প্রথা মেনে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা পালিত হলো হেতমপুরে, একনজরে প্রচলিত কাহিনী

লাল্টু : শতাব্দী প্রাচীন সময় ধরে হেতমপুর রাজবাড়ী থেকে রথ আসছে। এই রথকে ঘিরে আশেপাশের মানুষদের মধ্যে থাকে বিপুল উৎসাহ। রথ উপলক্ষে বসে একদিনের গ্রাম্য মেলাও। রাজাদের রাজত্বকালে হত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। কিন্তু বর্তমানে সব অতীত। বলাই বাহুল্য সেই রাজাও নেই, সেই রাজত্বও নেই।

২০০৭ সালে হেতমপুর রাজবাড়ীর গৌরাঙ্গ মন্দিরের দায়িত্ব তুলে দেওয়া হয় গৌরাঙ্গ মঠের হাতে। এরপর থেকে তারাই মন্দির ও রথের পরিচালনা করে আসছেন।

করোনা অতিমারি কালে মন্দিরে ভক্ত এবং সন্ন্যাসীদের সুরক্ষার কথা হবে প্রবেশ সীমিত করা হয়েছে। গত বছর করোনার কারণে রথ রাস্তায় বের হয় নি। পাশাপাশি রাজবাড়ীর যে পিতলের রথ রয়েছে সেটিও গত বছর গৌরাঙ্গ মঠকে দেওয়া হয়নি। যে কারণে গত বছর জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে স্যান্ট্রো গাড়িতে বসিয়ে মন্দির চত্বরটুকু ঘোরানো হয়েছিল।

রথযাত্রার ১৫ দিন আগে অর্থাৎ আজ জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা। রীতি মেনে বীরভূমের দুবরাজপুর ব্লকের হেতমপুর গৌরাঙ্গ মঠে জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা পালন করা হলো। অন্যান্য বছর প্রচুর ভক্তের ভিড় হলেও করোনার কারণে ভক্তদের সুরক্ষার কথা ভেবে তাদের আসতে নিষেধ করা হয়েছে। শুধুমাত্র ভক্তদের কথা ভেবে সোশ্যাল মিডিয়াকে কাজে লাগিয়ে লাইভ দেখানোর ব্যবস্থা করেছেন গৌরাঙ্গ মঠ কর্তৃপক্ষ, একথায় জানালেন হেতমপুর গৌরাঙ্গ মঠের শীর্ষ সেবক ত্রিদন্ডী মহারাজ।

জগন্নাথ দেবের স্নানযাত্রা হয় জৈষ্ঠ্য মাসের পূর্ণিমা তিথিতে। জগন্নাথের ভক্তদের কাছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎসব। এই দিনটিকে জগন্নাথের জন্মতিথি মনে করা হয়। স্নান যাত্রা উপলক্ষে জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রাকে মূল মন্দির থেকে বের করে স্নান বেদীতে আনা হয়। সেখানেই তাদের প্রথাগতভাবে স্নান করানো হয় এবং ভক্তদের দর্শনের জন্য সুন্দর বেশভূষায় সজ্জিত করা হয়। কথিত আছে, এদিন যদি জগন্নাথকে দর্শন করতে যান তবে সকলের পাপ থেকে মুক্ত হতে পারবেন।

প্রথাগত বিশ্বাস অনুসারে, স্নানযাত্রা পর জগন্নাথ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এই সময় তাকে রাজবৈদ্যর চিকিৎসাধীনে গোপনে একটি সংরক্ষিত কক্ষে রাখা হয়। জগন্নাথের এই অসুস্থতার পর্যায়টি অনসর নামে পরিচিত। এই সময়ে ভক্তরা দেবতার দর্শন পান না। পাশাপাশি এও কথিত আছে, রাজবৈদ্যের আয়ুবৈদিক পাচন খেয়ে এক পক্ষকালের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তারপর ভক্তরা আবার তাকে দর্শন করতে পারেন।