গৃহশিক্ষক নিতে পারেননি বলে জানা গিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে। স্কুলের শিক্ষকরা জানিয়েছেন, জগন্নাথ সম্পূর্ণ নিজের প্রচেষ্টায় পড়াশোনা চালিয়ে যেত। স্কুল এবং স্কুলের শিক্ষকদের তরফ থেকে পড়াশোনা বিষয়ক যেকোনো রকম সহযোগিতার প্রয়োজন হলে তাকে সহযোগিতা করা হতো। ছোট থেকেই মেধাবী ছাত্র শিক্ষকদের নজরে ছিল। তবে মাধ্যমিকে এতটা ভাল ফলাফল করে ফেলবে এটা কারোর ভাবনা চিন্তার মধ্যে ছিল না।
হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিকে রাজ্যের ষষ্ঠ স্থান অধিকার করার পর বীরভূমের এই জগন্নাথ খুশিতে আত্মহারা। পাশাপাশি তার এই সাফল্যের জন্য খুশি স্কুলের শিক্ষক শিক্ষিকারা এবং পাড়া-প্রতিবেশী ও বাবা মা। আর এমন ভালো ফল করার পর জগন্নাথ এখন চাষীর ঘর থেকে জীবনের অধরা স্বপ্ন পূরণের লক্ষ্যে ছুটবে বলে জানিয়েছে।
হাই মাদ্রাসা মেধাতালিকা ২০২০
প্রথম : নাফিসা খাতুন (৭৭১), জঙ্গিপুর মুনিরিয়া হাই মাদ্রাসা, মুর্শিদাবাদ।
দ্বিতীয় : তামান্না ইয়াসমিন (৭৬৯), বটতলা আদর্শ হাই মাদ্রাসা, মালদা।
তৃতীয় : আবু বক্কর (৭৬৭), লালগোলা রহমতুল্লাহ হাই মাদ্রাসা, মুর্শিদাবাদ।
চতুর্থ : ১) রিকি আরিফ (৭৬৫), আমিনাবাদ হাই মাদ্রাসা, মুর্শিদাবাদ।
চতুর্থ : ২) মিজানুর রহমান (৭৬৫), জগন্নাথপুর হাই মাদ্রাসা, মালদা।
পঞ্চম : ১) মোঃ আফিফুদ্দিন (৭৬৩), রামনগর হাই মাদ্রাসা, মালদা।
পঞ্চম : ২) মোবারক হোসেন (৭৬৩), রানিননগর হাই মাদ্রাসা, মালদা।
ষষ্ঠ : জগন্নাথ দাস (৭৬০), খন্ডগ্রাম ডি এস হাইমাদ্রাসা।
সপ্তম : ১) সিমলা আক্তার মিরু (৭৫৮), আমিনাবাদ হাই মাদ্রাসা, মুর্শিদাবাদ।
সপ্তম : ২) সেলিম আক্তার (৭৫৮), মালদা।
অষ্টম : সহেলি মল্লিক (৭৫৬), রামনগর হাই মাদ্রাসা, মুর্শিদাবাদ।
নবম : নাফিসা আক্তার (৭৫৪), চান্দুয়া হাই মাদ্রাসা, মালদা।
দশম : রহিমা পারভিন ( ৭৫২), এম এন এস হাই মাদ্রাসা, মালদা।